২২৪ বছর আগে প্রচলন ভ্যালেন্টাইন কার্ডের, প্রাচীনতম নমুনায় লুকিয়ে অভিমানের গল্প

সদ্য চলে গেল ভ্যালেন্টাইন’স ডে। এখনও রেশ কাটেনি তার। আর ভালোবাসার এই দিনে প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যে কার্ড চালাচালির প্রথা আজ সুবিদিত। কিন্তু কবে থেকে চালু হয়েছিল এমন ভ্যালেন্টাইন কার্ডের প্রচলন? ইতিহাস বলে, ১৭৯৭ সালে প্রথম ছাপা হয়েছিল ভ্যালেন্টাইন কার্ড। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এল ওই বছরেই ব্যবহৃত একটি কার্ডে লুকিয়ে থাকা প্রেমের গল্প।

নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে, কী লেখা রয়েছে সেই ছাপা কার্ডের মধ্যে? কে-ই বা তার প্রেরক? সেই গল্পে যাওয়ার আগে, এই কার্ডের মুদ্রকের সম্পর্কে দু’-এক কথা না বললেই নয়। ১৯৭৯ সাল, প্রথমবারের জন্য লন্ডনের মাইনরিসে ছাপা হল বেশ কিছু অভিনব কার্ড। এক প্রকার চিঠিই, তবে তার বয়ান পূর্ব-মুদ্রিত। আর সবটার পিছনেই লুকিয়ে ছিলেন ব্রিটিশ শিল্পী এবং মুদ্রক জন ফেয়ারবার্ন। একটি-দুটি নয়, বেশ কয়েকটি এই ধরণের ভিন্ন নকশার ও বয়ানের কার্ড ছাপিয়েছিলেন তিনি তরুণ প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য। 

১৭৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি প্রকাশ্যে আসে সেই কার্ড। বলাই বাহুল্য তৎকালীন সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল সেটি। সেই থেকেই ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র সঙ্গে জুড়ে যায় এই কার্ড চালাচালির প্রথা। ২২৪ বছর আগে ফেয়ারবার্নের তৈরি সেই কার্ডই কিনেছিলেন ব্রিটিশ যুবতী ক্যাথরিন মোসডে। তবে নিজের ঠিকানা গোপন রেখেই সেই কার্ড তিনি পাঠিয়েছিলেন ভালোবাসার মানুষ ‘ব্রাউন’কে।

তবে ভ্যালেন্টাইন’স কার্ডের প্রাচীনতম এই নমুনায় ধরা পড়েনি কোনো উদযাপন। বরং তার মধ্যে মিশে রয়েছে এক অদ্ভুত মনখারাপ, এক বিষণ্ণতা। না, শুধু ছাপা হরফ নয়। তার পাশাপাশি নিজেও বেশ কিছু কথা লিখে পাঠিয়েছিলেন ক্যাথরিন। বা বয়া ভালো, উগরে দিয়েছিলেন অভিমান।

আরও পড়ুন
প্রেম-পীরিতি ছেড়ে, বাঙালি ‘ভালোবাসতে’ শিখল কবে থেকে?

ক্যাথরিনের সেই চিঠি থেকেই বোঝা যায়, বেশ কিছুদিন ধরেই আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন না ব্রাউন। বার বার দেখা করার অনুরোধ করার পরেও তাতে সম্মতি দেননি ব্রাউন। সেই দুঃখ থেকেই কার্ডটি পাঠিয়েছিলেন ক্যাথরিন। জানতে চেয়েছিলেন যুক্তিযুক্ত কারণ। সেইসঙ্গে অনুরোধও ছিল তার পরের রবিবার সামান্য প্রেমালাপের। কিন্তু চিঠির শেষে আজকের মতো ঐতিহ্যবাহী ‘তোমার ক্যাথরিন’ কিংবা ‘তোমার ভালোবাসা’-জাতীয় কোনো শব্দের ব্যবহার লক্ষ করা যায়নি এই চিঠিতে।

আরও পড়ুন
ভালোবাসাই তাঁদের কাছে আসল ধর্ম; তবুও পূর্ণতা পেল না দেব আনন্দ-সুরাইয়ার প্রেম

এই গল্পের পরিণতি কি হয়েছিল শেষ পর্যন্ত তা জানা নেই। তা না জানতে পারাই ভালো। তবে প্রাচীনতম ব্যবহৃত ভ্যালেন্টাইন কার্ডের এই নমুনা চাইলেই দেখা আসতে পারেন নিউ ইয়র্ক যাদুঘরে। চিঠির সঙ্গে কার্ডে আটকানো ক্যাথরিনের একটি ছবিও নজর কাড়বে নিশ্চিতভাবে।

আরও পড়ুন
ভালোবাসা তাঁকে ‘ভিখারি’ করেছে, শেষ জীবনে মুদির দোকান খুলেছিলেন কমল দাশগুপ্ত

মাত্র ৭ বছর আগে উদ্ধার হয়েছিল কার্ডটি। তারপর ২০১৯ সালে হস্তান্তরিত হয়। নিলামে দাম উঠেছিল প্রায় ৭ হাজার ইউরো। ইয়র্ক মিউজিয়ামের কিউরেটর হেলেন থর্টনের মতে, শুধু ইতিহাসের প্রমাণই নয়, সেই সঙ্গে তৎকালীন সময়ের শিল্প, নকশা এবং সমাজের ব্যাপারেও স্পষ্ট ছবি তুলে আনে প্রাচীনতম এই নমুনা। যার কারণে এই কার্ডের গুরুত্ব অপরিসীম। এককথায়, যেন এই কার্ড যেন স্বয়ং টাইম মেশিন…

Powered by Froala Editor

Latest News See More