করোনাকালে অতিরিক্ত পারিবারিক নির্যাতনের শিকার প্রবীণরা, জানাচ্ছে রিপোর্ট

বিগত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা অতিমারীর কারণে স্তব্ধ সারা পৃথিবীর জনজীবন। আর এই সময় শারীরিক নানা সমস্যার পাশাপাশি বারবার উঠে এসেছে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিও। একাকিত্ব আর অবসাদ গ্রাস করেছে মানুষকে। কিন্তু বয়সের শেষ সীমান্তে এসে যে মানুষগুলি একেবারে বন্ধুহীন হয়ে পড়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা আরও জ্যান্ত। একাকিত্ব আর অবসাদ তো আছেই, সেইসঙ্গে আছে প্রতি মুহূর্তের নির্যাতন। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁরা নিজেদের সন্তান বা পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকেই নির্যাতনের শিকার হন। সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর একটি বয়স্ক ও প্রবীণ নাগরিক বিষয়ক হেল্পলাইনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত রিপোর্টে উঠে এসেছে এমনই তথ্য।

১৫ জুন ওয়ার্ল্ড এল্ডার অ্যাবিউজ অ্যাওয়ারনেস ডে উপলক্ষে বেঙ্গালুরু শহরের নিজস্ব হেল্পলাইনের পক্ষ থেকে উদ্বোধন করা হল একটি ওয়েবসাইটের। আর সেই অনুষ্ঠানের মধ্যেই অনলাইনে প্রকাশিত হল গতবছরের রিপোর্ট। পরিসংখ্যান বলছে গত এক বছরে শহরে ২০৮৭ জন প্রবীণ নাগরিকের নির্যাতনের অভিযোগ জমা পড়েছে তাঁদের কাছে। সংখ্যাটা পূর্ববর্তী চেয়ে ৪৭ শতাংশ বেশি। হেলপ্লাইন ইনচার্জ এবং নাইটেঙ্গল মেডিক্যাল ট্রাস্টের ট্রাস্টি ডঃ রাধা মূর্তি মনে করেন, অতিমারীর সময়েই বয়স্ক মানুষরা আরও বেশি করে নিজেদের ব্রাত্য মনে করতে শুরু করেছেন। চিরকালই তাঁদের সংসারের বোঝা হিসাবে দেখা হয়। আর এই সময় সেই প্রবণতা আরও বেড়ে গিয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রতিবেশী বা সমাজের অন্যান্য অংশের মানুষদের কাছে তাঁরা নিগৃহীত হন না, এমনটা নয়। কিন্তু ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রেই অভিইযোগ ওঠে নিজের সন্তান বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে। আর এই ঘটনা বাস্তবে আরও বেশি ঘটে বলেই মনে করছেন তিনি। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই হয়তো সন্তানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে চান না বাবা-মায়েরা।

শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি বৈষম্যমূলক ব্যবহার, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এমনকি আর্থিক প্রতারণারও শিকার হন বয়স্ক মানুষরা। বেঙ্গালুরু হেল্পলাইনের পক্ষ থেকে তৈরি নতুন ওয়েবসাইট আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছতে চায়। তাই পরিচয় গোপন রেখে অভিযোগ জানানোর পদ্ধতিও নিয়ে এসেছেন তাঁরা। সেইসঙ্গে কোনো প্রতিবেশী বা প্রত্যক্ষদর্শী যে কোনো মানুষ অভিযোগ জানাতে পারবেন এই ওয়েবসাইটে। পরিসংখ্যানে শুধু বেঙ্গালুরু শহরের তথ্য উঠে এলেও দেশের কোথাও অবস্থা অন্যরকম নয় বলেই মনে করছেন ডঃ রাধা মূর্তি। অথচ স্নেহ ও মমতা দিয়ে যাঁরা আমাদের বড়ো করে তোলেন, জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে তাঁদের প্রতি একটু মানবিকতাও কি দেখাতে পারি না আমরা?

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
৫০ বছরের অপেক্ষার ইতি, প্রেমিকার সঙ্গে ঘর বাঁধতে চলেছেন ৮২ বছরের বৃদ্ধ