কলকাতার ইতিহাসের সঙ্গেই জুড়ে রয়েছে সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল চার্চ। এই গির্জা সম্পর্কিত অনেক ঘটনার ইতিহাসেরই কোনো লিখিত নথি নেই। আজও কলকাতার মানুষের অন্যতম আকর্ষন হয়েই দাঁড়িয়ে রয়েছে রহস্যময় এই গির্জা। বছর দেড়েক আগে সারা কলকাতাকে চমকে দিয়েছিল ১৭২ বছরের পুরনো এই গির্জা। সংস্করণের সময়ই তার শরীর থেকে বেরিয়ে এসেছিল ইতিহাসের সাক্ষ্য। রেশ পড়েছিল কয়েক যুগ ধরে চলে আসা একটি বিতর্কের। কিন্তু কী সেই রহস্য? কীভাবেই বা উন্মোচিত হয়েছিল সেই রহস্যমঞ্চের পর্দা?
এই গির্জার তৈরি হয়েছিল কলকাতার পঞ্চম বিশপ, বিশপ উইলসনের হাত ধরে। উনিশ শতকের চারের দশক। তখনও অবধি কলকাতায় একটিই মাত্র গির্জা। তা হল সেন্ট জনস চার্চ। কিন্তু রাজভবনের নিকটে অবস্থিত এই গির্জার আয়তন এতটাই কম যে সেখানে বেশি সংখ্যক লোকের প্রার্থনা করা দায় হয়ে ওঠেছিল। পাশাপাশিই পাল্লা দিয়ে সে সময় কলকাতায় বাড়ছিল খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীর সংখ্যাও। ইংল্যান্ড থেকে বহু মানুষ ভারতে আসছেন। আর তাঁদের অধিকাংশেরই প্রথম পছন্দ হল কলকাতা। বিশপ উইলসন ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানিকে রাজি করালেন মধ্যে কলকাতায় এই গির্জা প্রতিষ্ঠার জন্য। ১৮৪৭ সালে গড়ে উঠল সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল।
এই চার্চই ছিল বিশপ উইলসনের সবকিছু। তিলে তিলে নিজের সর্বস্ব দিয়ে সাজাতে চেয়েছিলেন তিনি এই গির্জাকে। নিজের প্রায় ৮ হাজার বইয়ের সংগ্রহ দান করে গড়ে তুলেছিলেন গির্জার লাইব্রেরি। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পরে কোথায় তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল সে বিষয়ে কোনো নথিই মেলে না কোথাও। অনেকেই বলতেন এই গির্জাতেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। তবে তার সত্যতা কতটা, তা জানা ছিল না কারোরই। কারণ এই গির্জায় কোনো সমাধিস্থল নেই।
গত বছরই চলছিল রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় এই গির্জা সংস্করণের কাজ। ১৮৯৭ এবং ১৯৩৪ সালের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ক্যাথিড্রাল। এই শতকে নেপাল এবং সিকিমের ভুমিকম্পেরও প্রভাব পড়েছিল গির্জায়। দেওয়ালের কিছু অংশ খসে যাওয়া থেকে শুরু করে চির ধরেছিল মেঝেতেও। পাল্লা দিয়েই ধরেছিল ড্যাম্প।
আরও পড়ুন
কফিন আছে, কিন্তু মানুষ কই? ভেতরের মমি দেখে তাজ্জব গবেষকরা
সেই সূত্রেই গির্জার মূল বেদির মার্বেলের ওপরের ফাটল পরীক্ষা করতেই ইঞ্জিনিয়াররা সরু ছিদ্র করেন সেখানে। তাতেই অস্বাভাবিকতা চোখে পড়ে তাঁদের। তাঁরা অনুমান করেন আসলে বেদিটি ফাঁপা। পরে ছিদ্রটি বড় করতেই দেখা যায় সেখানেই লুকিয়ে রয়েছে একটি গোপন কক্ষ। যার গভীরতা মাত্র চার ফুট। মার্বেলের আস্তরণ সরাতেই সেখান থেকে বেরিয়ে আসে ৩০ ফুট বাই ১০ ফুটের একটা ভল্ট। কিছু নথির সঙ্গে পাওয়া যায় একটি কফিনে মোড়া দেহ। জানা যায় সেই কফিন বিশপ উইলসনের।
কলকাতার ক্যাথিড্রালের বুকে লুকিয়ে থাকা এত বছরের রহস্যের সমাধান হয়েছিল এভাবেই। ইতিহাস এভাবে ধরা দেওয়ায় রীতিমত সাড়া পড়ে গিয়েছিল কলকাতার বুকে। তৎকালীন বিশপ প্রবাল দত্ত নিজেও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন ঘটনায়। সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল আজও অত্যন্ত জনপ্রিয় কলকাতার কাছে। কিন্তু এখনও অনেক অজানা রহস্য বুকে করে ধরে রেখেছে শতাব্দীপ্রাচীন এই গির্জা। যার সামান্যটুকুই সামনে এসেছে। বাকি রহস্য এখনও পর্দা পড়ার অপেক্ষায়...
আরও পড়ুন
কার্ডবোর্ডের তৈরি হসপিটাল বেড, রোগীর মৃত্যু হলে পরিণত হবে কফিনে
Powered by Froala Editor