প্রতি বছর গরম বাড়ছে, বাড়িতে বাড়িতে বসছে এসি মেশিন। অথবা শীত আসতে দেরি, তাই শীতের পোশাকের বাজার মন্দা। এসব ব্যাপার নিয়ে আমরা খুব একটা মাথা না ঘামালেও, মাথা ঘামানোর যথেষ্ট কারণ আছে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ইতিমধ্যে জীবজগতের যথেষ্ট ক্ষতি করেছে, এবং অদূর ভবিষ্যতে অপূরণীয় আরো অনেক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এমনটাই মতামত বিশেষজ্ঞদের। তাই অচিরেই জলবায়ু পরিবর্তনের রাশ টেনে ধরার কথা বলছেন তাঁরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলো চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে না পারলে পৃথিবীর বুক থেকে অনেক প্রাণী ও উদ্ভিদই চিরতরে হারিয়ে যাবে। আর এমনটা হতে খুব বেশি দেরি নেই। মার্কিন গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস-এর জার্নালে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ২০৭০ সালের মধ্যেই পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ জীব বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। ৫৮১টি অঞ্চলের ৫৩৮টি প্রজাতির উপর দশবছরের একটি পর্যবেক্ষণ চালিয়ে এমনই সিদ্ধান্তে এসেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণায় গড় উষ্ণতার পাশাপাশি আরো ১৮টি জলবায়ু নিয়ামককে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
নির্দিষ্ট অঞ্চলের নির্দিষ্ট প্রজাতির বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ প্রয়োজন হয়। গবেষণায় সেগুলোর দিকে বিশদে নজর রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্রিস্টিয়ান রোমান-প্যালেসিওস। অনেক সময়েই গড় উষ্ণতাকে একমাত্র নিয়ামক হিসাবে ভেবে ভুল করেন গবেষকরা। গড় উষ্ণতার বিশেষ পরিবর্তন না হলেও কিন্তু বড়ো ধরনের বিপদ ঘটতে পারে। এমনটাই জানাচ্ছেন গবেষক জন ওয়েইন্স।
বিগত ১০ বছরের পর্যবেক্ষণ থেকে বিজ্ঞানীরা দেখছেন, বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যে ৪৪ শতাংশের বেশি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। প্রয়োজন মত বাসস্থান পরিবর্তন করতে পারলে হয়তো তারা বেঁচে থাকতে পারত, কিন্তু দীর্ঘদিন একই জায়গায় থাকার কারণে তারা নতুন বাসস্থানের দিকে এগোয়নি। জীবজন্তুর যাযাবর বৃত্তিকেও তাই ধ্রুবক ধরতে রাজি নন তাঁরা।
ইতিমধ্যে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত। অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে আরো ব্যাপক সংকট দেখা দেবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৭০ সালের মধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে এক-তৃতীয়াংশ, এমনকি অর্ধেক প্রজাতি। তাদের অনেকের সংখ্যা ইতিমধ্যে সংকটসীমায় পৌঁছে গেছে। তাই সমস্ত দেশগুলিকে প্যারিস চুক্তির শর্তাবলি মেনে চলার আবেদন জানিয়েছেন রোমান-প্যালিসিওস। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ করতেই এই চুক্তি করা হয়েছিল। কিন্তু অনেক দেশই গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখছেন না। পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য বাঁচাতে গেলে প্রত্যেক দেশকেই এগিয়ে আসতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সমস্ত মানুষকে। নাহলে এই পৃথিবীতে শুধু ইঁট-কাঠের জঙ্গলে মানুষ একা লড়াই করবে কতদিন?