আজ ভ্যালেন্টাইনস ডে। ফুল, চকোলেট আর কার্ডের দোকানে নতুন-পুরনো যুগলদের ভিড়। সমাজমাধ্যম জুড়েও সেই ছবি। প্রেমের উদযাপন! পাশাপাশি কোথাও কোথাও পূজিতও হন প্রেমের সন্ত সেন্ট ভ্যালেনটাইন। স্মরণ করা হয় তাঁর শাহাদতকেও। গোলাপের তোড়া আর চকলেট সরালে মিলবে তথ্যের এক মস্ত গোলকধাঁধা। এবং সেই গোলকধাঁধার মুখে জ্বলজ্বল করছে প্রকাণ্ড একটা প্রশ্নচিহ্ন।
সন্ত ভ্যালেন্টাইন কি সত্যিই ছিলেন? ইউরোপের নানা অঞ্চলে এখনো পাওয়া যাবে সন্ত ভ্যালেন্টাইনের শরীরের বিভিন্ন অংশ। অনেকটা ভারতের শক্তিপীঠের মতোই। সেগুলো আদৌ শহিদ সন্তের দেহাবশেষ কিনা, তাই নিয়ে বির্তকও রয়েছে। তবে সেসব বিষয়ে ঢোকার আগে ভ্যালেনটাইন সম্পর্কে চলিত ইতিহাসটা ছোট্ট করে ঝালিয়ে নেওয়া যাক।
কথিত আছে তৃতীয় শতাব্দীতে ইতালির তেরনি শহরের ক্যাথলিক পুরোহিত ভ্যালেন্টাইন, ভালোবেসেছিলেন স্থানীয় এক কারারক্ষীর মেয়েকে। বন্ধু হিসাবেই। তখন সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের রাজত্বকাল। ক্রিশ্চানদের উপর চলছে অবাধ অত্যাচার। ধরা পড়লেন ভ্যালেন্টাইন। কেবল অবৈধ বন্ধুত্বের এই অপরাধের মাশুল চুকোতে হল, মাথার বিনিময়ে। ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ ভ্যালেন্টাইন রক্ত ঝরিয়ে সন্ত হলেন। তবে এই ইতিহাস যে ভয়ঙ্কর ঘোলাটে, সেটাই এতকাল বলে আসছেন ইতিহাসবিদ এবং প্রত্নতাত্ত্বিকরা। এতটাই ঘোলাটে যে ১৯৬৯ সালের রোমান ক্যালেন্ডার থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি, দিনটিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ইতিহাসবিদদের অনেকেই বলছেন, সন্ত ভ্যালেন্টাইন আদতে একটি নয়, একাধিক চরিত্রের মিশেল। তাঁরা বলছেন, একই দিনে শহিদ হয়েছেন ভ্যালেন্টাইন নামক অন্তত তিনজন ইতালিয়ান পুরোহিত। তাঁদের মধ্যে একজন মারা গিয়েছেন আফ্রিকায়! আফ্রিকায় থাকা ভ্যালেন্টাইন ব্যতিরেকে বাকি দুজনের অবশ্য শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল। কিন্তু এই মৃত্যদণ্ডের কারণ অবৈধ প্রেম ছিল কিনা, সে সংক্রান্ত তথ্য মেলা দুষ্কর। এমনকি কোনো কোনো জায়গায় ভ্যালেন্টাইনস ডে পালিত হত, ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ডকে উদযাপন করার জন্যই। রোমান্সের লেশমাত্র সেখানে ছিল না। ভ্যালেন্টাইন প্রেমের কাণ্ডারি হিসাবে প্ৰতিষ্ঠা পান তাঁর মৃত্যুর প্রায় হাজার বছর পর। ব্রিটিশ মহাকবি চসারের হাত ধরে…
আরও পড়ুন
কারাগারে বসে লেখা ভালোবাসার কবিতা, বিশ্বের ‘প্রাচীনতম’ ভ্যালেন্টাইনের নিদর্শন এটিই
ইতিহাসের গোলকধাঁধা তো গেল। কিন্তু ভ্যালেন্টাইনের বিভিন্ন ‘দেহাংশ’ নাকি রাখা আছে ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে। যেমন রোমের ব্যাসিলিকা ডি সান্তা মারিয়াতেই (জমায়েতের স্থান) নাকি রয়েছে তাঁর নরকরোটি। তবে সেই নরকরোটির অস্তিত্ব সত্য বলে বিশ্বাস করেন না রোমের অনেক বাসিন্দা। তাঁরা বলেন, এই ‘ভ্যালেন্টাইন’ নাকি সম্পূর্ণ আলাদা ব্যক্তি।
আরও পড়ুন
২২৪ বছর আগে প্রচলন ভ্যালেন্টাইন কার্ডের, প্রাচীনতম নমুনায় লুকিয়ে অভিমানের গল্প
আয়ারল্যান্ডের ডাব্লিনে কিন্তু ছবিটা আলাদা। হোয়াইটফ্রায়ার চার্চে এমনিতে খুব কম মানুষ এলেও ১৪ ফেব্রুয়ারি যুগলরা অনেকেই আসেন। বলা হয়, এই গির্জায় নাকি সংরক্ষিত আছে ভ্যালেন্টাইনের হৃৎপিণ্ড। সেটি নাকি রাখা রয়েছে ভ্যালেন্টাইনের বিরাট মূর্তির নিচে একটি কাঠের বাক্সে।
স্কটল্যান্ডে গ্লাসগোর ডুনস স্ক্রটাস ফ্রায়ারিতে রয়েছে ভ্যালেন্টাইনের কঙ্কাল। সেখানকার পাদ্রির মতে, এই কঙ্কাল নাকি চার্চকে উপহার দিয়েছিলেন একটি ধনী ফরাসি পরিবার। ১৮৭০ সালে। গ্লাসগোতে প্রায়শই ভিড় জমান প্রেমিক প্রেমিকারা। ভ্যালেন্টাইনস ডের দিন গির্জায় বিশেষ বুকিংও চলে।
আবার প্রাগে নাকি রয়েছে তাঁর কাঁধের হাড়। এছাড়াও মাদ্রিদের সান আনটন চার্চেও নাকি পাওয়া যাবে তাঁর দেহাংশ। আশ্চর্যজনক ভাবে ভ্যাটিকানের ক্যাথলিক চার্চ গোটা ব্যাপারটি নিয়ে বরাবর নীরব। তাঁরা হয়তো জানেন, খোঁড়াখুঁড়ি করলেই বেরিয়ে আসবে নানা অদ্ভুত গল্প। তার অধিকাংশই হয়তো মনগড়া। ইতিহাস মিথের মিশ্রণে সৃষ্টি হওয়া সন্তের অবয়ব জুড়ে জুড়ে যায় প্রেমের উদযাপনে। তিনি আছেন, তাই পাশ্চাত্যে প্রেমের উদযাপনের একটি দিনও রয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি যুগলেরা অভিমান ভুলে গিয়ে ডোবেন প্রেমসাগরে। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর।
Powered by Froala Editor