দেশে একের পর এক ঘটে চলেছে লিঙ্গ হিংস্রতার ঘটনা। হাথরাসের চিতাগ্নি ঠান্ডা হয়নি তখনও। বুধবার গভীর রাতেই আরও তিন তিনটি ধর্ষণের খবরের সাক্ষী থাকল গোটা দেশ। আর এই পরিস্থিতিই যেন চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিচ্ছে মানসিকতায় চিড় ধরেছে সমাজের। এই বিকৃতির প্রতিবাদেই এবার রাজ্যব্যাপি প্রতিবাদী কর্মসূচি নিল কলকাতার দুই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রান্তকথা এবং এটিএইচবি (অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্রান্সজেন্ডার হিজরা ইন বেঙ্গল)।
‘নারীমেধের বিরুদ্ধে বাংলা’ শিরনামে সাম্প্রতিক এই লিঙ্গ হিংসার প্রতিবাদে আগামী শনিবার বিকাল সাড়ে পাঁচটায় রাজ্য জুড়েই প্রতিবাদে নামছেন তরুণ তরুণীরা। সঙ্গ দিচ্ছে আরও প্রায় ২০-২৫টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রান্তকথার কর্ণধার বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায় জানান, “এর মধ্যে যুব সংগঠন আছে, পরিবেশ সংগঠন আছে, মহিলাদের ওপর বিভিন্ন কাজ করার সংগঠন আছে, ট্রান্সজেন্ডার সংগঠন আছে, শিশু অধিকার সংগঠন রয়েছে। তো এই সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় দক্ষিণের সুন্দরবন, কুমিরমারী থেকে শিলিগুড়ি অবধি এই আন্দোলনটা আমরা করছি। এবং রাজনীতি, ধর্ম, বর্ণ, মতামত, জাত-নির্বিশেষে এই প্রতিবাদে সামিল হচ্ছি আমরা।”
এই আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমাবেশ হবে কলকাতায়। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সক্রিয় কর্মী রঞ্জিতা সিনহা-র বাড়ির সামনে আয়োজিত হবে সেই সমাবেশ। ৭এ গোখেল রোডে। সেই বাড়ি থেকেও বিভিন্ন সময় উচ্ছেদের চেষ্টা হয়েছিল তাঁকে। তাই কেন্দ্রীয় সমাবেশের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে এই জায়গাটিকেই। এছাড়াও সারা রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেই পৃথক পৃথকভাবে সংগঠিত হবে এই আন্দোলন। বক্তব্য রাখবেন তরুণ, তরুণী, এলজিবিটি সম্প্রদায়ের সকলেই। দেশজুড়ে লিঙ্গ হিংসার শিকার হওয়া সকলের জন্য পালিত হবে নীরবতাও।
তবে শুধু তো মহিলারা নন। পুরুষদের এই মানসিকতার শিকার হচ্ছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও। তাই শুধু নারী নয়, বরং এই প্রতিবাদ সামগ্রিকভাবে জেন্ডার-বেসড ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে। এই নির্যাতন, হিংসা যে কোনোভাবেই আর মেনে নেওয়া হবে না মুখ বুজে, তারই বার্তা পৌঁছে দিতে চাইছে এই আন্দোলনের কণ্ঠস্বর।
বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায় জানান, “এই নির্মমতা বিরুদ্ধে একটা রেজিস্টেন্স গড়ে তোলারই চেষ্টা করছি আমরা। বার্তা তুলে ধরতে চাইছি যে আমরা কোনো রকম আপোস করতে রাজি নই আর। আমাদের এই প্রতিবাদের নাম দিয়েছি ‘নারীমেধ’। অশ্বমেধের মতো। মহিলারা শুধু তো ফিজিকালি রেপ হচ্ছেন, এমন ব্যাপার নয়। কত ট্রান্সজেন্ডার মহিলারা বাড়িতে আত্মহত্যা করছেন। অনেকে শিকার হচ্ছেন বৈবাহিক ধর্ষণের। এই সবধরনের ধর্ষণ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ।”
প্রতিদিনই সংবাদে জায়গা করে নিচ্ছে এমনই একাধিক হিংস্রতার ছবি। আবার কখনো কোনো কোনো ঘটনা থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালেও। কোথাও প্রশাসনিক আইন খাতায়-কলমে থেকে যাচ্ছে নিষ্ক্রিয় হয়েই। কেবল মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে না আমাদের। এমনই একটা অস্থির পরিস্থিতির সামনে মেরুদণ্ড সোজা করে ঘুরে দাঁড়ানোর ভরসাই যেন জোগাচ্ছে এই প্রতিবাদের কর্মসূচি...
আরও পড়ুন
২ সপ্তাহ লড়াইয়ের শেষে মৃত্যু দলিত যুবতীর; কেন ধর্ষণ রুখতে বারবার ব্যর্থ উত্তরপ্রদেশ?
Powered by Froala Editor