মৃত্যুর পর কিডনি চুরি যাওয়ার ঘটনা তো মাঝেমধ্যেই শোনা যায়। অনেকে আবার স্বেচ্ছায় দানও করে যান। অন্য মানুষকে প্রাণ দেওয়া ছাড়াও, অনেক সময় গবেষণার কাজেও লেগে যায়। কিন্তু মৃত্যুর পর মস্তিষ্কও চুরি যায়! এমন ঘটনাই ঘটেছে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের ক্ষেত্রে। তাঁর মস্তিষ্কের মতো দামি জিনিসই বা পৃথিবীতে ক'টা আছে? আর এমন চুরির ঘটনাকে নিয়েই বিজ্ঞানের ইতিহাসে আছে নানা রহস্য।
মৃত্যুর আগে অনেকের মতোই আইনস্টাইন চেয়েছিলেন, তাঁর দেহ গবেষণার কাজে লাগুক। এমনটাই জানা যায় মৃত্যুর মাস খানেক আগে জীবনীকার কার্ল সীগিলকে লেখা একটি চিঠি থেকে। তবে শেষপর্যন্ত আইনি ব্যবস্থা করে যেতে পারেননি। ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল মারা গেলেন তিনি। প্রথা মেনে সেই দেহ পাঠানো হল ময়না তদন্তের জন্য।
আর এর পরেই এক দুঃসাহসী কাজ করে বসলেন প্যাথোলজিস্ট টমাস হার্ভে। অটপসি চলাকালীন, নিঃশব্দে মৃতদেহ থেকে মস্তিষ্কটি সরিয়ে রাখলেন। অবশ্য অনুমতি না নিয়ে সেই মস্তিষ্কে হাত দেননি তিনি। পরেরদিন সংবাদপত্রে নিজের চুরির ঘটনা প্রকাশ করে সেই মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণার জন্য অনুমতি চাইলেন। এমন ঘটনার কথা জানতে পেরে আশ্চর্য হলেন সবাই। হতবাক আইনস্টাইনের পরিবারও। তবে খুব শিগগিরিই পাওয়া গেল অনুমতি। আর তারপর সেই মস্তিষ্ককে ২৪০টি সূক্ষ্ম স্তরে কেটে ফেললেন ডা. হার্ভে। মাইক্রোস্কোপের তলায় সেই স্লাইডগুলোকে পরীক্ষা করতে শুরু করলেন।
এরপর কিছুদিনের মধ্যেই অবশ্য বদলি হয়ে গেলেন ডা. হার্ভে। প্রিন্সটন থেকে তাঁকে চলে যেতে হল ফিলাডেলফিয়া। সেখানেও সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন আইনস্টাইনের ব্যবচ্ছিন্ন মস্তিষ্ক। এরপর সারাজীবন যেখানে যেখানে গিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে থেকেছে সেই মস্তিষ্ক। তাঁর গবেষণা নিয়ে হাসিঠাট্টা করেছেন অনেকেই। অনেক গবেষক অবশ্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর নিরলস গবেষণার কাজে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন হার্ভে। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, ওই মস্তিষ্কের মধ্যে আছে কোনো এক রহস্য। ওখানেই যে জন্ম নিয়েছে থিওরি অফ রিলেটিভিটির মতো অসংখ্য বৈপ্লবিক তত্ত্ব।
আরও পড়ুন
ইজরায়েলের রাষ্ট্রপতি হওয়ার অনুরোধ, প্রস্তাব ফেরালেন আইনস্টাইন
১৯৫৫ সালে শুরু হয়েছিল গবেষণা। চলল প্রায় ৩০ বছর। ১৯৮৫ সালে প্রথম গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হল। দেখা গেল, সত্যিই আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের মধ্যে আছে অসংখ্য বিস্ময়। সাধারণ মানুষের তুলনায় সেই মস্তিষ্কের ওজন প্রায় ২০ গ্রাম কম। তাছাড়া নিউরোন এবং গিলা কোষের অনুপাতও স্বাভাবিক নয়। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত দশ বছরে আরও বেশ কতগুলি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। দেখা যায়, তাঁর মস্তিষ্কের গঠনও ঠিক স্বাভাবিক নয়। সাধারণ মানুষের প্যারাইটাল কর্টেক্সের মধ্যে যে গভীর খাঁজ থাকে, আইনস্টাইনের ক্ষেত্রে তা প্রায় নেই বললেই চলে।
পৃথিবীতে এমন মস্তিষ্ক চুরির ঘটনা আর কখনও ঘটেছে বলে জানা নেই। আইনস্টাইনের ঐতিহাসিক সমস্ত আবিষ্কার মানুষকে অবাক করেই। অবাক করে তাঁর চুরি যাওয়া মস্তিষ্কও। পৃথিবীর নানা জায়গায় এই মস্তিষ্কের প্রদর্শনও হয়। এমনকি ২০০৫ সালে এই নিয়ে একটি টিভি শো শুরু হয়েছিল। পৃথিবীর সমস্ত জিনিয়াসের মস্তিষ্কেই কি এমন রহস্য থাকে? কী জানি! ভবিষ্যতের কোনো গবেষণায় হয়তো আরও তথ্য জানা যাবে।
আরও পড়ুন
আইনস্টাইনের নামাঙ্কিত মৌল, এই প্রথম তৈরি হল গবেষণাগারে
Powered by Froala Editor