জোট-ঘোঁট-ভোট (৭) : যে বছর ইতিহাসটাই বদলে গেল

সন্ধ্যা নেমেছে, আরতির ঘণ্টাধ্বনি কানে আসছে। সারাটা দিন গ্রামে গ্রামে ঘোরার পরে বেনারসে এসে হোটেলে সবে চেক-ইন করেছি, ঘামে ভেজা জামা-কাপড় তখনও গায়ে। ঝনঝন করে বেজে উঠল হোটেলের ঘরের টেলিফোন। 

কলকাত্তা সে কল হ্যায় সাহাব। থোড়া হোল্ড কিজিয়েগা। হোটেলের অপারেটার।

কোথায় কোন হোটেলে থাকছি, তার টেলিফোন নম্বর কলকাতার অফিসে আগাম দেওয়া থাকত, কোনো কারণে যদি অফিসের যোগাযোগ করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেদিন আমি কোনো কপি পাঠাইনি, তাই একটু অবাকই লাগছিল। ওপারের ঝাঁঝালো ভর্ৎসনা শুনে বিস্ময়ের ঘোর তো কাটলই, মটকাটাও উনুনের ওপরে থাকা তাওয়ার মতো নিমেষে গরম হয়ে গেল।

ফোন করেছেন অভীক সরকার। আমি ‘হ্যালো’ বলা শেষ করার আগেই ঝাড় শুরু হয়ে গেল। ঠান্ডা মাথার মানুষ, এমনিতে নিচু লয়ে কথা বলেন, ফোনের চিৎকার শুনে মনে হল এই ভদ্রলোককে আমি চিনিইনা। এর আগে কখনও তাঁকে এতটা রাগতে দেখিইনি।

আরও পড়ুন
জোট-ঘোঁট-ভোট (৪)

আমেঠি নিয়ে কী সব উল্টোপাল্টা লিখেছ? দেয়ার মাস্ট বি এ লিমিট টু এভরিথিং। আই অ্যাম সিম্পলি ডিজগাস্টেড উইথ ইওর কভারেজ। 

এই ধরণের শক্তিশেলকে খবরের কাগজের ভাষায় বলে ’স্টিংকার’। রিপোর্টারি করব অথচ সময়ে-সময়ে গালমন্দ খাব না, এটা হতে পারে না। অনেক অ্যাসাইনমেন্টে গিয়ে আমাকেও এমন ‘স্টিংকার’ হজম করতে হয়েছে, ক্ষণিকের জন্য মন-খারাপ হয়েছে তবু চাকরির আবশ্যিক শর্ত ধরে নিয়ে মনকে প্রবোধ দিয়েছি। কিন্তু সেদিন সম্পাদকের ভর্ৎসনার ভাষা ও ভঙ্গি আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারলাম না, ভয়ংকর অপমানিত বোধ করলাম। তারপর দু’জনের মধ্যে যে উত্তপ্ত বাক্য-বিনিময় হল সংক্ষেপে সেটি এই রকম।

আরও পড়ুন
জোট-ঘোঁট-ভোট (৩)

কেন, আমেঠির কভারেজে ভুলটা কোথায়?

ভুল নয় বলো অপরাধ। আমেঠি প্রধানমন্ত্রীর কনস্টিটুয়েন্সি, তাঁর কথা নমো নমো করে উল্লেখ করে তুমি কোথাকার কোন কাঁসিরামকে নিয়ে এত কথা লিখেছ? মাত্রাজ্ঞান বলে তো একটা ব্যাপার আছে।

আরও পড়ুন
জোট-ঘোঁট-ভোট (২)

