চাইলে শেক্সপিয়রও নিউটন হতে পারেন, অঙ্ক কষে দেখিয়ে দিলেন মাইকেল মধুসূদন

একসময় সমস্ত ইউরোপীয় আদব কায়দার প্রতি ছিল তাঁর অমোঘ আকর্ষণ। ধর্মও পরিবর্তন করেছিলেন। পরে সেই সবকিছু ছেড়ে আবার বাংলার কাছে ফিরে এসেছিলেন তিনি। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। বাংলার সাহিত্য আকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ঘটনাবহুল জীবন তাঁর। একসময় শুধু শেক্সপিয়রের মান রাখতে অঙ্ক বেছে নিয়েছিলেন তিনি। শুধু বেছে নেওয়াই নয়, সকলের সেরাও হয়েছিলেন।

হিন্দু কলেজের (বর্তমান প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন মধুসূদন। তখনও নামের আগে ‘মাইকেল’ বসেনি। অবশ্য ততদিনে ইউরোপীয় সংস্কৃতির প্রতি তীব্র প্রেম শুরু হয়ে গেছে ইয়ং বেঙ্গল দলের এই অসম্ভব মেধাবী সদস্যের। এমনই এক সময় কলেজে আয়োজন করা হল একটি প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার। স্ত্রীশিক্ষা বিষয়ে ইংরেজিতে লিখতে হবে। অংশ নিতে পারবে শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্ররাই। কিন্তু দেখা গেল, কেউই প্রায় নাম লেখায়নি। ভাল ছাত্ররা তো লেখায়ইনি। বন্ধু ভূদেব এসে অনেক করে বোঝান মধু-কে। অনেক বলার পর রাজিও হন তিনি। প্রতিযোগিতার শেষে দেখা গেল, মধুসূদনই প্রথম হয়েছে। ভূদেব দ্বিতীয়।

লেখালেখি, কবিতার নেশা ততদিনে ঢুকে গেছে তাঁর মধ্যে। গোগ্রাসে গিলছেন ইংরেজি ও অন্যান্য বিদেশি ভাষার বইগুলো। শুধু এসব পড়লেই তো পাশ করা যাবে না! অঙ্কটাও তো করতে হবে! হিন্দু কলেজের মিঃ রিজের অঙ্কের ক্লাসে মধুসূদন শেক্সপিয়র নিয়ে বসে থাকেন। আর না পেরে একদিন বলেই বসলেন বন্ধু ভূদেব। নিউটন যে ইচ্ছা করলে শেক্সপিয়র হতে পারেন, উল্টোটা যে কখনই ঘটবে না, সেটা দৃঢ় স্বরে জানালেন মধু-কে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নাট্যকারকে এমন অপমান! ভেতরে ভেতরে সেদিন থেকেই অঙ্কের প্রস্তুতি শুরু করলেন তিনি। ভুলেও বুঝতে দিলেন না বাকিদের।

একদিন ক্লাসে একটি কঠিন অঙ্ক কষতে দিলেন রিজ সাহেব। এমনই জটিল সেই সমস্যা, কেউ সমাধানই করতে পারছিল না। ব্যাতিক্রম একজন। মধুসূদন দত্ত। অঙ্ক একফোঁটাও পছন্দ না করা মধু অবলীলায় শেষ করলেন সেই সমস্যা। মুগ্ধ হলেন রিজ সাহেব। অবাক হলেন ভূদেবও। বন্ধুর দিকে তাকিয়ে মধুসূদন হাসলেন। শেক্সপিয়রও যে চাইলে নিউটন হতে পারেন, সেটাই করে দেখালেন তিনি।

সেইসঙ্গে আরও একটা কথা বন্ধুকে জানিয়ে এসেছিলেন তিনি। অঙ্কের এই যাত্রা তাঁর নিজের যাত্রা নয়। এখানেই শেষ অঙ্কের সঙ্গে তাঁর সখ্য। কারণ, তিনি কবিতা লিখতে চান। কবি হতে চান। ভাগ্যিস নিজের প্রতি এই বিশ্বাসটি ছিল তাঁর!

ঋণ - পুরনো কলকাতার পড়াশোনা, পূর্ণেন্দু পত্রী

Powered by Froala Editor