আমাদের সৌরমণ্ডলে প্রতিটি গ্রহই প্রদক্ষিণ করে চলেছে সূর্যকে। আর গ্রহগুলির সঙ্গে একইভাবে একইদিকে নিজের অক্ষের চারিদিকে প্রদক্ষিণ করছে সূর্য নিজেও। শুধু সূর্য কেন, এতদিন ধরে নেওয়া হত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত নক্ষত্রের ক্ষেত্রেই ঘটে এই একই ঘটনা। তবে সম্প্রতি এক নতুন নক্ষত্রমণ্ডল খুঁজে পেলেন গবেষকরা। যেখানে নক্ষত্রের আক্ষিক গতির একদম উল্টোদিকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে তার দুটি গ্রহই।
সম্প্রতি প্রসিডিংস অফ ন্যাশনাল একাডেমি সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্র। আরহুস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেলার অ্যাস্ট্রোফিজিক্স সেন্টারের গবেষকরা চিহ্নিত করেন এই বহির্বিশ্বের নক্ষত্রমণ্ডলটিকে। তবে এমন অদ্ভুত গঠনের নক্ষত্রমণ্ডলের চিহ্নিতকরণ এই প্রথম নয়। এর আগেও ২০১২ সালে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল এমন ‘ব্যাকওয়ার্ড স্পিনিং স্টার’। তবে তখন এই রহস্যময় আচরণের কোনো যুক্তিই দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। এবার সেই রহস্যও সমাধান করলেন গবেষক মারিয়া হজোরথ এবং সাইমন অ্যালব্রেক্ট।
গবেষকদের মতে, কোনো নক্ষত্রমণ্ডলে গ্রহদের জন্ম হয় মূলত প্রোটোপ্ল্যানেটরি ডিস্ক থেকে। কিন্তু কী এই জিনিস? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন গ্রহাণু, বড়ো পাথরের টুকরো এবং গ্যাসীয় অণু মহাকর্ষ বলের প্রভাবে ঘুরতে থাকে একটি নির্দিষ্ট অক্ষের চারিদিকে। পরে সেই ক্ষেত্রের অভ্যন্তরে কোনো নক্ষত্র জন্ম নিলে তাকে কেন্দ্র করেই একত্রিত হয় ছোটো ছোটো গ্রহাণু খণ্ডগুলি। জন্ম নেয় গ্রহ।
ঠিক এই জায়গাতেই লুকিয়ে ছিল আরও একটি রহস্য। আরহুস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখান, নক্ষত্রমণ্ডলের মূল নক্ষত্রের খুব কাছে যদি অন্যকোনো বৃহৎ নক্ষত্র থাকে তবে তার প্রভাবে সামান্য কাত হয়ে যায় প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্কটি। শুধু তাই নয়, বৃহদায়তন ওই নক্ষত্রের প্রভাবে মূল নক্ষত্রের উল্টোদিকেও প্রদক্ষিণ করতে পারে এই ডিস্ক।
আরও পড়ুন
সৌরজগতের মতোই নক্ষত্র ও গ্রহসমাবেশ; ২০০ আলোকবর্ষ দূরের সন্ধান দিল পড়ুয়ারা
সদ্য খুঁজে পাওয়া কে২-২৯০ নক্ষত্রমণ্ডলের ক্ষেত্রেও হুবহু মিলে যাচ্ছে গবেষকদের এই তাত্ত্বিক মডেল। এক্ষেত্রেও মূল নক্ষত্রটির অক্ষের সঙ্গে ১২৪ ডিগ্রি কোণে ঝুঁকে রয়েছে গ্রহদুটির কক্ষপথ। যদিও এখনও পর্যন্ত এই নক্ষত্রমণ্ডলের বাইরে অবস্থিত দ্বিতীয় নক্ষত্রটিকে চিহ্নিত করতে পারেননি গবেষকরা।
আরও পড়ুন
তিনটি নক্ষত্রের চারিদিকে ঘোরে একটি গ্রহ, অবাক করা আবিষ্কার নাসার বিজ্ঞানীদের
তবে এই আবিষ্কার এবং তাত্ত্বিক মডেলের সঙ্গে তার হুবহু মিলে যাওয়ার ঘটনাকে যুগান্তকারী বলেই মনে করছেন জ্যোতির্বিদরা। এবার থেকে আর কোনো কোনো নক্ষত্রের মডেল প্রস্তুতির ক্ষেত্রে গ্রহের ঘূর্ণন আগে থেকে নির্ধারণ করতে পারবেন না গবেষকরা।
আরও পড়ুন
দৈত্যাকার ব্ল্যাকহোলের দিকে ছুটে চলেছে পৃথিবী; ধ্বংসের পথে নীল গ্রহ?
এবার একেবারে বিজ্ঞানের এই তত্ত্বের বাইরে নজর দেওয়া যাক একটি মজার ঘটনাতেও। কথায় কথায় আমরা প্রায়শই ব্যবহার করে থাকি একটি বাংলা প্রবাদবাক্য। ‘সূর্য আজ পশ্চিমদিকে উঠেছে’। এই প্রবাদবাক্যকেও একশো শতাংশ সত্য বলেই প্রমাণ করল কে২-২৯০। বাস্তবেই এই নক্ষত্রের গ্রহ দুটিতে ‘সূর্য’ ওঠে পশ্চিমদিকে। বলাই বাহুল্য, এই অদ্ভুত চরিত্র গবেষকদের কৌতূহলী স্পৃহাকে বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ…
Powered by Froala Editor