“আমাদের দিন বদলায় নাকো, মিতে!” – ‘বেকার জীবনের পাঁচালি’তে লিখেছিলেন কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। হয়তো পুরোপুরি ঠিক বলেননি। কারণ বেকার জীবনের উন্নতি না হোক, ক্রমশ অবনতি হয়েই চলেছে। আর বিগত কয়েক বছরে সেই মাত্রাটা যে অনেকটাই বেড়েছে, তা বোঝা যায় ন্যাশানাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যানে। ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সারা দেশের আত্মহত্যার পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে এনসিআরবি। আর তাতে দেখা গিয়েছে, এই চার বছরের মধ্যে দেশে বেকারত্বের কারণে আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২৪ শতাংশ।
২০১৪ সালে বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে কেন্দ্রে আসে নতুন সরকার। অবশ্য প্রতিশ্রুতি প্রতিশ্রুতির জায়গাতেই থেকে যায়। উলটে দেখতে দেখতে বাড়তে থাকে বেকারত্ব। ২০১৬ সাল, সারা দেশে বেকারত্বের কারণে আত্মহত্যা করেন ২২৯৮ জন। আর ২০১৯ সালে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ২৮৫১। অর্থাৎ সংখ্যাটা বেড়েছে ২৪ শতাংশ। আর এর মাঝের দুবছরেও গ্রাফ ক্রমশ উর্ধ্বমুখী। ২০১৭ সালে বেকারত্বের কারণে আত্মহত্যা করেন ২৪০৪ জন এবং ২০১৮ সালে ২৭৪১ জন। ২০২০ সালের খতিয়ান এখনও প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু সেখানেও যে সংখ্যাটা আরও অনেকটাই বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই।
২০১৯ সালের রিপোর্টে এনসিআরবি জানাচ্ছে, সারা দেশে মোট আত্মহত্যার সংখ্যা ১৩৯১২৩। এর মধ্যে বেকারত্বের কারণে আত্মহত্যার সংখ্যা ২ শতাংশেরও বেশি। শুধু তাই নয়, এই ঘটনাগুলিতে সুইসাইড নোট বা কোনো সারকামস্টেন্সিয়াল প্রমাণের নিরিখে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে আত্মহত্যার মূল কারণই বেকারত্ব। তবে মোট আত্মঘাতী মানুষের ১০.১ শতাংশ আত্মহত্যার সময় বেকার ছিলেন। কেউ সদ্য কাজ হারিয়েছেন, কেউ বা দীর্ঘদিন ধরে কাজ খুঁজে খুঁজে ব্যর্থ। এছাড়া দেখা গিয়েছে ৩২ শতাংশ ক্ষেত্রে আত্মহত্যার কারণ পারিবারিক অশান্তি। আর এইসমস্ত অশান্তির মূলেও রয়েছে বেকারত্ব অথবা দারিদ্র্য। তাই বাস্তবে বেকারত্বের কারণে আত্মহত্যার সংখ্যাটা আরও অনেকটাই বেশি। নথিবদ্ধ ঘটনাগুলিতে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গিয়েছে কেবল।
দেখা গিয়েছে, বেকারত্বের কারণে আত্মহত্যায় শীর্ষস্থানে রয়েছে কর্ণাটক। ২০১৯ সালে এই রাজ্যে ৫৫৩ জন বেকারত্বের কারণে আত্মহত্যা করেছেন। এরপর যথাক্রমে মহারাষ্ট্র (৪৫২), তামিলনাড়ু (২৫১), ঝাড়খণ্ড (২৩২) এবং গুজরাত (২১৯)। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা অবশ্য বেশ কম। ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্বের কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ৪০টি। আর এই পরিসংখ্যানের সময়কালের ঠিক পরেই এসে পড়েছে কোভিড অতিমারী। অতিমারী পরিস্থিতির আগেই দেশে বেকারত্বের হার ৪৫ বছরের রেকর্ড ভেঙেছিল। এরপর লকডাউনের কারণে তা আরও বেড়েছে। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে যে বেকারদের আত্মহত্যার ঘটনাও বেড়েছে, তা নিঃসংশয়েই বলা যায়। কিন্তু এর প্রকৃত ছবিটা বোঝার মতো পরিসংখ্যান এনসিআরবি এখনও প্রকাশ করেনি। খুব তাড়াতাড়ি বিগত ২৫ বছরের খুন, দুর্ঘটনা ও আত্মহত্যা বিষয়ক সমস্ত পরিসংখ্যান একত্রে প্রকাশ করতে চলেছে এনসিআরবি। আর তাহলে প্রকৃত ছবিটা আরও কিছুটা স্পষ্ট হবে। কিন্তু বেকার জীবনের কোনো পরিবর্তন কি হবে?
আরও পড়ুন
সৌরভ-ঋদ্ধিমানের সতীর্থ, অবসাদে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন এই বঙ্গ ক্রিকেটার!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ম্যাকফি অ্যান্টিভাইরাসের স্রষ্টার আত্মহত্যা, নেপথ্যে কোন রহস্য?