প্রান্তিক কৃষকদের কাছে স্মার্ট-পরিষেবা পৌঁছে দিচ্ছে চলমান কিয়স্ক

তিন চাকার মোটরচালিত যানটি তৈরি অনেকটা টোটোর আদলেই। তবে যাত্রীদের বসার জায়গায় সেখানে রয়েছে চতুর্দিক ঢাকা ছোট্ট একটি কেবিন। দেয়ালে লেখা ‘দ্য কিষান ইউনিয়ন’। আর তার মধ্যেই কম্পিউটার, প্রিন্টার, ওয়াইফাই নিয়ে আস্ত একটা অফিসের জোগাড়। আর এসব চালিত হয় সৌরশক্তিতে। অন্ধ্রপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম অনুমপল্লিতে গেলে দেখা মিলবে এই অদ্ভুত যানের। না, কোনো সরকারি উদ্যোগ নয়। এই চলমান কিয়স্ক দুই তরুণ শিক্ষার্থীর আয়োজন। 

প্রযুক্তির দৌলতে এখন ‘ডিজিটাল’ হয়েছে ভারত। বাড়িতে বসেই এখন এক ক্লিকেই যেকোনো সরকারি পরিষেবা পেতে পারেন গ্রাহকরা। দেশের সরকার অন্তত বলছে তেমন কথাই। কিন্তু বাস্তব দৃশ্যটা একেবারেই আলাদা। শহরের মানুষদের এই সুবিধা থাকলেও, প্রান্তিক গ্রামবাসীরা রয়ে গেছেন সেই অন্ধকারেই। ইন্টারনেট পরিষেবা তো দূরের কথা, ন্যূনতম স্মার্টফোনের ব্যবহারের সঙ্গেও অনেকে পরিচিত নন। ফলত, সরকারি প্রকল্পের সুযোগ থাকলেও তা থেকে বঞ্চিত হন গ্রামীণ কৃষকরা। এমনকি ব্যাঙ্কের সুবিধা পেতে গেলেও তাঁদের অতিক্রম করতে হয় মাইল দশেক পথ। 

বছর কয়েক আগে অনুমপল্লিতে একটি সমীক্ষা করতে গিয়ে এই দৃশ্যটাই ধরা পড়েছিল অন্ধ্রের ছাত্র নিখিল মুক্কাওয়ারের চোখে। সমস্যার সমাধান করতেই এই চলমান কিয়স্ক তৈরির কথা মাথায় আসে সিঙ্গাপুরের নানিয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিখিলের। সহপাঠী হো কিং এনের সঙ্গে জুটি বেঁধে বছর খানেকের মধ্যেই তিনি বাস্তবায়িত করেন সেই নীল-নকশা। সৌরশক্তি চালিত তাঁদের প্রথম কিয়স্কটি চালু হয় ২০১৯ সালে। 

তবে কিয়স্ক তৈরি করলেই তো সমস্যার সমাধান হবে না। সেই ‘অফিস’ চালানোর জন্য প্রয়োজন মানবশক্তিরও। কিন্তু প্রান্তিক গ্রামে এই অফিস চালনার লোক কই? ইন্টারনেটের সঙ্গে যে সড়গড় নন কেউই। সেই সমস্যা মেটাতে গ্রামের দুই পড়ুয়াকে কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক কাজকর্মের প্রশিক্ষণ দিলেন নিখিলরা। বর্তমানে তাঁরাই দায়িত্ব নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন এই কিয়স্ক। তাঁদের জন্য মাসিক বেতনও ধার্য করেছেন সিঙ্গাপুরের দুই প্রযুক্তিবিদ।

আরও পড়ুন
বাংলার কৃষকদের কথা তুলে ধরতে প্রকাশিত ‘আমাদের চাষের কাগজ’

অন্ধ্রপ্রদেশের এই চলমান কিয়স্কই এখন রীতিমতো ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রত্যন্ত এই গ্রামের কৃষকদের কাছে। যেকোনো সরকারি প্রকল্পের জন্য অ্যাপ্লিকেশনই হোক কিংবা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে কৃষিজাত পণ্যের বিক্রি— সমস্ত সরকারি পরিষেবাই এই স্মার্ট কিয়স্কে পান গ্রামীণ কৃষকরা। গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা ন্যূনতম মূল্যে প্রিন্ট আউটের সুবিধাও পান এই কিয়স্কে। ব্যাঙ্কের সঙ্গেও বর্তমানে গাঁটছড়া বেঁধে কিয়স্কে এটিএম মেশিনও সংযোজন করেছেন নিখিলরা। ফলে মিলছে নগদ অর্থ উত্তোলন কিংবা অর্থ জমা দেওয়ার সুযোগ-সুবিধাও। 

আরও পড়ুন
বিক্ষোভে উত্তাল কৃষকরা, ভারতবাসীর স্বাদ ‘আমুল’ পাল্টে দিলেন ত্রিভুবনদাস

দুই শিক্ষার্থীর এই উদ্যোগে প্রতি মাসে উপকৃত হন প্রায় ৮০০-র বেশি গ্রামবাসী। অন্ধ্রপ্রদেশের এই মডেল সফল হওয়ার পর, ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে তেলেঙ্গানার সাধনগরেও একই ধরনের আরও একটি কিয়স্ক তৈরি করে ফেলেছেন নিখিলরা। তবে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির জন্য সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে পরিষেবা। তবে এখানেই থেমে থাকছেন না অন্ধ্রের তরুণ উদ্ভাবক। নিখিলের পাখির চোখ এখন সমগ্র ভারতের গ্রামীণ অঞ্চলগুলিকে এহেন পরিষেবার সঙ্গে সংযুক্ত করে ফেলা। আর সামান্য সামর্থ্য নিয়েই সেই লক্ষ্যের পৌঁছানোর দিন গুনছেন তিনি… 

আরও পড়ুন
কীটনাশক ব্যবহারে বাধ্যতামূলক ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন, কেন্দ্রের ‘হুকুমে’ বিপদে কৃষকরা

Powered by Froala Editor