দেখুন রাজীব গান্ধী আমেঠি থেকে জিতবেন এটা আমার কাছে কোনো স্টোরি বলে মনে হয়নি। ইট ইজ সো অবভিয়াস অ্যান্ড ওয়েল-নোন। বরং নিজের খাস তালুকে রাজীবও কিঞ্চিৎ নার্ভাস হয়ে পড়েছেন সেটাই আমার তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। কংগ্রেসি গুন্ডারা যে কাঁসিরামের মতো একজন অকিঞ্চিৎকর প্রার্থীর সভাও গায়ের জোরে ভেঙে দিচ্ছে সেটাই রাজীবের নার্ভাসনেসের সবচেয়ে বড় প্রমাণ। গোটা ঘটনাটা আমার চোখের সামনে ঘটেছে, আমি কপিটা সেই লাইনেই লিখেছি।

বানকাম। ডোন্ট আর্গু উইথ মি। ইওর কভারেজ ইজ অ’ফুল।

আরও পড়ুন
জোট-ঘোঁট-ভোট (১)

দেখুন আমি তো নিজের ইচ্ছায় এখানে ভোট কভার করতে আসিনি, আপনি পাঠিয়েছেন বলেই এসেছি। এখন আমার কভারেজ যদি আপনার এত অপছন্দ হয়, আমাকে বলে দিন, আমি দিল্লি ফিরে যাচ্ছি।

ওপার থেকে জবাব এল না, একটা আওয়াজ পেলাম মাত্র। ঝপাং করে রিসিভার রেখে দেওয়ার।

সেই মুহূর্তে মনে হয়েছিল আর চাকরিই করব না, কপালে যা থাকে থাক। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মন-মেজাজ শান্ত হল, আমি যথারীতি আবার ভোটের কভারেজে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম, উত্তরপ্রদেশের পরে বিহার ঘুরে পৌঁছলাম কলকাতায়। আমি আমার মতো লিখতে থাকলাম, আনন্দবাজারের প্রথম পাতায় যথারীতি সেগুলো ছাপা হতে থাকল, বেনারসের পরে কলকাতা থেকে আমার কাছে কোনো ফোনও এল না।

কলকাতায় এসে রহস্যের কিনারা হল, বুঝতে পারলাম এডিটর সাহাবকা ইতনা গুসসা কিঁউ হুয়া থা।

আইডিয়াটি ছিল অভীকবাবুরই। ১৯৮৯-এর লোকসভা ভোটের আগে তিনি পরামর্শ দিলেন, ‘দিল্লি থেকে একটা প্যাসেঞ্জার ট্রেনের সেকেন্ড ক্লাসে টিকিট কেটে উঠে পড়। যখন যেখানে নামবে সেখানে গাড়ি ভাড়া করে সংলগ্ন এলাকায় ঘুরবে। শুধু ভোটের কচকচি নয়, আমি চাই হিন্দি বলয়ের ফ্লেভারটা উঠে আসুক তোমার রিপোর্টে। আমার ধারণা আইডিয়াটা হিট করে যাবে।’

আমার কভারেজের নাম দেওয়া হল ‘নির্বাচনী রোজ নামচা’। তারপর আনন্দবাজারে থাকাকালীন যত ভোট কভার করেছি ওই একই নামে করেছি। বড্ড আনন্দ পেয়েছি এই রোজ নামচা লিখে।

সম্পাদকের প্রস্তাবটি আমি লুফে নিলাম যদিও প্যাসেঞ্জার ট্রেনের সেকেন্ড ক্লাস কামরার কথা ভাবতে গিয়ে খানিক হতোদ্যমও লাগছিল। তখন আমার বয়স বত্রিশ, এইটুকু কৃচ্ছ্রসাধন গায়ে মাখার কথা নয়, মাখিওনি। দুগ্গা দুগ্গা বলে কর্তার আদেশ অক্ষরে অক্ষের পালন করে সত্যিই চড়ে বসলাম প্যাসেঞ্জার ট্রেনে। উঠে টের পেলাম আমার হংস মধ্যে বক-যথা অবস্থা, এমনিতেই আমি হিন্দিতে অষ্টরম্ভা, তার ওপর কামরার সহযাত্রীরা যে বুলিতে কথা বলছে তা আর যাই হোক হিন্দি নয়। তাদের সঙ্গে আলাপ জমাতে আমার রীতিমতো কালঘাম ছুটে যাওয়ার অবস্থা। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম সহযাত্রীদের বেশিরভাগই পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কর্মঠ জাঠ-কৃষক এবং কট্টর কংগ্রেস বিরোধী। আমি আলিগড়ে নামব, ট্রেনটা স্টেশনে ঢোকার মুখে আমার পাশে বসা সহযাত্রীটি বাজখাঁই গলায় নিদান শোনালেন, ‘আপ লিখলো বাবুজি ইসবার ইউ পি-সে কাংগ্রেস সাফা হো জায়েগা।’

তখনকার মতো কথাটিকে আমি আমল দিইনি। জাঠেরা ঐতিহ্যগতভাবে কংগ্রেসের সমর্থক ছিল না, তাদেরই একজন তো এই রকম ভবিষ্যদ্বাণী করবেনই। গো-বলয়ের দুই প্রধান রাজ্য উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে টানা এক মাস চরকি কাটার পরে যখন পাটনা থেকে কলকাতার বিমান ধরলাম ওই দীর্ঘদেহী জাঠের কথাগুলো কানে অনুরণিত হচ্ছিল। কংগ্রেস সাফা হো জায়েগা।

আমার রিপোর্টে আগাগোড়া জমির সেই বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়েছিল। যেখানেই যাই শুনি বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং-এর নামে জয়ধ্বনি আর রাজীবের নামে কুৎসা, অলি-গলিমে শোর হ্যায় রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়। প্রায় সর্বত্র কংগ্রেসিরা নিষ্প্রভ, একেবারে ব্যাকফুটে। এক বফর্স কেলেঙ্কারিকে ব্যবহার করে একার মুরোদে গো-বলয়ের জনমত কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বনাথ প্রতাপ। এমনিতেই পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ছিল তাঁর, রাজীবের ভাবমূর্তির পাশে স্বাভাবিকভাবেই তা উজ্জ্বলতর দেখাত। জনসভার পর জনসভায় মান্ডার রাজা স্থানীয় বুলিতে আনপড়দেরও বোধগম্য ভাষায় যেভাবে বফর্সের ব্যাখ্যা দিতেন শ্রোতাদের তা দারুণভাবে আন্দোলিত করত। এমন বিরুদ্ধ প্রচারের সাইক্লোন প্রতিহত করার মতো বক্তব্য কংগ্রেসের ঝুলিতে ছিল না, সংগঠনও ভোটের আগে কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল। রিপোর্টার হিসেবে আমি দেওয়ালের লিখন পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম, আমার কভারেজে কংগ্রেসের অবশ্যম্ভাবী হারের স্পষ্ট পূর্বাভাস ছিল।

কলকাতায় এসে জানতে পারলাম সেটাই আমার বিরুদ্ধে গিয়েছে। অফিসের ভিতরে কাঠি করার লোকের অভাব ছিল না, তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজ্যের কংগ্রেসি নেতাদের সোচ্চার প্রতিবাদ। তাঁরা বারেবারে আমার সম্পাদককে বুঝিয়েছেন, আমার লেখা অন্যায় রকম পক্ষপাতদুষ্ট, রোজ নামচায় আমি যা লিখে চলেছি জমির বাস্তবতা আদৌ তা নয়। কংগ্রেসি নেতারা একথাও বলেন যে আমার কভারেজের ফলে নাকি পশ্চিমবঙ্গে তাঁদেরও অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এমনিতে এই ধরণের অভিযোগে কর্ণপাত করার মানুষ ছিলেন না অভীকবাবু, নিজের সাংবাদিকদের সম্পূর্ণ লেখার স্বাধীনতা দেওয়াই ছিল তাঁর নেতৃত্বের সবচেয়ে বড়ো দিক। চারদিক থেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া শুনতে শুনতে এবার তিনিও কীভাবে যেন প্রভাবিত হয়ে গেলেন। আমার আমেঠির রিপোর্টটি ছিল ইংরেজিতে যাকে বলে ‘লাস্ট স্ট্র অন দ্য ক্যামেলস ব্যাক’। এমনিতেই কংগ্রেসের প্রতি আনন্দবাজার কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা ছিল আর রাজীব গান্ধী ছিলেন সম্পাদকের ব্যক্তিগত বন্ধু। ফলে আমাকে তোলা হল কাঠগড়ায়।

কলকাতার অফিসে এসে লক্ষ্য করলাম সহকর্মীদের গম্ভীর মুখ, আমি যেন তাঁদের কাছে অজানা আগন্তুক। একজন অনুজ সহকর্মী চুপিচুপি বলে দিলেন, ভোটের ফলাফল অন্য রকম হলে অনেক দাঁত-নখ বেরিয়ে পড়বে, আমার লাঞ্ছনার সীমা থাকবে না, সবাই অপেক্ষা করে আছে ফলাফলের দিনটার জন্য। শুনে আমার খারাপ লেগেছিল কিন্তু নার্ভাস হইনি এতটুকুও। বরং কলকাতায় বসে কিছুই না দেখে না শুনে যাঁরা হিন্দি বলয় সম্পর্কে জ্ঞান দিচ্ছেন তাঁদের প্রতি কিঞ্চিৎ করুণাই হল। আমি নিশ্চিত ছিলাম এত বড়ো ভুল আমি কিছুতেই করতে পারি না।

যাব কি যাব না করতে করতে ফলাফলের দিন কপাল ঠুকে আমি সশরীরে হাজির হলাম ৬ নম্বর প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিটে। ই ভি এমের নামই তখন কেউ শোনেনি, ব্যালট পেপার গুনে ফল স্থির হত, গোটা প্রক্রিয়াটি ছিল বিরক্তিকর রকমের দীর্ঘসূত্রী। একটি লোকসভা ভোটের সব ব্যালট গোনা শেষ হতে অনেক সময় চব্বিশ থেকে ছত্রিশ ঘণ্টা লেগে যেত। খবরের একমাত্র সূত্র ছিল দু’টি সংবাদ সংস্থা, পি টি আই আর ইউ এন আই। তাদের টেলিপ্রিন্টার মেশিনে টকাটক টকাটক টাইপ হয়ে খবর বের হত। মানে সংবাদের জগৎ তখনও মধ্যযুগীয়, ইন্টারনেট আর ওয়েব বিপ্লবের স্বপ্নও ছিল সুদূর পরাহত।

আমি চুপটি করে পি টি আই-এর মেশিনের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম যাতে সবার আগে নজর করতে পারি ভোটের ফলের গতি-প্রকৃতি। প্রথম রাউন্ড গণনার শেষে ফল আসতে শুরু করল দুপুর বারোটা নাগাদ। উত্তরপ্রদেশ আর বিহারের প্রায় সব কয়টি আসনে কংগ্রেস পিছিয়ে। ওই প্রাথমিক প্রবণতা থেকেই স্পষ্ট হয়ে গেল ‘কংগ্রেস সাফ হো জায়েগা।’ সন্ধ্যেবেলায় কারও মনেই আর সন্দেহ রইল না কংগ্রেস দিল্লিতে ক্ষমতাচ্যুত হচ্ছে। সম্পাদকের কাছে আমার বিরুদ্ধে কান ভাঙিয়েছিল যারা তাদের চোখমুখ আষাঢ়ে আকাশের মতো কালো, যেন স্বজন বিয়োগের দুঃখে কাতর। সেদিন দ্বিতীয়বার আমি উপলব্ধি করেছিলাম পেশাদারিত্বের পাতলা আস্তরণের তলায় আনন্দবাজার পত্রিকার ডি এন এ-টা আসলে কংগ্রেসি।

প্রথম উপলব্ধিটা হয়েছিল ১৯৮৭-র হাই-ভোল্টেজ বিধানসভা ভোটে যখন রাজীব গান্ধী সর্বস্ব পণ করে পশ্চিমবঙ্গ জেতার চেষ্টায় ময়দানে নেমেছিলেন। রাজীবের সফর ছাড়াও আমাকে পাঠানো হয়েছিল পশ্চিম দিনাজপুরের ভোটরঙ্গ কভার করতে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সির নিজের জেলা, আমারও শ্বশুরালয়। জেলা ভাগ করার প্রশ্নটাই তখন বিবেচনার মধ্যে ছিল না। 

