দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেল। আজও দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে আছে অস্ট্রেলিয়ার কুইনসল্যান্ড অঞ্চলের দাবানলের ঘটনা। ভয়ঙ্কর সেই অগ্নিকাণ্ডের ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল সারা পৃথিবী জুড়ে। আর এবার তেমনই এক দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করার জন্য ‘ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ার পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন রবার্ট আরউইন। গতবছরই প্রতিযোগিতায় মনোনীত হয়েছিল তাঁর তোলা ছবি। আর অবশেষে সারা পৃথিবীর মানুষের প্রতিক্রিয়ার নিরিখে সেটাই সেরা নির্বাচিত হল। পুরস্কার প্রাপ্তির ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই খুশি রবার্ট। শুধু তার মধ্যেই আজও জীবিত বাবা স্টিভ আরউইনের স্মৃতি।
মাত্র একমাস বয়সের রবার্ট আরউইন উঠে এসেছিল খবরের শিরোনামে। সেটা ২০০৪ সাল। স্টিভ আরউইনের বিরুদ্ধে তখন সারা পৃথিবী সোচ্চার। ঘটনা আর কিছুই নয়, একমাসের ছেলেকে কোলে নিয়েই একটি হিংস্র কুমিরের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছিলেন স্টিভ। বিতর্ক থামাতে অবশ্য শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চেয়েছিলেন স্টিভ। কিন্তু তখনই রবার্ট শিখে গিয়েছিলেন, জন্তুদের কতটা কাছ থেকে ভালোবাসা যায়। এর দু-বছরের মধ্যেই বুকে স্টিং-রে মাছের আঘাতে প্রাণ হারালেন স্টিভ আরউইন। অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রাণী-প্রশিক্ষক। বাবার স্মৃতি তাই খুব বেশি মনে নেই রবার্টের। কিন্তু ছোটো থেকেই শিখেছেন, প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হয়।
রবার্টের ঘরজুড়ে তাই বাস করে নানা ধরণের বন্য প্রজাতির জন্তু। দাবানলে বাসস্থান হারানো অনেক প্রাণীকেও আশ্রয় দিয়েছেন রবার্ট আরউইন। মানুষ ক্রমাগত পরিবেশের উপর যে অত্যাচার চালাচ্ছে, তা বন্ধ করতেই হবে, মনে করেন রবার্ট। আর তাই প্রকৃতি ধ্বংসের এক ভয়াবহ ছবিকেই প্রতিযোগিতার জন্য বেছে নিয়েছিলেন তিনি। ড্রোন ক্যামেরার সাহায্যে মাটি থেকে ৩০ মিটার উঁচু থেকে তোলা হয়েছে এই ছবি। তাঁর ছবিই একদিন মানুষকে সচেতন করবে, বিশ্বাস করেন তিনি। আর সেদিন বন্যপ্রাণীকে ভালোবাসা অসংখ্য মানুষের মধ্যেই চিরস্থায়ী হয়ে থেকে যাবে স্টিভ আরউইনের স্মৃতি।
Powered by Froala Editor