আজ বিচারের রায় বেরোনোর দিন। সকাল থেকে আদালত চত্বরে ভিড় সামলাতে পুলিশ হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিটা মিনিট যেন প্রতিটা ঘন্টা। অবশেষে রায় ঘোষণার চরম মুহূর্ত উপস্থিত হলো। শুধুমাত্র মৃত্যুদণ্ড শোনার অপেক্ষায় উন্মত্ত জনতা দাঁড়িয়ে। বিচারক জানেন রায় ঘোষণা হলেই উল্লাসে সবাই ফেটে পড়বে। আসামিদের দিকে দৃষ্টি ফেরালেন। তাদের বিভিন্ন জনের মুখে বিভিন্ন রকম অভিব্যক্তি। মনে মনে হাসলেন। আসল খেলাটা এবার শুরু হবে।
রায় ঘোষণা হলো। বললেন - "আসামিদের প্রত্যেককে একটি করে বিশেষ আনারস খেতে দেওয়া হবে। যতদিন তারা জীবিত থাকবে ততদিন অন্য কোনও খাবার তাদেরকে দেওয়া হবে না, এমনকি জলও না। যতদিন খুশি সময় নিয়ে তারা এটি খেতে পারে। তারপর নিকটবর্তী পুকুরে গিয়ে ঝাঁপ দিতে হবে। ব্যাস, মুক্তি। ঘটনার আরেকবার শুধু পুনরাবৃত্তি চাই।"
কয়েক মুহূর্ত বুঝতে শুধু সময় লেগেছিলো, তাই পরেই উন্মত্ত জনতা উল্লাসে ফেটে পড়লো। সমস্বরে চিৎকার করে উঠলো- তাদের চোখের সামনেই যেন এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করা হয়। যে নৃশংস বিজয়োল্লাসে আসামিরা সামিল হয়েছিল, সেই নৃশংসতার মুখে ফেলে আসামিদের প্রতিক্রিয়া দেখার এতবড়ো সুযোগ কখনো হাতছাড়া করা যায় ? বিচারক মৃদু হেসে সায় দিলেন। আসামিদের আদালত চত্বরের বাইরে পুলিশি প্রহরায় নিয়ে আসা হলো। আগে থেকেই নির্দেশ দেওয়া ছিল। তাই বিশেষ প্রক্রিয়ায় বানানো আনারসগুলি প্রত্যেকের সামনে এনে রাখা হলো। পরের দৃশ্যটি সহজেই অনুধাবন যোগ্য। রসিক পাঠক কল্পনার আলোয় সেটি বেশ উপভোগ করতে পারবেন। আসামিদের আর্ত চিৎকার আর জনতার উল্লাস মিলে মিশে একাকার হয়ে গেলো। জল না খেয়ে যতদিন মানুষ বাঁচতে পারে, বাঁচার লড়াইটা চলতে থাকলো ততোদিন। প্রতিদিন সকালে খবরের কাগজের ওপর মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে খুঁজতো আসামিদের প্রতিক্রিয়ার খবর। অদ্ভুত এক আনন্দ যেন দেশময় ঘুরে বেড়াচ্ছিল। যদিও বিচার একেবারে কাঁটায় কাঁটায় হয়নি, কারণ আসামিদের মধ্যে কেউ অন্তঃসত্তা ছিল না। তা হোক, যা হলো তাই বা কম কি !
আসলে এসব কিছুই ঘটেনি। আদালত, বিচারক, বিচার, রায় - এ সবই নিধিরামবাবুর কল্পনা। সকাল বেলা খবরের কাগজের পাতায় কেরলের মুষ্টিমেয় মানুষের নৃশংসতার খবরটা পড়ে একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেছিলেন। বুঝতে সময় লেগেছিলো। ছয় মাসের অন্তঃসত্তা হস্তিনীর এমন মর্মান্তিক পরিণতি!! অন্যায় দেখলে প্রতিবাদে ঝাঁপিয়ে পড়ার অদম্য ইচ্ছে মনের মধ্যে জেগে উঠতো। কিন্তু ব্যাস, ওই টুকুই। বাস্তবে তা কোনোদিন রূপ পায়নি। আজও তাই। মনে মনে কল্পনা করছিলেন যদি নিজের হাতে ক্ষমতা থাকতো তাহলে আসামিদের এমনিভাবেই তিলে তিলে মারতেন। মনে মনে তাদের ভয়ার্ত, ক্রন্দনরত প্রায় জীবন্মৃত হয়ে যাওয়া প্রতিক্রিয়া গুলো কল্পনা করে বেশ তৃপ্তি বোধ করলেন।
আরও পড়ুন
লকডাউনের গপ্পো ১৪
বাবা মা কেন যে তাঁর এমন একটা নামকরণ করেছিলেন, তা নিধিরামবাবু মাঝে মাঝেই যত বেশি টের পান, ততই যেন কল্পনাশক্তি উদ্ভট রকমের প্রকট হয়ে উঠতে চায়। সাধে কি আর বলে "ঢাল নেই তরোয়াল নেই ... ... ..."
আরও পড়ুন
লকডাউনের গপ্পো ১৩
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
লকডাউনের গপ্পো ১২