কিছুদিন আগেই পার্লামেন্টে পাশ হয়েছে প্রাণীসুরক্ষা আইনের সংশোধনী বিল। প্রাণী নিষ্ঠুরতার জন্য এবার থেকে হতে পারে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা। এই আইনের প্রয়োজন ঠিক কতটা, তাই উঠে এল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান অ্যানিমেল প্রোটেকশন অর্গানাইজেশনের সাম্প্রতিক সমীক্ষায়। প্রতিবেদনে উঠে আসে বিগত দশ বছরে অর্থাৎ ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ভারতে ৪,৯৯,৯০১টি অর্থাৎ প্রায় ৫ লক্ষ প্রাণী হিংসার ঘটনা ঘটেছে। এবং উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে এই নিষ্ঠুরতা।
শুধু গত বছরেই নথিভুক্ত হয়েছে প্রায় আড়াই হাজারের বেশি মামলা। যার মধ্যে রাস্তার প্রাণীদের বিরুদ্ধে অপরাধের ৭২০টি মামলা, পোষ্য প্রাণীর ৫৮৮টি মামলা, খামার ও শ্রম প্রাণীর ৮০৮টি মামলা রয়েছে। হিংসার শিকার থেকে বাদ পড়েনি বন্যপ্রাণীরাও। আড়াইশোর বেশি মামলা করেছেন বনদপ্তরের আধিকারিকরাও। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সর্বাধিক সংখ্যক মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছিল।
প্রাণীদের ওপর মানুষের এই পাশবিক অত্যাচারের তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হল এই প্রথম। আর তাতেই আতঙ্কিত বিশেষজ্ঞরা। হত্যা থেকে শুরু করে মারধর, নৃশংসতা, ধর্ষণ কোনো কিছুই বাদ যায়নি প্রাণী-হিংসার থেকে। কখনো কুকুরের চোখে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে স্ক্রু ড্রাইভার, কখনো বানরকে দড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আবার লুধিয়ানায় ধর্ষণের পর দ্বিতল বাড়ির ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয় একটি কুকুরকে। নৃশংসতার এই তালিকা শেষ হওয়ার নয়।
ডকুমেন্টেশনের দাবি প্রতিদিন গড়ে ৫০টি করে প্রাণী মারা যায় হিংসার শিকার হয়ে। তবে বাস্তবে তার সংখ্যা এর দশগুণ। অর্থাৎ দিনে প্রায় ৫০০টি প্রাণী, বা ঘণ্টায় ২১টি প্রাণী মারা যাচ্ছে সভ্যতার বর্বরতায়। অধিকাংশ সময়ই প্রকাশ্যে আসে না এই ঘটনাগুলি। থানায় দ্বারস্থ হন না সাধারণ মানুষও।
আরও পড়ুন
আন্টার্কটিকার গভীরে, -২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সন্ধান মিলল নতুন প্রাণীর
তবে আরও ভয়াবহ বিষয় হল প্রতি হাজারটি ঘটনার মধ্যে ২০টির পিছনে দায়ী রয়েছে শিশুরা। যা বিশেষভাবে চিন্তা বাড়াচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। এই মানসিকতাই পরবর্তীকালে ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। পশু কল্যাণ মন্ত্রালয়ে এ বিষয়ে শিশুদের জন্য বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচির কথাও জানিয়েছে এফআইএপিও। অন্যদিকে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী প্রস্তুত করা হচ্ছে গ্রেড। তার ওপরে ভিত্তি করেই সংশোধিত হবে আইন। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, এই আইনেই কি মিটবে সমস্যা? এই হিংস্র প্রবৃত্তির শেষ ঠিক কোথায়, তা জানা নেই কারোরই…
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
সামুদ্রিক প্রাণীদেরও ঘাতক হয়ে উঠছে শব্দদূষণ, চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল গবেষণায়