কয়েকদিন আগেই এক আশ্চর্য পরিস্থিতির সাক্ষী থেকেছে গোটা দেশ। লকডাউনের মধ্যেই সরকারি নির্দেশ মেনে শহরের লিকার-শপগুলি খুলতে না খুলতেই তার সামনে দাঁড়িয়ে যায় ক্রেতাদের বড়োসড়ো একটি লাইন। আর সেই লাইনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো চেষ্টাই ছিল না। এতদিন পর নেশার দ্রব্য পাবেন হাতের নাগালে, এই আগ্রহটাই তো সবচেয়ে বড়ো। এর কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল শহরের ফুড-ডেলিভারি অ্যাপগুলির মাধ্যমেই লিকার সংগ্রহ করতে পারছেন ক্রেতারা। এই অভিনব ব্যবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই খুশি শহর কলকাতার পান-বিলাসী মানুষ। কিন্তু এভাবে লিকার ডেলিভারির ঘটনা কিন্তু এদেশে এই প্রথম নয়। বছর তিনেক আগে চেন্নাইয়ের একটি কোম্পানি সেই কৃতিত্বের দাবিদার হয়ে ওঠে। সেইসঙ্গে কুড়িয়েছে প্রশংসা এবং বিতর্ক দুইই।
২০১৭ সালের জুন মাসে বাজারে আত্মপ্রকাশ করে 'হিপবার' নামের এই লিকার ডেলিভারি কোম্পানি। চেন্নাইয়ের প্রসন্ন নটরাজনের এই অভিনব উদ্যোগ সাড়া ফেলে দিয়েছিল রাতারাতি। মাত্র মাস খানেকের মধ্যেই কেরালা এবং তামিলনাড়ুর প্রায় ২.৫ লক্ষ মানুষ এই সংস্থার গ্রাহক হয়ে ওঠেন। আইফোন এবং অ্যান্ড্রয়েড, উভয় মাধ্যমেই ক্রেতারা এই সুবিধা পেতে পারতেন। যদিও প্রথম থেকেই বয়সের ব্যাপারে কড়া যাচাই পদ্ধতি মেনে চলেছে হিপবার। কোনোভাবেই যেন যান্ত্রিক গাফিলতির ফাঁক দিয়ে অপ্রাপ্তবয়স্কদের হাতে চলে না যায় নেশার সামগ্রী, সেদিকে কড়া নজর ছিল কোম্পানির। কিন্তু বিতর্ক তাতেও পিছু ছাড়েনি। এক সময় মামলা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। আর তার ফলে ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে বহুবার ব্যাহত হয়েছে 'হিপবার'এর বিক্রিবাটা।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য কেরালা এবং তামিলনাড়ু সরকারের সঙ্গে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এই কোম্পানির। বিশেষ করে নানা জায়গার আসক্ত মানুষদের চিহ্নিত করতে কোম্পানির ডেটা কাজে লাগিয়েছে সরকার। নেশার সামগ্রী সরবরাহের কাজটাও করা হয়েছে এক্সাইজ ডিপার্টমেন্টের নজরদারির মধ্যেই। এমনকি এপ্রিল মাস নাগাদ লকডাউনের মধ্যেও লিকার ডেলিভারির পরিকল্পনা প্রথম নিয়ে আসে 'হিপবার'ই। লকডাউনের ফলে বহু আসক্ত মানুষ প্রায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। উইথড্রয়াল সিম্পটম দেখা দেয় অনেকের শরীরে। দেশজুড়ে ৭ জন মানুষ আত্মহত্যাও করেছেন। এই পরিস্থিতিতে কেরালা সরকার উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলে এগিয়ে আসে 'হিপবার'। হিপবার মানে হল, 'দ্য বার ইন দ্য ক্লাউড'। ফলে চাহিদাও বাড়ছে দিনকেদিন। অ্যাপের মাধ্যমে সুরা পাওয়ার সুযোগ কেই বা হাতছাড়া করতে চায়!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
করোনা সংক্রমণ রুখতে নয়া প্রযুক্তি, বার-ক্যাফের দায়িত্ব এখন রোবটের হাতে