আর ০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণায়নেই ঘনিয়ে আসবে ৫টি বিপর্যয়! জানাচ্ছে গবেষণা

যে-কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ পরিবেশ বা প্রাকৃতিক অবস্থার। যেমন তুন্দ্রা অঞ্চলে গোলাপ ফোটে না, তেমনই পোলার বিয়ারের মতো প্রাণীরা টিকে থাকতে পারে না নিরক্ষীয় অঞ্চলে। ঠিক এভাবে পৃথিবী প্রাণের বসবাস যোগ্য হওয়ার প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত শর্তগুলিকে ১৬টি ভাগে ভাগ করেন গবেষকরা। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাদের বলা হয় টিপিং পয়েন্ট। বিশ্বজুড়ে উষ্ণতা বৃদ্ধির (Warming) কারণে এবার লঙ্ঘিত হতে চলেছে এমনই পাঁচটি টিপিং পয়েন্ট (Tipping Point)। অর্থাৎ, ক্রমশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে পৃথিবী।

‘সায়েন্স’ বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত সাম্প্রতিক সমীক্ষা জানাচ্ছে এমনটাই। প্রাক-শিল্প যুগ অর্থাৎ ১৮৫০-১৯০০ সালের পর থেকে পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই উষ্ণায়নের মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁলেই অতিক্রান্ত হবে পাঁচটি টিপিং পয়েন্ট, এমনটাই জানাচ্ছেন গবেষকরা। তবে এখানেই শেষ নয়। তারপর প্রতি ০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে লঙ্ঘিত হবে একটি করে টিপিং পয়েন্ট।

পটসডাম ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এই গবেষণায় প্রাথমিকভাবে যে পাঁচটি টিপিং পয়েন্টকে চিহ্নিত করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম প্রবাল প্রাচীরের মৃত্যু। বিগত এক দশক ধরে যা ক্রমশ প্রকট হচ্ছে আমাদের কাছে। ইতিমধ্যেই ধ্বংস হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের একাংশ। তাছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে গ্রিনল্যান্ড ও পশ্চিম আন্টার্কটিক হিমবাহের সম্পূর্ণ গলন, বোরিয়াল পার্মাফ্রস্টের আত্মপ্রকাশ এবং ল্যাব্রাডর সাগরের পরিচলন বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো বিষয়ও। উল্লেখ্য, এই সাগরের স্রোতকে কাজে লাগিয়েই প্রতিবছর পরিযায়ন করে অসংখ্য পেঙ্গুইন, সিন্ধুঘটক। বিপর্যস্ত হবে তারাও।

২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য পৌঁছানোর জন্য চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছিল বিশ্বের ২০০টি দেশ। স্থির হয়েছিল চলতি শতকের মধ্যে বিশ্বের গড় উষ্ণতাবৃদ্ধিকে আটকে রাখা হবে ১.৫ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। তবে সেই লক্ষ্য পূরণ আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন গবেষকরা। অনুমান তা পৌঁছাতে পারে আড়াই ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। বাস্তবে তেমনটা সত্যি হলে পৃথিবীর অধিকাংশ অঞ্চলই আর বসবাসযোগ্য থাকবে না বলেই অনুমান গবেষকদের। সেইসঙ্গে ধ্বংস হয়ে যাবে বাস্তুতন্ত্রের একাংশ। আগামী কপ-২৭ বৈঠকে এই বিষয়টিকে যাতে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেন রাষ্ট্রনেতারা, সেই আর্জিই জানাচ্ছেন গবেষকরা…

Powered by Froala Editor