শারীরিক ক্লান্তির জন্যে দায়ী ভিডিও কলও!

স্কুল-কলেজ হোক কিংবা কর্মসংস্থান— লকডাউন পরবর্তী সময়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে ভিডিও কনফারেন্সের ওপরে। আর ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর এই নিও-নর্মাল সময়ে বিকল্পও বিশেষ কিছু নেই। তবে সেইসঙ্গেই সম্প্রতি অত্যন্ত প্রচলিত হয়ে উঠেছে আরও একটি কথা। ‘জুম ফ্যাটিগ’ বা ‘ভিডিও কল ফ্যাটিগ’। বাংলায় যার অর্থ গিয়ে দাঁড়ায় ‘ভিডিও কল ক্লান্তি’। হ্যাঁ, অতিরিক্ত ভিডিও কলের কারণে দেখা দিচ্ছে এমনই ক্লান্তিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

যদিও এতদিন কথাটি মুখে মুখে প্রচলিত হলেও কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছিল না। সম্প্রতি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আলোকপাত করলেন এই বিষয়টিতে। তুলে আনলেন এর পিছনে লুকিয়ে থাকা আসল কারণ। হ্যাঁ, গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন, এই ঘটনা কোনো মানসিক ভ্রান্তি নয়। ভিডিও কল কার্যত কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে শারীরিক ক্লান্তির। কিন্তু কীভাবে?

মূলত চারটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের সামনে বসে থাকায় যে স্নায়ুতে চাপ পড়ে, তা তো আলাদা করে বলে দেওয়ার অপেক্ষা থাকে না। কিন্তু তার পাশাপাশি শুধুমাত্র একটি স্ক্রিনেই দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকার কারণেও বাড়তি ক্লান্তি। গবেষকরা জানাচ্ছেন, ক্লাসরুম হোক কিংবা সাধারণ কর্মক্ষেত্রের মিটিং –  মানুষের দৃষ্টিক্ষেত্রের পরিধি অনেকটাই বড়ো হয়। আর যার কারণে নড়াচড়ার সুযোগ পায় চোখের মণি। ভিডিও কলে সেই জায়গাটাই বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে স্ক্রিনে শ্রোতার প্রতিকৃতিও স্বাভাবিকের থেকে কয়েকগুণ ছোটো হওয়ায়, দৃষ্টির পরিসর কেন্দ্রীভূত করতে তৈরি হয় কগনিটিভ চাপ। 

শুধু চোখ নয়, একইরকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে দেহের অন্যান্য স্নায়ুগুলিও। একভাবে কোনো জায়গায় দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা মানুষের স্বাভাবিক অভ্যাসের মধ্যে পড়ে না। দেহ অঙ্গের ক্রমাগত গতিবিধিই সচল রাখে আমাদের স্নায়ুগুলিকে। আর ভিডিও কলের ব্যবহারে শিথিল হয়ে পড়ছে দেহের বিভিন্ন অংশের স্নায়ু। পরবর্তীতে হঠাৎ তাদের ব্যবহার ক্লান্তি ডেকে আনছে আমাদের শরীরে। 

আরও পড়ুন
মাত্র দুটি ড্রাগের মিলিত প্রয়োগেই সেরে উঠবে ফুসফুসের ক্যানসার, যুগান্তকারী আবিষ্কার

অন্যদিকে গবেষকদের দাবি, ভিডিও কলে নিজের মুখ দেখতে পাওয়ায় ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলছে মানসিক দিক থেকে। বাড়িয়ে দিচ্ছে আত্মসমালোচনার ক্ষেত্র। যা কখনো কখনো বাড়তি উদ্বেগ, হতাশা সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একটানা নিজের প্রতিবিম্ব দেখল, ঋণাত্মক প্রভাব পড়ে মনেও। আর সেই কারণে মনোবিদরা অনেক সময়ই আয়নার সামনে দীর্ঘক্ষণ না দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অথচ, একই রকম ঘটনা ঘটছে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে।

কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সত্যিই কি ভিডিও কনফারেন্সের বিকল্প রয়েছে? গবেষকদের পরামর্শ, যতটা সম্ভব স্ক্রিনের দূরে থেকে অংশ নিতে হবে এই ধরণের ভার্চুয়াল মিটিং। স্ক্রিন থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে নিজের ভিডিও উইন্ডোকেও। সেইসঙ্গে সুযোগ থাকলে হাঁটা-চলা করতে করতেও এই ধরণের কনফারেন্সের অংশ হতে পারেন, তাতেও সক্রিয় থাকবে দেহের সমস্ত স্নায়ু। আবার ভিডিও মাঝে মাঝে ছোটো বিরতিও রেহাই দিতে পারে এই সমস্যা থেকে। প্রযুক্তিকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে চলার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু যতটা সম্ভব তার সচেতন ব্যবহারই একমাত্র সমাধান এই ‘ভার্চুয়াল ক্যালোরি’-ক্ষয়ের…

আরও পড়ুন
ক্যানসারের চিকিৎসায় উৎসর্গ করেছিলেন জীবন, প্রয়াত ডঃ বিশ্বনাথন শান্তা

Powered by Froala Editor