শেয়ার মার্কেটে ধ্বস, শিকার এলআইসি-সহ একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা

দিন দুয়েক আগের কথা। একটি বিশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করে মার্কিন লগ্নি-গবেষণাকারী সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। আর এই রিপোর্টের মধ্যমণি ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি গৌতম আদানি। হিন্ডেনবার্গের গবেষণা অনুযায়ী, আদানি গোষ্ঠীর বিপুল প্রতিপত্তি ও ব্যবসা কার্যত জালিয়াতির ওপরেই দাঁড়িয়ে। ভুয়ো তথ্য প্রদর্শন করে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে চলেছে আদানি গ্রুপ। বিগত দু’বছর ধরে গবেষণার ভিত্তিতেই প্রকাশ করা হয় এই রিপোর্ট। অবশ্য গৌতম আদানির মতে এই রিপোর্ট সম্পূর্ণভাবে ভিত্তিহীন। তবে তাতে রক্ষা হয়নি। এই রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে আদানির শেয়ার। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই একধাক্কায় ২২.৭ বিলিয়ন ডলার সম্পত্তি হারিয়েছেন ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি।

তবে শুধুই কি আদানি (Adani Group)? আদানির এই আকস্মিক পতনে কেঁপে উঠেছে গোটা দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি। হ্যাঁ, ক্যালেন্ডারের পাতায় আজকের দিনটা যেন ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ হয়ে উঠল ভারতের কাছে। দিন শেষে ৭ লক্ষ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হলেন বিনিয়োগকারীরা। সেনসেক্স নেমে গেল ৬০ হাজার পয়েন্টেরও নিচে। 

সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ছাড়াও, দেশের বৃহত্তম প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও শিকার হল এই আকস্মিক শেয়ার পতনের। যার মধ্যে অন্যতম লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া অর্থাৎ এলআইসি, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ব্যাঙ্ক অফ বরোদা-সহ একাধিক পিএসইউ অর্থাৎ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। প্রতিক্ষেত্রেই সূচকের পতন হয়েছে প্রায় ৫ শতাংশ বা তার বেশি। ১৮ হাজার কোটি টাকার ধাক্কা খেতে হয়েছে শুধু এলআইসি-কেই। প্রাইভেট বিসনেজ জায়েন্টের পতনে এ যেন নেহাতই কোল্যাটারাল ড্যামেজ।

অবশ্য এখানেই শেষ নেই আশঙ্কার। হিন্ডেনবার্গের মতে, আদানি গ্রুপের শেয়ার নামবে আরও তলানিতে। অনুমান, আদানি তাঁর শেয়ার হারাতে পারেন ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। এখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, বর্তমানে আদানি গ্রুপের মোট ঋণের পরিমাণ ২ লাখ কোটি টাকা। যার মধ্যে ভারতের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় ৮১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই এই ব্যবসায়িক সংগঠন কোণঠাসা হয়ে পড়লে ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়াও জটিল হয়ে উঠবে ভারতীয় ব্যাঙ্কদের। আরও বড়ো ধাক্কা খাবে দেশের অর্থনীতি। 

অবশ্য কিছু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আর্থিক বিপর্যয় সামাল দেওয়ার মতো ক্ষমতা রয়েছে ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির। তবে সদ্য এনপিএ-বিপর্যয় থেকে উঠে দাঁড়ানো ব্যাঙ্কিং-ব্যবস্থা আবারও বড়ো একটি আর্থিক বিপর্যয়ের ধাক্কা খেলে, তার প্রভাব সাধারণ মানুষের ওপরেই পড়বে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। সেইসঙ্গে দেশে কমবে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণও। কীভাবে সামাল দেওয়া যাবে সেই পরিস্থিতিকে? জানা নেই উত্তর… 

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More