“পড়াশোনা করে ঠেলাগাড়িতে কাবাব বিক্রি করবি?’ পরিচিত মানুষদের কাছ থেকে এমন বিদ্রুপ তো শুনতে হয়েছেই। তার সঙ্গে ছিল বহু মানুষের বিরোধিতা। কখনও স্থানীয় ক্লাব এসে আপত্তি জানাচ্ছে, তাদের পাড়ায় গাড়ি নিয়ে বসা যাবে না। স্থানীয় দোকানদার, আবাসিকরা এসে তুলে দিচ্ছেন আমাদের। তার মধ্যেও দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে গিয়েছি। একটাই স্বপ্ন ছিল, এখনও আছে, আমাদের এই উদ্যোগ নিয়ে সারা কলকাতা এমনকি সারা পশ্চিমবঙ্গের বুকে ছড়িয়ে পড়ব একদিন।” বলছিলেন হ্যাংলার আড্ডা-র প্রতিষ্ঠাতাদের একজন, অঙ্কুর তরফদার।
শুরুটা হয়েছিল গতবছর বড়োদিনের দিন। করোনা পরিস্থিতিতেও ২৫ ডিসেম্বর রাস্তায় নেমেছিলেন বহু মানুষ। আর কলকাতার রাস্তাকে কি স্ট্রিট ফুড ছাড়া কল্পনা করা যায়? সেইদিনই ৪ বন্ধু মিলে গাড়ি সাজিয়ে নেমে পড়েছিলেন কাবাব বিক্রি করতে। অঙ্কুর তরফদার, সায়ন্তন কুন্ডু, সায়ন সাহা, দীপ দাস। কেউ বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক, কেউ এমবিএ করেছেন। আবার কেউ কলেজের পড়াশোনা সম্পূর্ণ করেননি। ৪ জন বন্ধুর মধ্যে মিল একটা জায়গাতেই, প্রত্যেকেই নতুন কিছু করতে চেয়েছিলেন। অঙ্কুর বলছিলেন, “আমাদের অনেকেই বলেছেন, বাজারে তো নানা ধরণের চাকরি। প্রয়োজনে সেলসের কাজও করতে পারিস। কিন্তু ঠেলাগাড়িতে ব্যবসা করবি? আমরা শুধু একটা কথাই নিজেদের বুঝিয়েছি। এটা তো শুরু। পরিশ্রমের জোরেই একদিন আমরা ঠিক সফল হব।” আর এই কয়েকমাসের মধ্যেই সেই সাফল্যের সিঁড়িতে একটু একটু করে এগিয়ে যেতে শুরু করেছেন তাঁরা। ঠেলাগাড়ি থেকে যে ব্যবসা শুরু হয়েছিল, আজ বেহালার বুকে দুটি দোকানঘর খুলে ফেলেছেন তাঁরা। একটি মিত্র সঙ্ঘ ক্লাবের কাছে। অন্যটা অজন্তা সিনেমা হলের উল্টোদিকে।
আরও পড়ুন
ভালো কাজ করলেই বিনামূল্যে খাবার, দিনবদলের স্বপ্ন দেখাচ্ছে ঢাকার হোটেল
ঠেলাগাড়ি থেকে দোকানঘর, এরপর আস্ত রেস্তোঁরা খুলে ফেলারও পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। অঙ্কুরের কথায়, “আমরা শুধু এই অতিমারী পরিস্থিতিতে ভিড় বাড়াতে চাইছি না। তাই বসে খাওয়ার ব্যবস্থা চালু করিনি। তবে খুব তাড়াতাড়ি সেই ব্যবস্থাও শুরু হয়ে যাবে।” এই কয়েকমাসের মধ্যেই ক্রেতারা যে তাঁদের খাবারকে আপন করে নিয়েছেন, তার জন্য ধন্যবাদ জানাতেও ভোলেননি অঙ্কুর। “এই কয়েকমাসে ছোটখাটো অর্ডার তো রোজ লেগেই রয়েছে। তার সঙ্গে নানা অনুষ্ঠানে মানুষ আমাদের ডেকেছেন। আমাদের খাবার তাঁদের ভালো লেগেছে বলেই বারবার খোঁজ করেছেন। আর মানুষের এই ভালোবাসাকে সঙ্গী করেই আমাদের ব্যবসা এগিয়ে যাবে আশা রাখছি।” পাশাপাশি অঙ্কুর বলছিলেন, “আমরাও আমাদের দিক থেকে সবটুকু দিয়ে মানুষের রসনাকে তৃপ্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। হয়তো গ্যাস বা ইলেক্ট্রিক চুল্লিতে রান্না করলে তাড়াতাড়ি হয়, কিন্ত কাবাবের খাঁটি স্বাদ বজায় রাখতে আমরা এখনও কাঠকয়লাতেই রান্না করছি। ক্রেতাদেরও সবিনয়ে জানাচ্ছি, ভালো জিনিস পেতে গেলে একটু তো সময় দিতেই হবে।”
আরও পড়ুন
‘ফুচকাওয়ালা’র পরিচয়েই দিনবদলের লড়াই খড়দার ইঞ্জিনিয়ার ভাই-বোনের
আরও পড়ুন
বিক্রি তলানিতে, তবু পুতুল শিল্পকে আঁকড়েই দিনবদলের অপেক্ষায় নতুনগ্রাম
কাবাব এবং তন্দুরীর পাশাপাশি পোলাও-বিরিয়ানি চিকেন এবং মাটন কষা, চাপ সবকিছু নিয়েই হ্যাংলার আড্ডায়। অবশ্য এখন প্রতিদিনের অর্ডার সামলানোর তাগিদে কেবলমাত্র কাবাব এবং তন্দুরীতেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন খাদ্যতালিকা। তবে দোকানের পরিসর বাড়লে, ব্যবসা আরও এগিয়ে চললে বাড়বে খাদ্য তালিকাও। এভাবেই বাঙালির রসনাকে তৃপ্ত করার স্বপ্ন সফল হয়ে উঠুক বাংলার দামাল ছেলেদের।
Powered by Froala Editor