হিন্দুদের পারিবারিক সম্পত্তির সমান অংশীদার মেয়েরাও, যুগান্তকারী রায় সুপ্রিম কোর্টের

দেশের প্রতিটা মানুষের মধ্যে সমান অধিকার নিশ্চিত করতে আবারও এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। পৈতৃক সম্পত্তিতে মেয়েদের সমান অধিকারের কথা আগেই জানানো হয়েছিল। এবার সেই পথেই পারিবারিক সম্পত্তিতেও বৈষম্য দূর করার নির্দেশ দিল আদালত। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের দেওয়ানি বিভাগের মামলায় বলা হয়, সংশোধিত হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী প্রতিটি হিন্দু পরিবারের সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার ছেলেদের সমান।

মামলার রায় দিতে গিয়ে বর্তমান সামাজিক অবস্থার দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে আদালত। আদালতের বক্তব্য অনুযায়ী আজকাল প্রায়ই দেখা যায় ছেলেদের বিয়ের পর সংসারে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং বাবা-মা অনেক সময়েই অপ্রীতিকর অবস্থার মধ্যে পড়ে। কিন্তু মেয়েরা সবসময় তাঁদের হাত ধরে থাকেন। পাশাপাশি আমাদের দেশের দীর্ঘ ইতিহাসে বরাবরই উপেক্ষিত মেয়েরা। অনেক ধর্মশাস্ত্রে এমনও বলা হয়েছে, মেয়েরাও আসলে পুরুষের সম্পত্তি। তাকে প্রথমে পিতার, তারপর স্বামীর এবং শেষ জীবনে পুত্রের সম্পত্তি হয়ে থাকতে হবে। এরপর সমাজে আধুনিকতার ধারণা গড়ে উঠলেও মেয়েদের ভাগ্য সেভাবে পরিবর্তিত হয়নি। এখনও মনে করা হয় তাকে অন্য কোনো পুরুষের উপার্জনের উপরেই নির্ভর করে থাকতে হবে। অন্যথায় জীবিকার সমস্ত বন্দোবস্ত করতে হবে নিজেকেই। পারিবারিক সম্পত্তি থেকে সাহায্য পাওয়ার নিয়ম সমাজে এখনও স্বীকৃত নয়।

এর আগেও আদালত পারিবারিক সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকারের কথা স্বীকার করে নিয়েছিল। কিন্তু ২০০৫ সালের আগে আদালতের কোনো লিখিত নথিতে এই প্রস্তাব পাওয়া যায় না। তাই ২০১৫ সালের একটি রায়ে সুপ্রিম কোর্টের অন্য একটি বেঞ্চ জানিয়েছিল, ২০০৫ সালের পূর্বে পিতার মৃত্যু হলে মেয়েরা পৈতৃক বা পারিবারিক সম্পত্তিতে অধিকার পাবেন না, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে ৫ বছর মামলা চলার পর বিচারপতি অরুণ মিশ্রের বেঞ্চ জানাল, ১৯৬৫ সালের আইনের মেয়েদের পুরুষের সমান অধিকারী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি জন্মসূত্রে পরিবারের সম্পত্তির উপরেও তাদের অধিকার সমান। অতএব এখানে পিতার মৃত্যুর বছর ১৯৬৫ হওয়াই যুক্তিসঙ্গত।

অরুণ মিশ্রের বেঞ্চ যে রায় দিল তা যে এক কথায় ঐতিহাসিক, সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু পাশাপাশি প্রশ্ন ওঠে এই আইন কেন শুধুমাত্র হিন্দু দেওয়ানি বিধির জন্য বলবত হবে? দেশের সমস্ত মানুষের অধিকার সুনিশ্চিত করতে গীলে তো ধর্মীয় বেড়াও টপকাতে হবে। ব্রিটিশ ভারতের বাস্তব প্রেক্ষাপট মাথায় রেখেই হিন্দু ও মুসলমান দেওয়ানি বিধি আলাদা করা হয়েছিল। কিন্তু এই ২০০ বছরের বেশি সময়েও কি অবস্থার কোনো বদল ঘটেনি? প্রগতিশীল মানসিকতাকে কি বারবার ধর্মের যূপকাষ্ঠেই বলি হতে হবে?

আরও পড়ুন
সংবিধানের ‘পরিপন্থী’, তাই সংবিধান থেকে ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বাদ দিতে আবেদন সুপ্রিম কোর্টে!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
দরিদ্রদের জন্য বেসরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে করোনা-পরীক্ষা, নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের