মালা হতে খসে পড়া – দ্বিতীয় পর্ব

আমি তখন দিল্লিতে কর্মরত। সারাটা দিন খবরের সন্ধানে দরজায়-দরজায় টোকা মারি, সন্ধে নামার সময়, কুলায় ফেরা পাখিদের মতো অফিসে ফিরে এসে কপি লিখতে বসি, ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে রুদ্ধশ্বাস টক্কর শুরু হয়ে যায়। এই রকমই এক সন্ধ্যায় বেশ কিছুটা ক্লান্ত শরীরে অফিসে এসে শুনি মনিশঙ্কর আইয়ার পাঁচ-ছয়বার ফোন করেছিলেন, বলেছেন আমি অফিসে ফেরা মাত্র যেন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করি।

আমার শিরদাঁড়ায় ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল, প্রধানমন্ত্রীর অফিসের দাপুটে অফিসার, রাজীব গান্ধীর খাস ইয়ার-দোস্ত আমার মতো বাংলা কাগজের এক অখ্যাত রিপোর্টারকে এমন গরু খোঁজার মতো করে খুঁজছেন কেন? আমি তখন প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় কভার করি, সেই সূত্রে মনিশঙ্করের সঙ্গে পরিচয়ও ছিল। তা বলে এতবার ফোন? প্রমাদ গুনলাম, নিশ্চয়ই কোনো কপিতে এমন কিছু মারাত্মক ভুল হয়ে গিয়েছে যে মনিশঙ্কর রাগে অগ্নিশর্মা! উত্তেজিত হলে মণিশঙ্কর একেবার যেন কামানের গোলা!

আশির দশকের শেষ অর্ধেও যোগাযোগের সবেধন নীলমনি বন্ধুটি ছিল ল্যান্ড ফোন। বন্ধু স্যাম পিত্রোদার সাহায্যে রাজীব গান্ধী সবে নানাবিধ টেকনোলজি মিশন তখন সবে শুরু করিয়েছেন, মোবাইল ফোন তো স্বপ্নাতীত। 

জয় মা বলে মনিশঙ্করের অফিসে ফোন ঘোরাতেই ওপার থেক খুবই উত্তেজিত, পরিচিত গলা শুনতে পেলাম। ‘হোয়্যার দ্য ফাক ইজ অভীক! কলড হিজ ক্যালকাটা নাম্বারস এ মিলিয়ন টাইমস, কুড নট গেট থ্রু টু হিম। ক্যান ইউ টেল হিম টু কনট্যাক্ট মি ইমিডিয়েটলি? ইট ইজ ভেরি ভেরি ইম্পরটেন্ট। প্রাইম মিনিস্টার ওয়ান্টস টু স্পিক উইথ হিম।’ 

আরও পড়ুন
একটি স্বপ্নের জন্ম ও মৃত্যু – দ্বিতীয় পর্ব

দুন স্কুল, অক্সফোর্ডের প্রাক্তনী মনিশঙ্করের ইংরেজি এক্কেরে সাহেবের মতো। এমন গুছিয়ে কথা বলেন, মনে হয় লিখিত স্ক্রিপ্ট পড়ছেন, স্পষ্ট উচ্চারণ, ব্যারিটোন না হলেও বেশ গম্ভীর কন্ঠস্বর। ওঁর কথা শুনে স্বস্তি পেলাম, যাক বাবা, আমি কোনো ভুল করিনি। একইসঙ্গে মনে প্রশ্ন ঊঁকি দিল, অভীকবাবু এমন অদ্ভুত আচরণ করছেন কেন? তাও আবার রাস্তার কোনও লালু-পাঞ্জু নয়, দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে? রাজীব গান্ধীর সঙ্গে অভীক সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক, তাহলে?

কলকাতায় সম্পাদকের অফিস ঘরে একটা গোপন আন-লিস্টেড নম্বর ছিল, আমি জানতাম। অভীকবাবুই ফোনটা তুললেন। মনিশঙ্করের বার্তা ওঁকে শোনানোর সুযোগই পেলাম না। তার আগেই অভীকবাবু বলতে শুরু করলেন, ‘আমি জানি কেন আমায় খুঁজছে। তুমি মণিকে ফোন করে বলে দাও কিছুতেই আমাকে ধরা যাচ্ছে না।’

আরও পড়ুন
একটি স্বপ্নের জন্ম ও মৃত্যু – প্রথম পর্ব

কেসটা কী আমায় একটু বলবেন? মানে যদি বিশ্বাস করে বলতে পারেন তাহলেই।

সম্পাদকের সঙ্গে আমার তখন গভীর নিকট সম্পর্ক, সেই দাবিতেই মুখ থেকে আবদারটি বেরিয়ে এল।

