বিগত কয়েকদিন থেকেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার উর্ধ্বমুখী ভারতে। এর মধ্যেই এবার নতুন এক ঘাতকের সন্ধান দিলেন ভারতীয় গবেষকরা। যার মধ্যেও রয়েছে মহামারীর সৃষ্টি করার মতো ক্ষমতা। না, এবার কোনো ভাইরাস নয়। ‘সি অরিস’ নামের এই ঘাতক পারতপক্ষে একটি ছত্রাক। পরিচিত সুপারবাগ নামেও। তবে আশঙ্কার মূল কারণ হল ‘সি অরিস’-এর মধ্যে রয়েছে বাজার চলতি সমস্ত অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ওষুধ প্রতিরোধের ক্ষমতা।
সম্প্রতি আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সমুদ্র এবং বিভিন্ন লবণাক্ত জলাভূমি অঞ্চল থেকে ৪৮টি নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। যা পরীক্ষা করেই চমকে ওঠেন তাঁরা। প্রতিটির মধ্যেই অস্তিত্ব রয়েছে ‘সি অরিস’-এর। সমুদ্র সৈকত তো বটেই প্রবাল প্রাচীর এমনকি পাথুরে অঞ্চলেও বিস্তারলাভ করেছে এই অণুজীব। এর আগে জাপান এবং যুক্তরাজ্যের এই ছত্রাকের প্রকোপ দেখা গেলেও ভারতে এই প্রথম পাওয়া গেল সুপারবাগ।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের অভিমত, সুপারবাগের সংক্রমণে বছরে প্রায় এক কোটির বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে আগামী দিনে। কিন্তু কীভাবে সংক্রমিত হয় এই ছত্রাক? মূলত মানুষের ত্বকের সংস্পর্শে আসার পর সেখানেই বসবাস করে এই অণুজীব। পরবর্তীতে ক্ষতস্থানের মধ্যে দিয়ে দেহে প্রবেশ করে তারা। রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে দেহের অভ্যন্তরে। প্রাথমিকভাবে জ্বর এবং সর্দিকাশির লক্ষণ দেখা যায় এই সংক্রমণে। ধীরে ধীরে শ্বাসনালি, খাদ্যনালি এবং একাধিক দেহাংশে প্রভাব বিস্তার করে ‘সি অরিস’। যা মানুষকে ঠেলে দেয় মৃত্যুর দিকে।
আন্দামানের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল জনাকীর্ণ হওয়ার কারণে আরও চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বিজ্ঞানীদের কপালে। তবে আশার আলো একটাই যে এই ছত্রাক মানুষ কিংবা অন্যান্য প্রাণীদের দেহের তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না। তা সত্ত্বেও লন্ডনে কিছু মানুষের পায়ের আলসারে এই ছত্রাকের অস্তিত্ব মিলেছে। এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২০০ জন মানুষ। তার মধ্যে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সফল হয়েছে ‘সি অরিস’-এর চিকিৎসা। কিন্তু সামগ্রিক পরিস্থিতি উদ্বেগ কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে গবেষকদের কাছে।
আরও পড়ুন
অন্তঃসত্ত্বা মায়ের টিকাতেই অনাক্রম্যতা সদ্যোজাত শিশুর
অধিকাংশরই অভিমত, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে অভিযোজিত হচ্ছে এই অণুজীব। ফলে বেশি উষ্ণতার সঙ্গেও মানিয়ে নিচ্ছে নিজেদের। আর সেই কারণেই সারা পৃথিবীতেই ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে সুপারবাগটি। একইভাবে এই সংক্রমণ বড়ো আকার ধারণ করলে যে তা প্রতিরোধ প্রায় অসম্ভব, তাও একপ্রকার নিশ্চিত। নতুন এই আগন্তুককে নিয়ে তাই সারা বিশ্বে শুরু হয়েছে জরুরি ভিত্তিতে গবেষণা।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
করোনা আটকাতে পারে না ভিটামিন ডি, জানাচ্ছে সাম্প্রতিক গবেষণা