প্রযোজনার দায়িত্বে গ্রামবাসীরাই; অসংখ্য রূপকথাকে এক সূত্রে বেঁধে দেয় ‘দুধ পিঠের গাছ’

‘আমাদের গ্রামে সিনেমা বানানো হবে, আর সেই সিনেমার প্রযোজক হতে পারি আমরাই! মাস্টারমশাইয়ের কাছে যেদিন শুনলাম এমন খবর, আনন্দ পেয়েছিলাম খুব। ওঁকে তো চিনি অনেকদিন ধরেই! আড়ংঘাটার কথা জানবে সারা বাংলা, এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে!’

প্রত্যেকের মুখে কমবেশি একই কথা। ‘মাস্টারমশাই’-এর সিনেমা, আমরা পাশে না থাকলে কে থাকবে! হ্যাঁ, ‘দুধ পিঠের গাছ’ সিনেমার পরিচালক উজ্জ্বল বসু ‘মাস্টারমশাই’ হিসেবেই পরিচিত আড়ংঘাটার অনেক গ্রামবাসীর কাছে। হবেন নাই বা কেন! তাঁর জন্ম ওখানে, দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করিয়েছেন সেখানকার স্কুলে। ভালো-মন্দে পাশে থেকেছেন গ্রামবাসীদের। সেই মাস্টারমশাই-এর ডাকে তাঁরা সাড়া দেবেন না, এমন কি হয়!

না, হয়নি। আর হয়নি বলেই জন্ম নিতে পেরেছে এক আস্ত রূপকথা। গ্রামবাসীদের প্রযোজনায় তৈরি একটা আস্ত সিনেমা। একজন-দুজন নয়, প্রায় হাজারজন গ্রামবাসী তুলে দিয়েছেন ২৫ লক্ষ টাকা। কেউ কৃষিজীবী, কেউ আবার লটারির দোকান চালান। জীবনের বেশিরভাগ সঞ্চয় ঢেলে দিতেও কার্পণ্য করেননি কেউ-কেউ।

কীসের এই টান? এমন ভালোবাসা পাওয়াও যে ভাগ্যের ব্যাপার! স্বীকার করেন পরিচালক উজ্জ্বল বসু নিজেও। ‘গোটা গ্রাম যখন এসে দাঁড়িয়েছিল আমার পাশে, সিনেমা তৈরিতে সাহায্য করেছিল, সেদিনই জানতাম, এক ইতিহাস তৈরি হতে চলেছে।’ ইতিহাসই বটে। বাংলায় তো বটেই, ভারতীয় সিনেমাতেও এমনটি আগে ঘটেছে কিনা সন্দেহ। ক্রাউড ফান্ডেড সিনেমার কথা আমরা শুনেছি আগেও। কিন্তু একটা গোটা গ্রামের বাসিন্দা জড়িয়ে একটি সিনেমার সঙ্গে – এমন ঘটনা সম্ভবত নেই আর। 

লকডাউনের বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে, আগামী ২১ অক্টোবর মুক্তি পেতে চলেছে ‘দুধ পিঠের গাছ।’ মুক্তির কথা ছিল সেই এপ্রিলেই। কোভিড এসে পিছিয়ে দিল সব। গ্রামবাসীদের অপেক্ষার সময় দীর্ঘ হল আরও। কিন্তু ভাটা পড়েনি উৎসাহে। তাঁদের মাস্টারমশাইয়ের তৈরি সিনেমা বলে কথা! ‘দুধ পিঠের গাছ’ আসলে একটা স্বপ্নের নাম, যে স্বপ্নকে শেষ করতে পারবে না কেউই।

স্বপ্ন বলেই তো গ্রামের কোনো প্রৌঢ়া শুটিং চলাকালীন প্রত্যেককে নিজের বাড়িতে রেঁধে খাওয়ান প্রত্যেকদিন। নিজের গোলাঘর ছেড়ে দেন দিন-আনি-দিন-খাই চাষি। পরিবেশনার দায়িত্ব নিতে সুদূর বীরভূম থেকে গৌরাঙ্গের নদীয়ায় ছুটে আসেন শ্যামসখা। কণ্ঠ দেন কিংবদন্তি অনাথবন্ধু ঘোষ। এসব যদি আশ্চর্য না হয়, তাহলে চলচ্চিত্র-নির্মাণের ইতিহাস থেকে ‘আশ্চর্য’ শব্দটাই তুলে দেওয়া যেতে পারে।

আপাতত ‘দুধ পিঠের গাছ’ মুক্তির অপেক্ষা। সত্যিকারের একটা রূপকথা হাজির হবে দর্শকের সামনে। ২১ অক্টোবর সেই রোমাঞ্চ জানে। জানে, বাংলা সিনেমার ইতিহাসে ‘নতুন কিছু’ হতে চলেছে সেদিন। মধ্যিখানে শুধু ক্যালেন্ডারের দিন পাল্টানো। অন্য কোনো বাধাই বাধা নয় আর...

Powered by Froala Editor

More From Author See More