আপনার পাশের বাড়ি ছাদে কি ঝামেলার চোটে কাক চিল উঠে যাওয়ার উপক্রম? পাড়ায় কি প্রতিদিন একটা না একটা ঝামেলার লেগে থাকে? ফোন-হোয়াটস্যাপের কচকচিতে কি জীবন বিষময় হয়ে উঠেছে? চিন্তা নেই। চলে যান, ‘মেসার্স ঝামেলা কিনি’ (Messers Jhamela Kini)তে। বিক্রি করে দিন আপনার ঝামেলা, কয়েক হাজার টাকার বিনিময়ে। হাতে টাকাও এল, কপাল থেকে চিন্তার ভাঁজও সরল। এমন সুযোগ ক'জন পায়?
উপরের লেখাটা পড়ে হয়তো কেউ ভেবে ফেলতে পারেন, যে সবটাই মনগড়া। বিজ্ঞাপনটা মনগড়া হলেও, ‘মেসার্স ঝামেলা কিনি’ বহাল তবিয়তে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে। এই বিচিত্র বিপণি থেকে মাস গেলে প্রায় লাখ খানেক টাকা আয় করেন মালিক সায়েম আহমেদ। কিন্তু এই দোকানে কি আদৌ ঝামেলা বিক্রি হয়? আক্ষরিক অর্থে না। তবে একঅর্থে তো বটেই। তবে আর রহস্য না বাড়িয়ে কাজ নেই। সত্যিটা হল, এখানে পুরোনো ফার্নিচার সহ কম্পিউটার, টিভি, ফ্রিজ প্রভৃতি কেনা-বেচা চলে। শহরে বাড়ি বদল করতে চাইলে ‘ঝামেলা’ হয়ে দাঁড়ায় পুরোনো আসবাবপত্র। দিয়ে-থুয়ে সেগুলির সদগতি সহজে করা যায় না। ফলে সেই ঝামেলা দূর করার জন্যই এগিয়ে এসেছে, ‘মেসার্স ঝামেলা কিনি।’ পুরোনো আসবাব কেনার পর সেগুলি মেরামত করে বিক্রি করা হয় এই দোকান থেকে।
ডিগ্রি প্রথম বর্ষে পড়তে পড়তে বাবাকে হারিয়েছিলেন সায়েম। ফলে অনটনের সংসারের হাল ধরতে পড়াশোনা বিসর্জন দিতে হল। সায়েম স্থির করেছিলেন, ব্যবসা করবেন। ভাবতে ভাবতে পুরোনো আসবাব কেনা-বেচার আইডিয়া খেলে গেল মাথায়! সায়েমের মতে পুরোনো ফার্নিচার একপ্রকার ঝামেলাই। ফলে সেই ঝামেলা দূরীকরণের জন্যই ২০০০ সালে বলাশপুর মরাখলা এলাকার বাকৃবি সড়কে গড়ে উঠল ‘মেসার্স ঝামেলা কিনি।’
শুরুর দিনগুলিতে এই অদ্ভুত নামের জন্য সায়েমকে যে ভালোই ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল, বলা বাহুল্য। তৎকালীন পৌরসভা ট্রেড লাইসেন্স দিতে নারাজ ছিলেন। এদিকে বহু প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বাড়ির আসবাব-কেনাবেচার সুবাদে সায়েমের নামও ছড়িয়েছিল। ফলে কর্তাব্যক্তিদের সুপারিশে কিছুদিন বাদে মিলেছিল ট্রেড লাইসেন্স।
বর্তমানে রমরমিয়ে চলছে, ‘মেসার্স ঝামেলা কিনি'। সায়েমের পাশাপাশি নিয়মিত সাত আটজন কর্মচারী কাজ করেন। তাদের নূন্যতম মাস-মাইনে ১০ হাজার টাকা। প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার টাকার কেনাবেচা হয় দোকানে। আর মাসে লাভ থাকে প্রায় একলাখ টাকা।
নামে ‘ঝামেলা’ থাকলেও, এই দোকানে খদ্দেরদের মোটেই ঝামেলা পোয়াতে হয় না। এলাকার মানুষ সায়েমের সততার কথা জানেন। কাজেই স্বল্প পুঁজি নিয়ে গড়ে ওঠা ছোট্ট প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ২১ বছরের মধ্যেই যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছে বৈকি।
Powered by Froala Editor