গত নভেম্বর মাসেই পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরের জন্য হারিয়ে গিয়েছিল সুমাত্রার গণ্ডার। শেষ সুমাত্রান গণ্ডার ইমানের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই বিলুপ্ত হয়েছিল এই প্রজাতি। তবে পৃথিবীর বুকে এবার এই হারিয়ে যাওয়া প্রজাতিকেই ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিল বিজ্ঞানীরা। মালয়েশিয়ার একদল বিজ্ঞানী ইমান এবং অন্যান্য মৃত সুমাত্রার গণ্ডারের কোষ সংগ্রহ করেই ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন এই প্রজাতিকে।
ইন্টারনেশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ায় ডঃ মুহাম্মদ লোকমানের নেতৃত্বে চলছে এই গবেষণা। তাঁদের লক্ষ্য ক্লোনিং টেকনোলজির সাহায্যে আবার এই প্রজাতির সৃষ্টি করা। বোরা বা বোর্নিও রাইনো অ্যালায়েন্স শেষ তিনটি সুমাত্রান গণ্ডারের মৃত্যুর আগে তাদের থেকে সংগ্রহ করেছিল দেহ কোষ। সেই সংগৃহীত কোষই আশা জাগাচ্ছে ফিরে আসতে পারে হারিয়ে যাওয়া এই প্রাণী।
সংগৃহীত হয়েছিল গণ্ডারের হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি এবং মস্তিষ্কের কোষ। যা স্টেমসেল বলে পরিচিত বিজ্ঞানের পরিভাষায়। ক্লোনিং বা ইন-ভার্টোফার্টিলাইজেশনে এই কোষগুলিরই ভূমিকা অপরিসীম। বিজ্ঞানীদের সামনে এখনও দুটো রাস্তা রয়েছে এই হারিয়ে যাওয়া জীবের পুনরুদ্ধারের। এমনটাই জানাচ্ছেন ডঃ লোকমান।
প্রথমটি হল সংগৃহীত স্টেমসেলগুলিকে কোনো গণ্ডারের ডিম্বাণু বা শুক্রাণুতে প্রতিস্থাপন করা। তারপর সেই ভ্রুণ অন্যকোনো প্রজাতির গণ্ডারের শরীরে প্রতিস্থাপন করা। তাতে জন্ম নেওয়া গণ্ডার সুমাত্রান প্রজাতির হতে পারে। তবে ডিম্বাণুর ধাত্রীর প্রজাতি জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায় তাতে।
আরও পড়ুন
দক্ষিণ আফ্রিকায় গণ্ডার শিকার কমেছে ৫৩ শতাংশ, সুরক্ষিত হাতিরাও
অন্য পদ্ধতিটি হল কোনো ধাত্রী গণ্ডারের ডিম্বাণুর থেকে কেন্দ্রক বার করে তার জায়গায় সুমাত্রান গণ্ডারের সোমাটিক কোষের প্রতিস্থাপন। ডলি পৃথিবীর প্রথম ভেড়ার ক্লোন তৈরির সময়ও ব্যবহৃত হয়েছিল এই পদ্ধতি।
আরও পড়ুন
আশেপাশে চোরাশিকারি এলেই গণ্ডারদের সাবধান করে ছোট্ট এক পাখি!
তবে বিজ্ঞানীরা দুটি পদ্ধতিই চেষ্টা করে দেখছেন। বিভিন্ন পদ্ধতিতেই সংমিশ্রণ করে স্ব-প্রতিলিপি তৈরি করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ভ্রুণ তৈরির কাজ এখনও প্রাথমিক গবেষণার স্তরে রয়েছে। পৃথক করা হচ্ছে স্টেমসেল, তৈরি হচ্ছে জিনোমের ডেটাবেস এবং খোঁজ চলছে উপযুক্ত সারোগেট মায়ের।
আরও পড়ুন
৩০ বছর ধরে একশৃঙ্গ গণ্ডার সংরক্ষণ, আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেলেন নিরাপত্তারক্ষী
তবে এখনও অবধি বিজ্ঞানীদের অনুরূপ গবেষণাগুলি আশা যোগাচ্ছে বিজ্ঞানীদের। কেনিয়ার শেষ দুটি মহিলা সাদা গণ্ডার ফাতু আর নাজিনের দেহে মৃত পুরুষ গণ্ডারের সংগৃহীত স্টেমসেল প্রতিস্থাপন করে ভ্রুণ তৈরিতে সক্ষম হয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। এবার দেখার বিষয় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া সুমাত্রার গণ্ডারের ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানীরা সফল হন কিনা...
Powered by Froala Editor