কাশীর থেকে মাত্র একটা শিবলিঙ্গ কম এই ‘দ্বিতীয় কাশী’র!

৯৯,৯৯৯টি শিবলিঙ্গ! ভাবছেন কাশী ছাড়া আর কোথায় এত শিবলিঙ্গ আছে! কিন্তু, ইতিহাস বড় অদ্ভুত জিনিস। আরও অদ্ভুত জিনিস হল আমরা, মানে মানুষ। ভারতের মধ্যে এই দ্বিতীয় কাশী রয়েছে শ্রী সূর্য পাহাড়ে। পুরাতত্ত্বগতভাবে অত্যন্ত সমৃদ্ধ হলেও, অধিকাংশ মানুষই ঠিকঠাক মনে করতে পারবেন না এই জায়গাটিকে। ইতিহাস ও ধর্মের আরও একটা অংশ হয়ে পড়ে আছে এটি।

আসামের গোয়ালপাড়া শহর থেকে ১২ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এই সূর্য পাহাড়। ঢোকার মুখেই ভারতীয় পুরতত্ত্ব বিভাগের বড় নীল রঙের নোটিস বোর্ডটি চোখে পড়বে। তারপর একটা বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে, শুধু পাথর আর পাথর। আর এখানেই রয়েছে সেই অমুল্য সম্পদ। ১৯৯৩ সালে আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধানে এখানে খননকার্য শুরু হয়। পুরো অঞ্চলটার মধ্যভাগে আছে একটি পাহাড়, যেটা সূর্য পাহাড় নামে পরিচিত। তাকে ঘিরে আরও বিভিন্ন ছোট বড় পাথর কেটে এককালে তৈরি করা হয়েছিল বিভিন্ন মূর্তি, মন্দির। শুধু মূর্তি নয়, পাওয়া গেছে বেশ কিছু ছোট ছোট ঘর। একসময় কিছু লোকও এখানে বসবাস করত, এবং মানুষজনের ভালই যাতায়াত ছিল, সেটা আন্দাজ করা যায়। সূর্য পাহাড়ের খুব নিকটেই ব্রহ্মপুত্র নদী থাকায় সেই সম্ভাবনার কথা পুরাতত্ত্ববিদরা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

মূলত ধর্মক্ষেত্রই ছিল সূর্য পাহাড়। শুধু সূর্য নয়, পাওয়া গেছে বেশ কিছু পাথরে কোদা মূর্তির হদিশ। যার মধ্যে অবশ্যই আলোচনায় আসবে শিবলিঙ্গের কথা। বলা হয়, ৯৯,৯৯৯টি শিবলিঙ্গ নাকি তৈরি করা হয়েছিল এখানে। যা সংখ্যায় কাশীর থেকে মাত্র একটি কম। এ যাবৎ খননকার্যে এত সংখ্যক শিবলিঙ্গ না পাওয়া গেলেও, ছোট বড় প্রচুর পাওয়া যায়। আরও পাওয়ার নাকি সম্ভাবনা আছে। তবে শুধু হিন্দু ধর্ম নয়, সূর্য পাহাড়ে সহাবস্থান আছে জৈন এবং বৌদ্ধদেরও। বিভিন্ন বৌদ্ধ স্তূপের হদিশ পাওয়া গেছে এখানে। প্রথম জৈন তীর্থঙ্কর ঋষভনাথের পদচিহ্নও নাকি এই সূর্য পপাহাড়েই পাওয়া গিয়েছিল। অর্থাৎ, সর্বধর্মসমন্বয়ের একটা আদর্শ ক্ষেত্র ছিল এই সূর্য পাহাড়। অবশ্য আজও কোনও জাতি-ধর্মগত বিভেদ মানে না এই পুরাকেন্দ্র। সবাই এখানে আসতে পারেন। সবাই ঘুরে দেখতে পারেন। সবাইকে আপন করার জন্যই অপেক্ষায় আছে সূর্য পাহাড়।