হবিট - হলিউডের বিখ্যাত সব সিনেমায় এদের উপস্থিতি সবাই দেখেছি। বিভিন্ন উপজাতির লোকগল্পেও এদের বর্ণনা ফিরে ফিরে এসেছে। আকারে খাটো এই মানুষরা পর্দায় বা রূপকথার বইয়ে থাকলেও, বাস্তবে কি সত্যিই ছিল? ইন্দোনেশিয়া থেকে আবিষ্কৃত কিছু ‘ছোটো’ মানুষের দেহাংশ ও হাড় এই প্রশ্নটাকে আবারও জাগিয়ে দিয়েছে।
হবিটদের গল্প শোনা যায় ইন্দোনেশিয়ার ফ্লর দ্বীপের লোককথায়। সেই গল্পে একটি রহস্যময়ী বৃদ্ধা নারীর উল্লেখ আছে, যে ওই দ্বীপের বনে থাকত এবং সমস্ত কিছু খেয়ে নিত। সমস্ত কিছু বলতে, নরমাংসও। এই নারী, অর্থাৎ ‘ইবু গোগো’-র মতো আরও বহু ‘বেঁটে’ মানুষ এখানে ঘুরে বেড়াত অন্য ‘স্বাভাবিক’ মানুষদের সঙ্গে।
আরও পড়ুন
পুকুরের পাশে পড়ে রয়েছে দশম শতাব্দীর ইতিহাস, প্রাচীন শিলালিপি উদ্ধার
বিস্তর গবেষণা করার পর, ২০০৪ সালে ঐতিহাসিক ও গবেষকরা মানুষের আরও একটি নতুন প্রজাতির কথা ঘোষণা করে। নাম ‘হোমো ফ্লরসেনসিস’। ফ্লর দ্বীপের এই মানুষগুলো এই প্রজাতিরই অন্তর্ভুক্ত বলে ধরা হয়। সাধারণ মানুষের তুলনায় উচ্চতায় অনেক ছোটো এই মানুষদের মস্তিস্কের গঠনও ছিল ছোট। খুব দুর্গম জলপথ সহজেই পাড়ি দিতে পারত এরা। কিন্তু এদের অ্যানাটমি অর্থাৎ শারীরিক গঠন খুব প্রাচীন ছিল।
তাহলে কি গল্পের হবিট, এই হোমো ফ্লরসেনসিস প্রজাতিরই অংশ ছিল? তারপর থেকে আরও গবেষণা করা হয়। সংবাদ মাধ্যম থেকে সাধারণ মানুষ, প্রত্যেকের আগ্রহ ছিল স্বাভাবিকভাবেই। তাহলে কি এখনও এরকম মানুষ বেঁচে আছেন ঘন বনের ভেতরে? এই প্রশ্নও উঠেছিল। এরই মধ্যে গবেষণার কাজ চলতে চলতে ইন্দোনেশিয়ার ওই দ্বীপ অঞ্চল থেকেই উদ্ধার হয় বেশ কিছু মানুষের হাড়। কিন্তু সাধারণ মানুষের থেকে যেন আকারে অনেকটা ছোটো এগুলো। ফ্লর দ্বীপের গুহায় পাওয়া এই হাড় দিয়েই আরও এগোয় বিশ্লেষণ।
আরও পড়ুন
দুর্গম অঞ্চলে ভেঙে পড়ল বিমান, মৃত সহযাত্রীদের মাংস খেয়ে ৭৩ দিন কাটালেন জীবিতরা
মানুষের উচ্চতাগত তফাৎ জায়গা বিশেষে দেখা যায়। কিন্তু ওই অঞ্চলের মানুষদের জিনে হোমো ফ্লরসেনসিস মানুষদের কোনো বৈশিষ্ট্যই খুঁজে পাওয়া যায়নি। এক সময় যে এই ‘হবিট’রা এখানে থাকত, তার প্রমাণ মিলেছে। তারপর অভিযোজনের ফলে আস্তে আস্তে বদল এসেছে তাঁদের মধ্যে। অন্তত দু’বার বিবর্তন ঘটে এদের, এমনই বলছেন গবেষকরা। কাজেই বলা যায়, গল্পে যা রটে, তার কিছু অন্তত ঘটে!