সরকারি কিংবা কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা থেকে আসবে ত্রাণ। নিজে না খেয়েও সন্তানদের মুখে সেই দানাপানি তুলে দেবেন ভেবেই অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন তিনি। তবে সে ত্রাণ এসে পৌঁছানোর আগেই চোখের সামনে চলে গেল দুই সন্তান। ৫ ও ৭ বছরের দুই পুত্রের দেহ ধুলো-মাটি চাপা দিয়ে কাঁটাঝোপের জঙ্গলে রেখে এলেন বছর চল্লিশের মা। আর উপায়ই বা কী আছে? সামর্থ্য থাকুক বা না থাকুক, খাবারই যে নেই গোট প্রদেশে।
সুদানের পিবোর প্রদেশের বর্তমান ছবি অনেকটাই এমন। খাদ্যের অভাবে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে যাচ্ছেন ৩০ হাজার মানুষ। তবে শুধু পিবোর প্রদেশ নয় ওয়ারাপ, জংলেই, বাহার-এল-গাজব ও আরও বেশ কিছু প্রদেশেই চরমে পৌঁছেছে দুর্ভিক্ষ। জাতিসঙ্ঘের রিপোর্ট অনুযায়ী সুদানের ২০ শতাংশ বাসিন্দাকেই একবেলা খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘ কয়েকদিন। তাছাড়াও ৩০ শতাংশ শিশুই অপুষ্টির শিকার সুদানে।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের তথ্য অনুযায়ী, লেকুয়াঙ্গলে শহরের মাত্র ৭টি পরিবারে গত ফেব্রুয়ারি থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে মারা গেছে ১৩ জন শিশু। এই তথ্য থেকেই অনুমান করা যায়, সমগ্র সুদানের পরিস্থিতিটা আসলে ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে। খিদের জেরে লিকুয়াঙ্গলে শহরে গত দুমাসে মারা গেছে ১৭ জন শিশু।
তবে এসবের মধ্যেও সরকারের হেলদোল নেই তেমন। সরকারি পরিসংখ্যান দাবি করছে দেশের মাত্র ১১ হাজার মানুষ অভুক্ত রয়েছেন। তাদের কাছে দ্রুত সাহায্যও পৌঁছে দেওয়া হবে বলে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে সুদান গভার্নমেন্ট। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ১ লক্ষেরও বেশি মানুষ রয়েছে ক্ষুধার ‘সিভিয়ার’ পর্যায়ে। আশঙ্কা চলতি বছরে এই পর্যায়ে এসে পৌঁছাবেন দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ। যার সংখ্যা কম করে হলেও ৬০ লক্ষ।
এই দুর্ভিক্ষের সূত্রপাত ২০১৭ সালে। একদিকে যেমন ধীরে ধীরে বাড়ছিল অন্নের অভাব, তেমনই পাল্লা দিয়ে গৃহযুদ্ধ আরও ভয়ঙ্কর করে তুলেছিল পরিস্থিতিকে। আজও যার রেশ প্রতিদিনই হিংস্র করে তুলছে সুদানের পরিবেশকে। এবং সব থেকে বড়ো কথা, দেশের অভ্যন্তরীণ এই সংঘর্ষের পিছনে রয়েছে সরকারি মদতও। প্রতিপক্ষকে ঠেকাতে সাধারণ মানুষের হাতে গোপনে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দিচ্ছে সরকার, এমন অভিযোগও উঠছে সুদানের বিরুদ্ধে।
তবে একদিকে যেমন অনাহার, তেমনই চিকিৎসার অভাবও দুঃসহ করে তুলেছে সুদানের পরিস্থিতি। ক্লিনিকের বাইরে রোজই পড়ছে লম্বা লাইন। এমনকি সারারাত অসহ্য খিদে নিয়েও মায়েরা অপেক্ষা করছেন ছোট্ট শিশুকে নিয়ে। চলতি মাসে ১৭ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে অপুষ্টিতে। পাশাপাশি অন্যান্য চিকিৎসার অভাবেও বয়স্কদের মধ্যেও বাড়ছে আশঙ্কা।
আরও পড়ুন
২০২১ সালে আরও চরমে উঠবে দুর্ভিক্ষ, সতর্ক করল নোবেলজয়ী সংস্থা
গত এপ্রিল-মে মাসেই সতর্কতা জারি করেছিল জাতিসংঘ। জানিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বেশ কিছু দেশে আবার ভয়ঙ্কর রূপ নেবে দুর্ভিক্ষ। বাস্তবেই তেমন হয়ে উঠল পরিস্থিতি। অবস্থা আয়ত্তে আনতে জাতিসংঘের তিনটি শাখাই এগিয়ে এসেছে সাহায্যের জন্য। তবে বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যার মধ্যে কীভাবে খাবারের সমবণ্টন করা সম্ভব গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতির মধ্যেও, সেটাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে আন্তর্জাতিক এই সংস্থার সামনে...
Powered by Froala Editor