কাদামাঠে পড়ে আছে ইতিউতি খড়ের টুকরো। একটা সময় এখানে কিছু ছিল; আজ খাঁ খাঁ করছে সব। কয়েক ঘণ্টার তাণ্ডবে ফাঁকা হয়ে গেছে ভবিষ্যৎ। লক্ষ্মীর ঘটে যেটুকু ধান বাকি ছিল, তাও খেয়ে নিয়েছে দানব-সমুদ্র। কিন্তু কথায় বলে, লড়াইয়ের নাম জীবন। আজ সেই লড়াইয়ের সামনে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ গ্রাম। শুধু পুরুষ নয়, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মেয়েরাও নেমে এসেছে মাঠে। তাঁদের গলায় একটাই বাক্য- ‘আমরা পারব’।
সারা বছর এমনিই বাঘ-কুমিরের সঙ্গে লড়ে কেটে যায়। আবার কখনও নদী ভাঙে; তখন আবার জল থইথই। সাহস ছাড়া সুন্দরবনে পা দেওয়া একটু মুশকিল। আর এঁদের তো বাঘের ঘরে বাস! লড়াই এদের মজ্জাগত। কিন্তু কিছু সময় আসে যখন সব থমকে যায়। সাহস চলে গিয়ে অসহায় বসে বসে থাকতে হয় রুদ্র রূপের সামনে। আমফান তেমনই এক বিভীষিকা। এখনও আয়লার ক্ষত শোঁকায়নি মানুষগুলোর। কত বাসিন্দা এখনও দেখে চলেছেন নদীর একটি বিশেষ অংশকে, যেখানে একসময় ছিল তাঁর ছোট্ট সুখী সংসার। ঝড়ের সঙ্গে এদের নিত্য ওঠা-বসা। ফণী, বুলবুল— ঝাপটা এসেছে একের পর এক। কিন্তু আমফান যে কি করে দিয়ে চলে গেল! দাঁড়ানোর ইটটুকুও রাখল না… কিন্তু থেমে থাকলে চলবে না। থেমে থাকতে জানে না সুন্দরবন। তাই গ্রামবাসীরা নিজেরাই নেমে এসেছেন আজ।
শহরে আজ বিদ্যুৎ নেই, কিন্তু ছাদটুকু আছে অনেক জায়গায়। তখন এই মানুষরা বুক ভাঙা জল নিয়ে, কাদার ওপর উঠে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। হ্যাঁ, এখনও বেঁচে আছে সুন্দরবন। নতুন করে তৈরি করছেন নদীবাঁধ। সমস্ত রকম ভাবে, সামর্থ্য অনুযায়ী গ্রামকে সুরক্ষিত করছেন তাঁরা। বুক ফেটে যাচ্ছে কান্নায়, শূন্য ছাড়া আর কিচ্ছু নেই— তবুও ভবিষ্যতের বিপদ থেকে গ্রামকে বাঁচাচ্ছেন তাঁরা। নিজেরাই করছেন, কারোর ভরসায় থাকলে তো চলবে না। সুন্দরবনের মন্ত্র আজ একটাই— পারব। আমরা পারবই! যে করেই হোক…