সাবেক পশ্চিম দিনাজপুরে বিধানসভার আসন ছিল বারোটি। কংগ্রেসের ভালো প্রভাব ছিল এখানে, বিরাশির বিধানসভা ভোটে সাতটি আসন তারাই পেয়েছিল। আমি ঘুরে দেখলাম নিজের গোষ্ঠীর লোকেদের টিকিট দিয়ে প্রিয়বাবু দলের সর্বনাশ করে ফেলেছেন, সর্বত্র প্রার্থী নিয়ে বিক্ষোভ, আত্মঘাতী লড়াইয়ের আবহাওয়া। তার মাত্র বছর চারেক আগে কংগ্রেসে ফিরেছেন প্রিয়বাবু, প্রথম সুযোগেই নিজের জেলায় বেছে বেছে তাঁদেরই টিকিট দিয়েছেন যাঁরা তাঁর সঙ্গে কংগ্রেস (স) করেছিলেন। ফলে এখানে ভোটের লড়াইটা যতটা না কংগ্রেস বনাম বামপন্থীদের ছিল তার চেয়েও বেশি ছিল কংগ্রেস (স) বনাম ইন্দিরা কংগ্রেসের।

কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে প্রিয়বাবুর সঙ্গেই আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠতা, প্রায় দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল, সেই কলেজ জীবন থেকেই। ১৯৮৫ সালে আমি দিল্লিতে বদলি হওয়ার পরে পেশার কাজে বরাবর তাঁর অকৃপণ সাহায্য পেয়েছি, রাজীব গান্ধীর সফরসঙ্গী হতে পেরেছি অনেকটা তাঁরই সৌজন্যে। কলকাতায় ফিরে রিপোর্ট লিখতে বসে আমি ধর্ম-সঙ্কটে পড়ে গেলাম, সত্য না সম্পর্ক, কাকে আমার গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বিবেক বলল সত্য, বুদ্ধি বলল সম্পর্ক। নাতিদীর্ঘ টানাপোড়েনের পরে জয় হল বিবেকেরই।

আমার রিপোর্টে কোনো রকম ঢাকঢাক গুড়গুড় না করে আমি লিখে দিলাম পশ্চিম দিনাজপুরে এবার কং (স) বধ হবে, বারোটি আসনের একটিও কংগ্রেস জিততে পারবে না। এই বিপর্যয়ের একমাত্র স্থপতি হবেন প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি। 

লিখে রিপোর্ট জমা দিয়ে দিলাম, দিনের পর দিন চলে যায় তা আর ছাপাই হয় না। তার আগে কোনো লেখা নিয়ে আমার এমন অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়নি। কেন এমন হচ্ছে বুঝতে না পেরে সম্পাদকের দরজায় টোকা মারলাম। খুবই আন্তরিকভাবে আমার রিপোর্টের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি পাদটীকায় বললেন, এই রিপোর্ট ছাপা হলে প্রিয়বাবুর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা, হাজার হোক ভদ্রলোক তো রাজ্যের কংগ্রেস প্রধান। আমি বিবেককে অগ্রাধিকার দিয়েছিলাম, অভীকবাবু দিলেন রাজনৈতিক পক্ষপাতকে।

তাই বলে কি সেই রিপোর্ট একেবারে কালাধারে চালান হয়ে গিয়েছিল? না। সেটি প্রকাশিত হয়েছিল ভোটের দিনটিতে। তখন উত্তরবঙ্গে কলকাতার কাগজ যেত একদিন পরে। পশ্চিম দিনাজপুরবাসী আমার সেই রিপোর্ট পড়লেন ভোটের পালা সাঙ্গ হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা পরে। 

সাপ মরল, লাঠিও ভাঙল না।

Powered by Froala Editor