আমফানের তাণ্ডবের বিভিন্ন ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে। কোথাও গাছ উপড়ে পড়েছে, কোথাও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে সমস্ত ঘরবাড়ি। সেইসঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে দুটি বিশেষ ম্যাপের ছবিও। যেখানে প্রযুক্তির সাহায্যে ধরা হয়েছে আমফানকে। প্রথম ছবিতে দেখা যাচ্ছে আমফান সুন্দরবনের দিকে প্রবেশ করছে। আর দ্বিতীয় ছবিটি দেখে অনেকেই হতবাক। আমফানের সাইক্লোন-আই কলকাতার ওপর রয়েছে বটে; কিন্তু কেমন অদ্ভুত লাগছে যেন ব্যাপারটা। খেয়াল করতেই দেখা গেল, আমফান এখানে রীতিমতো দু’ভাগ হয়ে গেছে। তারই একটা অংশ কলকাতার ওপর এসেছে। আর বাকিটা রয়েছে ঠিক সুন্দরবনে। সেখানেই এই বিভাজন প্রক্রিয়া ঘটেছে!
খানিক অদ্ভুত লাগছে না! এই আশ্চর্য ঘটনার জন্যই আরও বড়ো বিপদের হাত থেকে বেঁচে গেল শহর। একে ঠিক আশ্চর্যও বলা যায় না; বরং প্রকৃতির নিজস্ব ঢালই বাঁচিয়ে দিল কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের বাকি অংশকে। বাঁচিয়েছে বাংলাদেশকেও। সৌজন্যে সেই সুন্দরবন। বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো ম্যানগ্রোভ না থাকলে তাণ্ডব কোন পর্যায়ে যেত, ভাবতেও শিউরে উঠতে হয়!
এর আগেও ফণী, বুলবুলের কথা চিন্তা করুন। তখনও এই সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভই ঝড়ের প্রকোপ কমিয়ে দিয়েছিল। একপ্রকার পাঁচিল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। বিজ্ঞানী ও প্রকৃতিবিদরা বারংবার এই কথাটিই বলে আসছিলেন। এবার আমফানের ক্ষেত্রেও অন্যথা হল না। শতাব্দীর প্রথম সুপার সাইক্লোনকে দুর্বল করে দেওয়ার কাজে অনেকটাই সাহায্য করেছে এই বাদাবন। তাও কলকাতা ও অন্যান্য অঞ্চলে যা ক্ষতি হয়ে গেছে, তা অবর্ণনীয়। বাংলাদেশেও সামান্য সময়ের তাণ্ডবে ছত্রাকার অবস্থা। এখনও ধ্বংসের চিহ্ন চারিদিকে। সুন্দরবন না থাকলে আমফানও হঠাৎ শক্তি হারাত না শহরে ঢোকার আগে। তাহলে ধ্বংসের পরিমাণ আরও বহুগুণ বাড়ত।
ঠিক এই জায়গা থেকেই বারবার সুন্দরবন-সহ অন্যান্য বনাঞ্চলকে রক্ষা করার কথা বলছেন প্রকৃতিবিদরা। তাহলে আমরাও রক্ষা পাব। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমরা সেসব কথায় গুরুত্ব দেওয়ার সময় করে উঠতে পারি না। সুন্দরবন তো বটেই, অন্যত্রও চলে অবিরাম গাছ নিধন। ম্যানগ্রোভ না বাঁচলে এরপ যে আরও খারাপ পরিস্থিতি হবে, তা বলাই যায়।