আফ্রিকার অতি ক্ষুদ্র অঞ্চল থেকে মানুষের সাম্রাজ্য ছড়িয়ে পড়েছে সমস্ত পৃথিবীজুড়ে। পাহাড়ের চূড়া থেকে সমুদ্রের তলদেশ, সর্বত্র তার একছত্র অধিকার। মানুষের সভ্যতার চাকায় অন্যান্য প্রজাতির নাভিঃশ্বাস উঠেছে, একথা আজ সকলেরই জানা। কিন্তু ঠিক কতটা বিপন্ন পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র? সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রে তারই এক ভয়াবহ পরিসংখ্যান তুলে ধরলেন বিজ্ঞানীরা। ‘ফ্রন্টেয়ার্স ইন ফরেস্ট অ্যান্ড গ্লোবাল চেঞ্জেস’ পত্রিকায় প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, পৃথিবীর স্থলভূমির মোট বাস্তুতন্ত্রের মাত্র ৩ শতাংশ মানুষের প্রভাব থেকে মুক্ত। বাকি সমস্ত পৃথিবীই বিপন্ন।
এই প্রথম কোনো গবেষণাপত্রে স্যাটেলাইট প্রেরিত ছবির সঙ্গে ক্ষেত্রসমীক্ষার ফলাফল মিলিয়ে পরিসংখ্যান প্রস্তুত করা হল। এর আগে স্যাটেলাইট প্রেরিত ছবির ভিত্তিতে বিজ্ঞানীদের অনুমান ছিল এখনও ২০ শতাংশ বনাঞ্চল অক্ষত আছে। কিন্তু সেইসমস্ত রিপোর্টে কেবল উপর থেকে দেখতে পাওয়া গাছেদের উপস্থিতিই দেখা হয়েছে। তার নিচে ছোট উদ্ভিদ এবং প্রাণীবাস্তুতন্ত্র যে ভিতরে ভিতরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তা স্যাটেলাইটে ধরা পড়েনি। এমনটাই জানাচ্ছেন গবেষণাদলের প্রধান তথা কেম্ব্রিজের বায়োডাইভার্সিটি এরিয়াস সেক্রেটারি ডঃ অ্যান্ড্র্যু প্লাম্পটার। এই সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখেই তিনি নানা সময়ের ক্ষেত্রসমীক্ষার রিপোর্ট মিলিয়ে দেখতে শুরু করেছিলেন। দেখা গিয়েছে আমাজন, কঙ্গো সহ যেসমস্ত বৃষ্টি-অরণ্যকে মানুষের প্রভাবমুক্ত বলে দাবি করা হয়েছিল, সেখান থেকে অনেক প্রাণী ও উদ্ভিদই হারিয়ে গিয়েছে। আর তার প্রধান কারণ চোরাশিকার এবং বে-আইনি বৃক্ষচ্ছেদন।
এর মধ্যেই চলতি দশককে প্রাণী ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ দশক হিসাবে ঘোষণা করেছে জাতিপুঞ্জ। জানুয়ারি মাসের সম্মেলনে বিশ্বের ১৫৩টি দেশ ঠিক করেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ৩০ শতাংশ প্রজাতিকে বিপদমুক্ত করে তোলা হবে। তবে এইসমস্ত আলোচনায় শুধু সেইসব প্রজাতির কথাই উঠে আসছে, যারা বিপন্ন হলেও এখনও টিকে আছে। কিন্তু কিছুদিন আগেও আমাজন, কঙ্গো সহ আরও নানা অরণ্যে যাদের দেখা মিলত, তাদের ফিরিয়ে আনার কথা ভাবা হচ্ছে না। তাই আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন ডঃ প্লাম্পটার। তবে এই গবেষণাপত্র যদি সচেতনতা তৈরি করতে পারে, তাহলে আশা আছে বলেই মনে করছেন তিনি। বিশেষ করে হাতি, জলহস্তীর মতো বড়ো প্রাণীদের ফিরিয়ে আনা গেলে সেইসঙ্গে আরও অনেক প্রজাতিই সুরক্ষিত থাকবে। তার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত পরিকল্পনা। এক দশকের মধ্যে অন্তত ২০ শতাংশ ভূখণ্ডকে প্রকৃত অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া অসম্ভব নয় বলেই মনে করছেন তিনি।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
নেদারল্যান্ডসের আয়তনের সমান বনভূমি হ্রাস ২০২০-তে, জানাচ্ছে সমীক্ষা