রূপ বদলে করোনা ভাইরাস শক্তি বাড়িয়েছে আগেই। নতুন ভাইরাল স্ট্রেনের সংক্রমণে বিপর্যস্ত ভারত। আর তার মধ্যেই বিশাখাপত্তনমে সন্ধান পাওয়া গেল আরও একটি নতুন স্ট্রেনের। পূর্ববর্তী ভাইরাল স্ট্রেনগুলির চেয়ে এর ক্ষমতা অন্তত ১৫ গুণ বেশি বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। ইতিমধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশের বেশ কিছু রোগীর শরীরে নতুন এই প্রজাতিটির জিন পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। আর সবচেয়ে চিন্তার বিষয়, এতদিন সংক্রমণের পর রোগীর স্বাস্থ্যের চরম অবনতি হতে অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগত। নতুন এই স্ট্রেন মাত্র ৩-৪ দিনের মধ্যেই রোগীর অবস্থা শোচনীয় করে তুলছে। ফলে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সময়টুকুও পাওয়া যাচ্ছে না।
এপ্রিলের শেষে বিশাখাপত্তনমের বেশ কিছু রোগীর ক্ষেত্রে দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে দেখেই জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষা শুরু করেন চিকিৎসকরা। সেন্টার ফল সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজির পরীক্ষাগারে ধরা পড়ে নতুন স্ট্রেইন এন৪৪৪০কে। পূর্ববর্তী বি-১ স্ট্রেইনের ক্ষেত্রেও শ্বাসযন্ত্র ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অংশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে দেখা গিয়েছিল। তবে তার জন্য অন্তত ১ সপ্তাহ সময় লেগেছে। নতুন এই স্ট্রেইন ৩-৪ দিনের মধ্যেই শরীরের নানা অংশকে সংক্রমিত করছে। এমনকি অত্যন্ত স্বাস্থ্য সচেতন এবং বেশ ভালো অনাক্রম্যতাযুক্ত তরুণ-তরুণীদের শরীরেও এই নতুন স্ট্রেইন খুব তাড়াতাড়ি প্রভাব বিস্তার করছে। এন৪৪০কে স্ট্রেইনটির চরিত্র বুঝতে এখনও অনেক পরীক্ষা করতে হবে বলেই জানাচ্ছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মেডিক্যাল অফিসাররা।
করোনা ভাইরাসের প্রাথমিক স্ট্রেইনগুলি কেবলমাত্র ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ত। তবে অভিযোজনের ফলে তা এখন বায়ুবাহিত হয়ে উঠেছে। আর এই নতুন স্ট্রেইনের ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা আরও অনেকটাই বেশি। কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন মানুষের শরীর থেকে ৫-৬ জন মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই স্ট্রেইন। ইতিমধ্যে রাজ্যের কতজন মানুষ এই নতুন স্ট্রেইনের শিকার, তার হিসাব পাওয়া মুশকিল। এমনকি অন্যান্য রাজ্যেও এই স্ট্রেইন পাওয়া যেতে পারে বলেই মনে করছেন সিসিএমবি-র গবেষকরা। অন্যদিকে অন্ধ্রের চিকিৎসকদের দাবি, কোনো ধরণের জানা চিকিৎসা পদ্ধতিই প্রায় এই নতুন স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে কার্যকর নয়। বি-১ স্ট্রেইনের সংক্রমণের ক্ষমতা বেশি হলেও চিকিৎসকরা আশ্বস্ত হয়েছিলেন, এর মৃত্যুহার কম। কিন্তু এন৪৪০কে স্ট্রেইনের ক্ষেত্রে মৃত্যুহারও আগের চেয়ে বেশি। পুরোটাই যেন চিকিৎসকদের হাতের বাইরে। এমনকি এর বিরুদ্ধে কোভ্যাক্সিন বা কোভিশিল্ডের মতো প্রতিষেধক কতটা কার্যকর, তাও পরীক্ষা করে দেখতে হবে বলে জানাচ্ছে তাঁরা। সব মিলিয়ে করোনা পরিস্থিতি যে আরও অনেক বেশি জটিল হয়ে উঠছে, তা বলাই বাহুল্য।
Powered by Froala Editor