রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন এক ব্যক্তি। হঠাৎই যেতে যেতে এক পথযাত্রী তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘দ্য অ্যালকেমিস্টের কাছে কীভাবে পৌঁছাব?’ সাগ্রহে দোকানির প্রত্যুত্তর, ‘হাড্রেড ইয়ারস অফ সলিটিউড শেষ করে দ্য গ্রিন মাইল। তারপরেই দ্য অ্যালকেমিস্ট!’ কী ভাবছেন? নিশ্চয়ই এই কথোপকথন দুই বইপগলের, নয় তো নিতান্তই হেঁয়ালি? না, কোনোটাই নয়। ‘দ্য অ্যালকেমিস্ট’, ‘হান্ড্রেড ইয়ারস অফ সলিটিউড’ বা ‘দ্য গ্রিন মাইল’— এসবই রাস্তার নাম।
কথা হচ্ছে পশ্চিম-মধ্য ইরানের হামাজান প্রদেশের ছোট্ট শহর তাজবাদ সোফলাকে নিয়ে। স্থানীয় মানুষদের কাছে অবশ্য রসুলবাদ বলেই পরিচিত এই জনবসতি। গোটা অঞ্চলজুড়ে সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে বিশাল বিশাল মধ্যযুগীয় স্থাপত্য, নির্মাণ। ছোটো ছোটো টিলার মাঝখান দিয়ে চলে গেছে ছবির মতো রাস্তা। দু’ধারে বিস্তীর্ণ সবুজ তৃণভূমি। এমন জায়গা পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণ হবে— তাতে আর নতুন কী? কিন্তু এলাকাবাসীদের জন্যেও অঞ্চলটির বেশ আন্তর্জাতিক খ্যাতি রয়েছে। ঠিক কেমন?
জনসংখ্যা একেবারে অল্প হলেও, গ্রামের সকলেই আদ্যন্ত বইপাগল। শুধু ইরানি কিংবা আরবি নয়— সমস্ত ভাষার বই-ই সমান প্রধান্য পায় এই ছোট্ট জনবসতিতে। হাতে গোনা কয়েকটি পরিবারের জন্য রয়েছে একটা আস্ত লাইব্রেরিও। সেখানে রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের, বিভিন্ন ভাষার প্রায় ৬ হাজার বইয়ের সংগ্রহ। ভাঁটা পড়ে না পড়ুয়াদের ভিড়েও। আর পর্যটকরা?
তাঁদেরকেও বইপ্রেমী করে তুলতেই অভিনব এক উদ্যোগ নিয়েছিল গ্রামবাসীরা। বছর দুয়েক আগের কথা। ২০১৯ সালে রসুলবাদের বাসিন্দারা ঠিক করেছিল গ্রামের সমস্ত রাস্তার আবার নতুন করে নামকরণ করা হবে। আর সেই নাম হবে বিশ্ববিখ্যাত বিভিন্ন বইয়ের নামে। কিন্তু বিশ্বের সেরা সাহিত্যের তালিকা প্রস্তুত করা তো মুখের কথা নয়। প্রত্যেকের পছন্দ যে ভিন্ন ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক। এতএব উপায়? শেষ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাভুটির মাধ্যমেই ঠিক করা হয় ৩০টির রাস্তার নাম। এবং আশ্চর্যের বিষয় কোনো না কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট গল্পের চরিত্রের সঙ্গে বাস্তবিক মিল রয়েছে রাস্তাগুলির।
তার মধ্যে রয়েছে পার্সি কবি শেখ সাদির ‘গুলিস্তাঁ’ ও ‘বোস্তা’, পাওলো কয়েলহোর ‘দ্য অ্যালকেমিস্ট’, স্টিফেন কিং-এর ‘দ্য গ্রিন মাইল’, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘হান্ড্রেড ইয়ারস অফ সলিটিউড’, ফরাসি সাহিত্যিক অ্যান্টোনিও দে সেন্টের ‘দ্য লিটল প্রিন্স’-সহ একাধিক বিশ্বমানের সাহিত্যগ্রন্থ।
রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বঙ্কিমচন্দ্র, কিংবা শরৎচন্দ্রের মতো খ্যাতনামা সাহিত্যিকদের নামে একাধিক রাস্তার নামকরণ হয়েছে বাংলাতে। ইউরোপ, আমেরিকা কিংবা পৃথিবীর অন্যত্র যে কোনো জায়গায় গেলেই দেখা যাবে এই রীতি। কিন্তু গ্রন্থের নামে রাস্তার নাম? গোটা বিশ্বে এমন দ্বিতীয় উদাহরণ খুঁজে পাওয়া দুর্লভই বলা চলে…
Powered by Froala Editor