গোয়া মানেই শুধু পর্যটক-আকর্ষক সমুদ্র সৈকত নয়। উপকূলবর্তী এই অঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদেরও এক কেন্দ্রভূমি। অথচ সেই সম্পদের উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ হয় না বলে অভিযোগ উঠেছে একাধিক সময়ে। সেই বিতর্কে এবার আলাদা তাৎপর্য যোগ করল সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়। দীর্ঘদিন ধরে গোয়ার একাধিক লৌহখনির লিজ নিয়ে মামলা চলছিল আদালতে। আর সেই মামলায় রাজ্য সরকার এবং বেদান্ত লিমিটেডের যাবতীয় আর্জিকে খারিজ করে পরিবেশ সুরক্ষার উপরেই জোর দিল বিচারপতি ডঃ ধনঞ্জয় চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি এমআর শাহের বেঞ্চ।
বহু আগে গোয়ার ৮৮টি লৌহখনির মালিকানা দেওয়া হয়েছিল বেদান্ত লিমিটেডকে। কিন্তু এরপর দেশের পরিবেশ আইনে বহু বদল এসেছে। সেইসমস্ত আইনের ভিত্তিতে আর নতুন করে মালিকানা পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তারপরেও ২০১৪ সালে পুরনো চুক্তিই নবীকরণের উদ্যোগ নেয় রাজ্য সরকার। আর সেই সময়েই এই ব্যবস্থার প্রতিবাদ করেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। ২০১৫ সালে গ্রামবাসীদের সমর্থনে এগিয়ে আসে গোয়া ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও। আদালতে মামলা শুরু হয়। তিন বছর পর ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, পুরনো চুক্তি নবীকরণ আইনত সম্ভব নয়। নতুন পরিবেশ আইনের কথা মাথায় রেখে নতুন করেই চুক্তি তৈরি করতে হবে।
২০১৯ সালে রাজ্য সরকার এবং বেদান্ত লিমিটেডের পক্ষ থেকে মোট ৮ দফায় রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হয় সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু সেই আর্জিও নাকচ হয়ে গেল সাম্প্রতিক রায়ে। এমনকি পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানোর আইনি পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। তাঁর রায়ে স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, আদালতের কোনো রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাতে গেলে তা রায়দানের ৩০ দিনের মধ্যেই জানাতে হবে। অথচ এক্ষেত্রে সেই আর্জি জানানো হয়েছে প্রায় ৬ মাস পরে। এবং তাও ঠিক পূর্ববর্তী বিচারপতিদের অবসরগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই। এই ব্যবহার কার্যত আদালত অবমাননার সামিল বলেই মনে করছেন তিনি।
তবে শুধুই আদালত অবমাননার প্রশ্নে নয়, আর্জির পিছনে কোনো আইনি সমর্থন নেই বলেও স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন বিচারপতি। আর তাই আগের রায়ই বহাল থাকছে। অবশ্য পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, এই বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনগুলি পরিবর্তনের জন্যও একাধিকবার চেষ্টা করেছে কেন্দ্র সরকার। কিন্তু সাংবিধানিক কারণেই সেই প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় দেশের তথা সারা বিশ্বের পরিবেশ আন্দোলনের নিরিখে নিঃসন্দেহে এক মাইলস্টোন হয়ে থেকে যাবে। কিন্তু পাশাপাশি প্রশ্ন থেকেই যায়, একাধিক নির্বাচিত সরকারের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের হাত থেকে কতদিন দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করা সম্ভব হবে?
আরও পড়ুন
হিরের খনির জন্য ২ লক্ষ বৃক্ষচ্ছেদনের পরিকল্পনা, দেশজুড়ে সরব পরিবেশকর্মীরা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
পরিত্যক্ত খনিতে ‘কোয়ারেন্টাইন’ ভারত-ফেরতা অস্ট্রেলিয়দের!