কৃষি আইন নিয়ে বিতর্কে রেশ পড়েনি এখনও। গত বছর থেকে চলছে লাগাতার বিক্ষোভ-প্রতিবাদ। কিন্তু তাতে আদৌ কি বদলাচ্ছে কৃষকদের ভাগ্য? সম্প্রতি ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো তথা এনসিআরবি’র প্রকাশিত রিপোর্ট জানাচ্ছে অন্য কথা। ২০১৯ সালের তুলনায় মহামারীর বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে কৃষক-আত্মহত্যার (Farmers) সংখ্যা। বিশেষ করে চিন্তা বাড়াচ্ছে কৃষি-শ্রমিকদের অবস্থা। বিগত এক বছরে কৃষি শ্রমিকদের আত্মহত্যার (Cases Of Suicide) সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ।
এনসিআরবি’র পরিসংখ্যান জানাচ্ছে ২০২০ সালে সব মিলিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন ১০,৬৭৭ জন কৃষক। যার অর্থ প্রতিমাসে আত্মহত্যা করেছেন প্রায় ৮৯০ জন কৃষক। দিনের হিসাবে সংখ্যাটা ২৯-এরও বেশি। রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের মোট আত্মহত্যার প্রায় ৭ শতাংশ কৃষিক্ষেত্র কেন্দ্রিক।
সামগ্রিকভাবে গত বছরের তুলনায় কৃষিক্ষেত্রে আত্মহত্যার সংখ্যা ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও, বাস্তব ছবি আরও ভয়ঙ্কর। পরিসংখ্যান থেকে উঠে আসছে, বিগত এক বছরে ভয়ঙ্করভাবে আত্মহত্যা প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে। এই কৃষিশ্রমিক শ্রেণির ক্ষেত্রে গত এক বছরে রেকর্ড করা হয়েছে ৫৩৩৫টি আত্মহত্যার ঘটনা। যা বিগত বছরের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি। কিন্তু তার কারণ কী?
আরও পড়ুন
মৃত খাল বাঁচিয়ে সেচব্যবস্থার হাল ফেরালেন তামিলনাড়ুর ৫ কৃষক
এনসিআরবি’র রিপোর্টে আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে কোনো বিশ্লেষণ করা হয়নি। তা সত্ত্বেও সহজেই অনুমান করা যায় এই ঘটনার পিছনে লুকিয়ে থাকা বাস্তব ছবিটি আসলে কী। পিএম কিষাণ কিংবা অন্যান্য নানা কৃষি-সহায়ক প্রকল্প থাকলেও, তার থেকে কোনোরকমভাবেই উপকৃত হননি ভূমিহীন কৃষকরা বা কৃষিশ্রমিকরা। ফলত, মহামারী চলাকালীন সময়ে চরম আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাঁদের। পাশাপাশি এই শ্রেণিভুক্ত কৃষকদের একটা বড়ো অংশ পরিযায়ী হওয়ায়, সেই সময় কাজ হারিয়েছিলেন অনেকেই।
আরও পড়ুন
কৃষিকাজে সাশ্রয় ঘটাতে বিস্ময়কর আবিষ্কার ৭১ বছরের কৃষকের
তবে এই পরিসংখ্যানের মধ্যেও যথেষ্ট অসঙ্গতি রয়েছে বলেই অভিমত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। তার অন্যতম কারণ হল, যেসব কৃষক আত্মহত্যা করেছেন তার মাত্র ৬.৭ শতাংশ মহিলা। বাস্তবে কৃষিক্ষেত্রে পুরুষদের মতো একইভাবে অংশ নেন মহিলারাও। কিন্তু মহিলাদের একটা বড়ো অংশ কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত, তা ধরা হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। আর তার দরুণ পরিসংখ্যানের হিসাবে এই বিরাট ফারাক বলে অনুমান একাংশের।
আরও পড়ুন
কলকাতার মার্কিন সেনা, ‘নরখাদক’ কৃষ্ণাঙ্গ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিনগুলি
পরিসংখ্যানের নিরিখে কৃষি আত্মহত্যার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। গত এক বছরে সেখানে আত্মহত্যা করেছেন ৪ হাজার কৃষক। যা গোটা দেশের পরিসংখ্যানের প্রায় ৩৭ শতাংশ। তারপরেই রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের এবং তামিলনাড়ু। তবে বাংলায় গত বছর কোনো কৃষিভিত্তিক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেনি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা উচিত, ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। ফলে, এই বিশেষ ক্ষেত্রে প্রতিবছর আত্মহত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ। কৃষিঋণ শোধ দিতে না পারা, ফসলের ক্ষতি কিংবা সেচের অভাবের মতো বিষয়গুলির ওপর বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন সরকারেরও। এখন দেখার সাম্প্রতিক রিপোর্ট প্রকাশের পর আদৌ কৃষি প্রকল্পগুলিতে কিংবা আইনে আদৌ কোনো বদল আসে কিনা…
Powered by Froala Editor