দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ক্রমশ শেষের পথে। মুসোলিনির পতনও আসন্ন। জার্মান নাৎজি বাহিনী পিছু হটছে। এমন অবস্থায়, একা পরাজিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বিশ্বের ত্রাস, অ্যাডলফ হিটলার। কিছুতেই মানতে পারছেন না তিনি। কিন্তু পরাজয় নিশ্চিত জেনেও ধরা দেবেন না। দিনটা ১৬ জানুয়ারি, ১৯৪৫। হিটলার প্রবেশ করলেন ফুয়েরার বাঙ্কারে। এটাই তাঁর শেষ আশ্রয়। এখানেই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ছিলেন তিনি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে হিটলার কী ছিলেন, সেটা নতুন করে বলে দিতে হয় না। তিরিশ-চল্লিশের দশক, মৃত্যুর আগে অবধিও তিনি ছিলেন গোটা বিশ্বের আতঙ্ক। প্রাথমিক সাফল্য পেলেও, পরের দিকে ক্রমশ পিছনে সরতে থাকে তাঁর নিজের নাৎজি বাহিনীরা। বিশ্বাস করতে পারছেন না কাউকে। এইভাবে আবার পরাজয় ঘটবে জার্মানির, পরাজয় ঘটবে তাঁর, এটা কিছুতেই মানতে পারছিলেন না ‘ফুয়েরার’ হিটলার। কিন্তু প্রতিজ্ঞা একটাই, শত্রুর হাতে নিজেকে সঁপে দেবেন না। আত্মসমর্পণ নৈব নৈব চ! ফুয়েরার বাঙ্কার থেকেই যাবতীয় খবর পেতেন হিটলার। পেয়েছিলেন মুসোলিনির মৃত্যু, জার্মানি ও নাৎজি বাহিনীর আত্মসমর্পণের খবরও। ততদিনে বাঙ্কারের মধ্যে কেটে গেছে প্রায় সাড়ে তিন মাস।
রেড আর্মি আসার আগেই বিয়ে করেন দীর্ঘদিনের সঙ্গী ইভা ব্রাউনকে। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এই বাঙ্কারে নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করেন হিটলার। দিনটা ছিল ৩০ এপ্রিল। সায়ানাইড ট্যাবলেট খান ইভাও। পূর্ব নির্দেশ অনুযায়ী, দেহ দুটোয় পেট্রল ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, যাতে কোনো চিহ্ন না থাকে। শেষ হয় পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস এক ব্যক্তির কাহিনি।
পরবর্তীকালে সেই বাঙ্কার থেকেই দুজনের দগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। হিটলারের মুখের নীচের চোয়াল ছাড়া আর কোনো অংশই অটুট ছিল না। আদৌ হিটলার মারা গিয়েছিলেন কিনা, তা নিয়েও তর্ক উঠেছে বিস্তর। কারণ, সেই সময় হিটলারের মতো দেখতে আরও বহু মানুষ তাঁর আশেপাশে থাকত। সেরকমই কি কারোর দেহ পাওয়া যায় ফুয়েরার বাঙ্কার থেকে? সত্যিই কি পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি? পরে এইসব জল্পনা উঠে যায়। ওই বাঙ্কার শেষ স্মৃতি হয়ে থেকে যায় তাঁর। জীবনের শেষ কটা দিনের পরাজয়ের স্মৃতি নিয়ে।
Powered by Froala Editor