আরও পড়ুন
ভাঙায় গড়া মানুষ

অভীকবাবু যা শোনালেন তার মর্মার্থ এই রকম। পরিবার, ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব, অনুগত অমাত্যদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বৎসরান্তের ছুটি কাটাবেন লাক্ষাদ্বীপে, প্রমোদ-তরীতে প্রমোদ ভ্রমণ। অমিতাভ-জয়া বচ্চনের সঙ্গে অভীকবাবুকেও রাখা হয়েছে আমন্ত্রিতর তালিকায়। বেশ কিছুদিন আগেই তাঁর কাছে সরকারি আমন্ত্রণপত্র পৌঁছেছে, তিনি কোনো জবাব দেননি। আজই জবাব দেওয়ার শেষ দিন বলে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছে কিন্তু তিনি ধরা দিচ্ছেন না।

বোকার মতো আমি প্রশ্ন করে বসি, ‘এ তো অতি উত্তম বিষয়, চান্স অব এ লাইফ-টাইম, আপনি আপত্তি করছেন কেন? ভারতবর্ষের মিডিয়ার আর কারো তো এমন সৌভাগ্য হয়নি।’

সম্পাদকের জবাব শুনে তাঁর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধায় আমার মাথাটা নুইয়ে পড়ল। এমন একজন সম্পাদকের অধীনে কাজ করি ভেবে খুব গর্ববোধও হল।

অভীকবাবু বললেন, ‘ব্যক্তিগত সম্পর্ক এখানে বিচার্য নয়। বিচার্য হল, রাজীব গান্ধী দেশের প্রধানমন্ত্রী আর আমি একটি সংবাদপত্র-গোষ্ঠীর প্রধান সম্পাদক। সম্পাদক হিসেবে এ কাজ আমি করতে পারি না, করলে বাকিদের কাছে আমার বিশ্বাসযোগ্যতা বলে কিছু আর বাকি থাকবে না। সম্পাদকের কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে, নিজেরই টানা একটা লক্ষ্মণ-রেখার মধ্যে থেকে তাঁকে কাজ করতে হয়। অবশ্য তিনি যদি চামচা হতে চান সেটা ভিন্ন প্রশ্ন।’

এবার বাগবাজারের ঘোষ-বাড়িতে আলো ফেলা যাক। সরকারদের মতো ঘোষেরা সক্রিয়ভাবে দলীয় রাজনীতি উপেক্ষা করতে পারেননি। তরুণকান্তি ঘোষ, তাঁর তুতো-ভাই প্রফুল্লকান্তি ঘোষ (শত ঘোষ নামেই যিনি বেশি পরিচিত) কংগ্রেসের এম এল এ, এম পি, মন্ত্রী হয়েছেন, ফলে ওই বাড়ির বিশ্বাসযোগ্যতা বরাবরই বড়ো প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে থেকেছে। দু-কূল রক্ষা করতে গিয়ে কোনোটাই শেষ পর্যন্ত রক্ষা করা যায়নি। দলীয় রাজনীতি করতে গিয়ে ব্যবসা তার প্রাপ্য অগ্রাধিকার পায়নি। 

প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিটের কর্তারাও বরাবর কংগ্রেসের সমর্থক ছিলেন কিন্তু ব্যবসার বৃহত্তর স্বার্থে দলীয় রাজনীতির প্রলোভনে কদাচ পা দেননি। অশোক কুমার সরকার, অভীক সরকার অনেকবার রাজ্যসভায় যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছেন, স্বধর্ম থেকে সরেননি। তাঁরা ব্যবসায়িক সাফল্যের মধ্যে দিয়ে বঙ্গ-সমাজ ও সংস্কৃতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন, তার জন্য রাজনীতির চোরা-পথে প্রবেশের কোনো প্রয়োজন হয়নি। বাগবাজারের ঘোষেরা চলেছেন ঠিক উল্টোপথে, দুই দৃষ্টিভঙ্গির এই মৌলিক পার্থক্য গড়ে দিয়েছে সাফল্য আর ব্যর্থতার ইতিহাস।

আনন্দবাজারের ৭৫তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অভীকবাবু যে বক্তৃতাটি পাঠ করেছিলেন তাতে যেমন তাঁর স্বভাবসুলভ দম্ভের ছোঁয়া ছিল তেমনি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই কাগজটি কীভাবে নিজেকে বদলেছে, কীভাবে নতুন নতুন প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেছে, কীভাবে সব কয়টি যুক্তাক্ষর অবিকৃত রেখে কম্পিউটারে বাংলা হরফ তৈরি করেছে এবং এইভাবে একটি জাতির মুখপাত্র হয়ে উঠতে পেরেছে, তার বিশদ, মনোজ্ঞ আলোচনাও ছিল। আনন্দবাজারের সাফল্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী যাঁরা অভীকবাবুর এই বক্তৃতাটি তাঁদের অবশ্যপাঠ্য।

