চেন্নাইয়ের কালো, রোগা ছেলেটার মেধা নিয়ে কেউ কোনদিন প্রশ্ন করেনি। পড়াশোনায় বারবার নিজের সেরাটা দিয়েছে ও। কিন্তু আজ যে কর্পোরেট দুনিয়ার একের পর এক শিখরে পৌঁছবে সেই ছেলেটা, প্রায় শাসন করবে ইন্টারনেট দুনিয়া, সেটা কে জানত! প্রথমে আইআইটি, তারপর আমেরিকা, সেখান থেকে গুগল। সাফল্যের সিঁড়ি এমন ভাবেই উঠেছে পিচাই সুন্দররাজনের জীবনে। গোটা বিশ্ব অবশ্য তাঁকে চেনে সুন্দর পিচাই হিসেবে। গুগলের সিইও হিসেবে। সম্প্রতি আরও একটা শিখর ছুঁলেন তিনি। আমেরিকার মাল্টিন্যাশনাল সংস্থা অ্যালফাবেটেরও সিইও হলেন সুন্দর। এই অ্যালফাবেটই গুগল এবং সেই পরিবারের অন্যান্য সংস্থার মালিক।
চেন্নাইয়ের অশোক নগরের ছোট্ট দুই কামরার ঘরে স্বপ্নের শুরু হয়েছিল। সেখানকারই স্কুলে অতিবাহিত হয় সুন্দর পিচাইয়ের শৈশব। পড়াশোনায় বরাবরের চৌখস ছেলে। স্কুল পাশ করার পর সুন্দর চলে আসে এই বাংলায়। খড়গপুর আইআইটিতে মেটালারজিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। তারপর উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যান আমেরিকা।
২০০৪ সালে গুগলে যোগ দেন সুন্দর পিচাই, একজন ম্যানেজমেন্ট এক্সিকিউটিভ হিসেবে। গুগলে কাজ করাকেই অনেকে সেরা পাওয়া বলে মনে করেন। সুন্দরও বোধহয় সেটাই মনে করেছিলেন। কিন্তু, একটা জায়গাতেই থেমে থাকেননি তিনি। সেই যে তাঁর গুগলের যাত্রা শুরু হল, তা চলছে আজও। এক্সিকিউটিভ থেকে প্রোডাক্ট চিফ, তারপর ২০১৫ সালে গুগলের সিইও— নিজের কাজের দক্ষতায় দিনের পর দিন তাঁর গ্রাফও উঠিয়ে চলেছেন সুন্দর পিচাই। পেয়েছেন অনেক সম্মান, অনেক ব্যর্থতারও মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। কিন্তু, থেমে থাকেননি চেন্নাইয়ের রোগা, কালো চশমা পরা ছেলেটা।
এরই সাম্প্রতিক পরিণতি পেল অ্যালফাবেট সংস্থায়। সংস্থার দুই সিইও এবং গুগলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ এবং সের্জেই ব্রিন নিজেদের জায়গা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সেই জায়গাতেই দায়িত্ব নিয়েছেন সুন্দর পিচাই। গুগল-সহ এই পরিবারের সমস্ত সংস্থার অভিভাবক কোম্পানি বলা হয় অ্যালফাবেটকে। এক ধাপে অনেকটাই উঁচু শিখরে পৌঁছেছেন তিনি। তবে গুগলের দায়িত্ব থেকে সরছেন না। সেখানকার সিইও পদে এখনও রয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে, একটা মধ্যবিত্ত ছেলের শিখর ছোঁয়ার গল্প এটি। সুন্দর পিচাইয়ের জীবনে আরও সাফল্য আসুক, সেইসঙ্গে উজ্জ্বল হোক ভারতের মুখ— সেটাই এখন চাইবে গোটা দেশবাসী।