পৃথিবীর অন্যতম দূষিত শহর ছিল এটি, কাটিয়ে উঠেছে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা

বছর চল্লিশ আগে সুডবেরির শিশুরা হয়তো বিশ্বাস করতে চাইত না যে, গাছের পাতার রং সবুজ। স্থানীয় খনি এবং কলকারখানার কালো ধোঁয়ায় চারিদিক ঢেকে থাকত। সমস্ত শহরটাই ছিল কালো চাদরে ঢাকা। তবে ক্রমশ ক্ষত সারিয়ে উঠেছে সুডবেরি শহর। পৃথিবীর একসময়ের অন্যতম দূষিত শহরের পরিবেশ এখন আশেপাশের অনেক অঞ্চলের থেকেই নির্মল। অন্টারিও অঞ্চলের নির্মলতম শহরের স্বীকৃতি পেয়েছে এই সুডবেরি শহর।

ষাটের দশকে কানাডার অন্যতম বড় শিল্পাঞ্চল ছিল সুডবেরি। শিল্প উৎপাদন যেমন ছিল, তেমনই ছিল দূষণের প্রকোপ। সত্তরের দশকের শেষ দিক থেকেই এই শহরে মানুষের বসবাস রীতিমতো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কর্মসূত্রে যাঁরা থাকতে বাধ্য হতেন, তাঁদের শরীরেও নানা ধরনের রোগের প্রকোপ দেখা দিতে শুরু করে। আর এর পরেই সচেতন হল কানাডা সরকার। শহরকে পুনরায় বাসযোগ্য করে তুলতে নানারকম প্রকল্প নেওয়া হল। সেইসব প্রকল্পের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন শিল্পপতিরাও। আর সাধারণ মানুষের সহযোগিতাও পাওয়া গেল অচিরেই। এরপর দীর্ঘ চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে চলেছে সবুজায়ন প্রক্রিয়া। আর তার ফলাফল একেবারেই হতাশাব্যঞ্জক নয়, সেকথা আগেই বলা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অন্টারিও অঞ্চলের সবচেয়ে নির্মল শহরটি হল সুডবেরি। পরিবেশবিদদের কাছে এ যেন এক বিরাট সাফল্য। দীর্ঘ গবেষণা আর হাজার হাজার পরীক্ষানিরীক্ষার এমন সাফল্য দেখে উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেননি লরেন্টিয়ান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জন গুন। তাঁর সুরের প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে অন্যান্য গবেষকদের কথাতেও। সুডবেরি যেন প্রত্যেকের কাছেই এক মাইলস্টোন।

আর এই সাফল্যের খুঁটিনাটি বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে সেখানে পরিবেশ বিজ্ঞানের অনেক পড়ুয়াই ছুটে গিয়েছেন। এই সাফল্য থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীতে অন্যান্য অঞ্চলেও একই ধরনের প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে। হয়তো এভাবেই একদিন সুস্থ হয়ে উঠবে সমস্ত পৃথিবী। মানুষের ক্রিয়াকলাপ থেকে যে অসুখ ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর বুকে, মানুষেরই দায়িত্ব তার থেকে প্রকৃতিকে সুস্থ করে তোলা।