যুগান্তর এ পথে হাঁটেইনি। প্রতিযোগিতার বাজারে নিয়মিত পরিবর্তনই যে সফলভাবে টিকে থাকার একমাত্র পূর্বশর্ত, ঘোষ পরিবারের তা নিয়ে বিশেষ চিন্তাভাবনা ছিল বলে মনে হয় না, থাকলেও খবরের কাগজে তা কোনোদিন প্রতিফলিত হয়নি। আনন্দবাজার আর যুগান্তর এই দুটি কাগজকে পাশাপাশি রাখলেই গুণগত মানের তারতম্য বোঝা যেত সাদা চোখেই। একটি ঝকঝকে, স্পষ্ট হরফ, পরিষ্কার ছবি, অঙ্গসজ্জায় আধুনিকতা, অনেকটা যেন নববধূর রূপ। অন্যটা দেখতে ঠাকুরমার ঝুলির আমলের। যত বয়সই হোক আনন্দবাজার তার বহিরঙ্গে যৌবন ধরে রাখতে পেরেছে, যুগান্তর পারেনি।

আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে একটা সময় আনন্দবাজার সাংবাদিকতার উৎকর্ষ বৃদ্ধিতেও মনোযোগী হল। চালু হল চাকরির প্রবেশিকা পরীক্ষা, সেই পরীক্ষায় বসতে পারার ন্যূনতম যোগ্যতা স্থির হল ফার্সট ক্লাস ডিগ্রি, স্নাতক অথবা স্নাতকোত্তর স্তরে। আনন্দবাজারে থাকাকালীন এই ব্যবস্থা নিয়ে অনেক কটূ কথা শুনেছি, কৈফিয়ৎ দিতে দিতে হাঁফ ধরে গিয়েছে, অনেকেই বলেছেন এটা উন্নাসিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। অথচ এই ব্যবস্থার পিছনের চিন্তাধারাটি অতীব যুক্তিগ্রাহ্য। সাংবাদিকের শিক্ষার ভিতটা পাকাপোক্ত না হলে তার সাংবাদিকতার মানটিও হবে না। সবার ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা যে একই রকম সফল হয় তা নয়। তবে এর চেয়ে ভালো বিকল্প ব্যবস্থাই বা কী হতে পারে?

বাগবাজারের এসব নিয়ে মাথাব্যথা ছিল বলে কখনও শুনিনি। জমিদারি প্রথায় মেধার তুলনায় আনুগত্যই অগ্রাধিকার পাবে সেটাই নিয়ম। ঠিক যেমন মেধায় টান পড়লে একদিন গাছটিও মুখ থুবড়ে পড়বে সেটাই ভবিতব্য।

এতৎসত্ত্বেও যুগান্তরের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর আমার কাছে ছিল ঘোর দুঃসংবাদ। বহু মানুষের রুটি-রুজি জড়িত ছিল এই বিরাট প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে, তাঁরা পথে বসে পড়েছিলেন রাতরাতি। প্রভিডেন্ট ফান্ডের হকের টাকা পেতেও তাদের অনেকের জান কয়লা হয়ে গিয়েছিল, সবাই সবটুকু প্রাপ্য টাকা পেয়েছিলেন বলেও মনে হয় না। এই নির্মম, আত্মমগ্ন বঙ্গীয় সমাজে কর্মচ্যুত মানুষের পাশে কেউ দাঁড়ায় না, অস্তিত্ব রক্ষার কঠিনতম লড়াই তাকে লড়তে হয় একাই। এখন অবশ্য গণ-হারে লোক ছাঁটাই করতে কোম্পানির দরজা বন্ধ করতে হয় না। কোনো কারণও দর্শানোর প্রয়োজন নেই। বার্ড ফ্লুতে মুর্গি জবাই করার স্টাইলে এখন মিডিয়ায় কর্মী-জবাই হয়। গিলোটিনে গলাটা পেতে রেখে কাজ করতে হয় সাংবাদিকদের। কম-বেশি সর্বত্র।

নিশ্চিত নিরাপত্তা থেকে সাংবাদিকদের নিরাপত্তাহীনতায় অধোগমন, চল্লিশের দাঁড়কাক আমি, তারও স্বাক্ষী।

আনন্দবাজারের কর্মচ্যুত অথবা ইস্তফা দেওয়া সাংবাদিকদের পুনর্বাসন কেন্দ্র ছিল বাগবাজারের ওই বাড়ি। এখানে চাকরি খোয়ালে ওখানে মিলে যাবে, এই ভাবনাটিই ছিল মানসিক শান্তির পক্ষে অনেকখানি। এই মুহূর্তে তিনজনের নাম আমার মনে পড়ছে— অমিতাভ চৌধুরী (ছড়াকার, রবীন্দ্র গবেষক), শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় এবং আমার দীর্ঘদিনের সুহৃদ, একান্ত আপনজন দীপংকর চক্রবর্তী। তিনজনাই আজ প্রয়াত।

