একসময় স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক ছিলেন সামসুদ্দিন। এখনও মাঝে মাঝেই কচিকাঁচাদের ডেকে নেন। তারপর শুরু হয় এক আজব ক্লাস। কখনও পড়ুয়াদের সঙ্গে নিজেই জলের মধ্যে নেমে যান সামসুদ্দিন। একসঙ্গে চলে গাছ লাগানো। আবার সমুদ্রের ধারে ম্যানগ্রোভ বনভূমির কী প্রয়োজনীয়তা, তাও ছবির মতো করে বুঝিয়ে দেন সামসুদ্দিন। সপ্তাহে অন্তত তিনদিন বসে এই ক্লাস। সারা পৃথিবী জুড়ে যখন বনভূমি ফুরিয়ে আসার কথা শোনা যাচ্ছে, তখন এমনই এক স্বপ্নের জন্ম দিচ্ছেন ইন্দোনেশিয়ার এই স্কুলশিক্ষক।
প্রথম প্রথম গ্রামবাসীরা কেউ সামসুদ্দিনের কাজকে পাত্তা দেননি। ম্যানগ্রোভ অরণ্যকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন সামসুদ্দিন। তারপর একদিন ঠিক করলেন, বয়স্কদের নিয়ে নয়, দল বানাবেন কচিকাঁচাদের নিয়েই। তাদের হাত দিয়েই তৈরি হবে সবুজ পৃথিবী। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই শুরু হল ক্লাস। ছোটোদের কাছে পরিবেশের বৈচিত্র তুলে ধরতে সামসুদ্দিন নিজের হাতে বানালেন নানা জন্তুর পুতুল। তারপর তাদের নিয়ে যেন রীতিমতো খেলার আসরই বসে গেল।
এর মধ্যেই দেখা গেল নগ্ন উপকূলে ম্যানগ্রোভের চাড়া পুঁতছে সামসুদ্দিনের ক্ষুদে বাহিনী। ওদের সঙ্গেই জল-কাদা মেখে হাজির সামসুদ্দিন। প্রায় ৩ বছর ধরে ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সি ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই কাজ করে চলেছেন তিনি। আর ইতিমধ্যে প্রায় ৭০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে নতুন করে গড়ে তুলেছেন বনভূমি।
ইন্দোনেশিয়ার বুকেই রয়েছে পৃথিবীর মোট ম্যানগ্রোভ অরণ্যের ২০ শতাংশ। তবে প্রতি নিয়ত তার পরিমাণ কমেই আসছে। সরকারি সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ২৪ শতাংশ ম্যানগ্রোভ বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। আর তার প্রধান কারণ বে-আইনি বৃক্ষচ্ছেদন। সামসুদ্দিন কাজ শুরু করেছেন একেবারে নিজের গ্রাম থেকে। তবে ইতিমধ্যে তাঁর কাজের প্রভাব পড়েছে জাতীয় স্তরেও।
আরও পড়ুন
নিধন রুখতে বৃক্ষ-আলিঙ্গন মহিলাদের, উত্তরাখণ্ডে ‘চিপকো আন্দোলনে’র ছায়া
সামসুদ্দিনের কাজের কথা শুনে নড়েচড়ে বসেছে ইন্দোনেশিয়ার বনবিভাগ। ম্যানগ্রোভ অরণ্য রক্ষার জন্য তৈরি হয়েছে বিশেষ ফোর্স। ঠিক কোন কোন অঞ্চলে বনভূমি বিপদগ্রস্ত, তা চিহ্নিত করার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। অবশ্য তাতে দেখা গিয়েছে মোট ৩৩ লক্ষ হেক্টর বনভূমির মধ্যে ১৮ লক্ষ হেক্টরই বিপদগ্রস্ত। এই কঠিন সময়ে আশা জাগিয়ে রাখে সামসুদ্দিন আর তাঁর ক্ষুদে বাহিনী।
আরও পড়ুন
২৪ বছরে ১১ হাজার বৃক্ষরোপণ, রুক্ষ উপত্যকায় সবুজ বিপ্লব ‘ঠাকুরদা’র
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
কন্যাজন্মের আনন্দে ১১১টি বৃক্ষ রোপণ, এমনই রীতি রাজস্থানের গ্রামে