ইস্তফা দেওয়ার আগে অমিতাভ চৌধুরী ছিলেন আনন্দবাজারের সফল বার্তা-সম্পাদক। সন্তোষকুমার ঘোষের পদোন্নতি হওয়ার পরে তাঁর শূন্যস্থানে। ঘোষ-চৌধুরীর চমৎকার যুগলবন্দি আনন্দবাজারের খবরে এক স্বতন্ত্র মাত্রা এনে দিয়েছিল। হঠাৎই সরকার বাড়ির এক মালিকের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ হয়, উত্তেজিত বাক্য-বিনিময়ের শেষে তিনি সোজা ইস্তফা দিয়ে বসেন। কোল পেতে অপেক্ষা করছিল যুগান্তর, প্রাপ্য সম্মান আর পদ দিয়ে তাঁকে নিয়ে নেন ঘোষ-বাবুরা।

শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় চাকরি খুইয়েছিলেন একটি অপ্রীতিকর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। ক্রোধ সংবরণ করতে না পেরে তিনি সন্তোষবাবুর গায়ে অফিসের মধ্যেই হাত তুলেছিলেন। তাঁর ক্রুদ্ধ হওয়ার কারণটি ছিল কোম্পানি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে প্রমোশন দিয়েছে, তাঁকে দেয়নি কেন। মাথা গরম করে একটি অমার্জনীয় কাণ্ড ঘটিয়ে বসায় শ্যামল আনন্দবাজার ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। বাগবাজার তাঁকে সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়ে ‘অমৃত’ পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব দিয়েছিল।

কিন্তু দুধের স্বাদ কি ঘোলে মেটে? সরকার বাড়িতে অনেকদিন যাঁরা কাজ করেছেন, অন্যত্র গিয়ে তাঁরা কখনওই সেই সুখ পাননি। তবু যুগান্তর যতদিন ছিল, একটা মন্দের ভালো বিকল্প তো ছিলই। 

আমি প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিটে প্রবেশ করি ১৯৮৩ সালে। যুগান্তর তখন প্রতিযোগিতার ত্রি-সীমানাতেও নেই, তবু ঘোষ আর সরকারদের রেষারেষি বন্ধ হয়নি, ফল্গু ধারার মতো নিরন্তর বয়ে চলেছে। এই দুই পরিবারের মধ্যে যে নিকট আত্মীয়তা ছিল তা বোঝার কোনও উপায়ই ছিল না। বরং চুলোচুলিটা কোন পর্যায়ের আমি তার প্রথম প্রশ্নাতীত আন্দাজ পাই ১৯৮৪-র লোকসভা ভোটের সময়।

সেই ভোটে বারাসাত কেন্দ্র থেকে তরুণকান্তি ঘোষ প্রার্থী হয়েছিলেন ফরোয়ার্ড ব্লকের বর্ষীয়ান নেতা চিত্ত বসুর বিরুদ্ধে। তরুণকান্তিকে কীভাবে কাঠি করা যায় তার দায়িত্ব ন্যস্ত হল ‘ট্রায়েড অ্যান্ড টেস্টেড’ এক হাত-কচলানো অনুগত ভৃত্যের ওপর। বারাসত কেন্দ্র নিয়ে সে চূড়ান্ত একপেশে ও অসত্য একটি রিপোর্ট লিখল যা পড়লে মনে হয় তরুণবাবু নিজের জামানতটি রক্ষা করতে পারলেই যথেষ্ট। পরে সেই হাত-কচলানো সহকর্মীটিই মালিকদের কাছে তার নিজের গুরুত্ব বোঝাতে একদিন একটি গোপন তথ্যও আমার কাছে ফাঁস করে দিল।

‘জানিস, আমি নিজে হাতে করে এক লাখ টাকা চিত্তবাবুকে দিয়ে এসেছি। কাউকে বলিস না ভাই, টপ সিক্রেট অপারেশন তো!’

বটেই তো! গো-বধ ছাড়া অবোধের আর কীসে আনন্দ হয়?

ফল বের হলে দেখা গেল, আনন্দবাজারের গালে দুই থাপ্পড় কষিয়ে বারাসাত কেন্দ্র থেকে তরুণকান্তিই জয়ী হয়েছেন। বিরুদ্ধ প্রচার, বিরোধী প্রার্থীকে নগদে উৎসাহ ভাতা, সবই মাঠে মারা গেল। 

অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে? (শেষ)

Powered by Froala Editor