ইতিহাসের শহর কলকাতা। এখানকার প্রতিটা কোণায় লুকিয়ে রয়েছে এক একটা প্যান্ডোরার বাক্স। সব কিছুই যে টিকে থাকে, তেমনটা নয়। কলকাতার সেন্ট অ্যান’স চার্চ সেইরকমই একটি হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের টুকরো। যার সঙ্গে শুধু ব্রিটিশরাই জড়িয়ে নেই; জড়িয়ে আছে বাংলার পরাধীনতার গল্পও…
অবশ্য এই প্রতিবেদন পড়ার পর সেন্ট অ্যান’স চার্চের খোঁজে বেরিয়ে পড়লে হতাশই হতে হবে। এর কোনো অস্তিত্বই আজ আর নেই। তবে ইতিহাস তো মুছে যায় না! বলা যেতে পারে, আর্মেনিয়ান গির্জার পর এটিই শহরের পুরনো গির্জা। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তৈরি করা প্রথম প্রেসিডেন্সি চার্চ। আজ যে জায়গায় জিপিও অবস্থিত, সেখানেই এক সময় ছিল ফোর্ট উইলিয়ামের পুরনো কেল্লা। আর তার ভেতরেই ছিল এই সেন্ট অ্যান’স চার্চ। ১৭০৬ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়; শেষ হয় ১৭০৯ সালে। মনে রাখতে হবে, তখনও পলাশীর যুদ্ধ হয়নি। স্বাধীনতার সূর্য তখনও অস্ত যায়নি পুরোপুরি।
সূচনালগ্ন থেকেই কিছু ঠিক ছিল না এই গির্জার। ঠিক ছিল না ফোর্ট উইলিয়ামের পুরনো কেল্লাও। তৈরি করার পরও ঠিকঠাক দেখভাল হত না। ভেতরে ভেতরে কাঠের বিমগুলো ক্ষয়ে যাচ্ছিল, পচে যাচ্ছিল। দুর্ঘটনা ঘটা যেন সময়ের অপেক্ষা! ঘটলও। প্রবল বজ্রাঘাতে ভেঙে পড়ল সেন্ট অ্যানের গির্জার চূড়া।
পরে অবশ্য ইংরেজরা আবারও এই গির্জাটি মজবুত করে তৈরি করার চেষ্টা করেন। সেই সঙ্গে চেষ্টা চলে ফোর্ট উইলিয়ামকেও একটু মজবুত করতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর হয় না। সৌজন্যে, বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার কলকাতা আক্রমণ। আলিবর্দী খাঁয়ের সাধের ‘আলিনগর’-কে কিছুতেই হাতছাড়া করবেন না তিনি। সেই সময়ই অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরনো ফোর্ট উইলিয়াম। আর তার ভেতরের সেন্ট অ্যানের গির্জাটিও তখনই সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। শেষ হয়ে যায় কলকাতায় ইংরেজদের প্রথম চার্চটির ‘সংক্ষিপ্ত’ ইতিহাস।
এইভাবেই ইতিহাস শেষ হয় আরও একটি ইতিহাসের হাতে। মুহূর্তে বদলে যায় সবটা। এর পরের গল্পটা আমরা সবাই ইতিহাসের বইতে পড়েছি। ১৭৫৭ সালের সন্ধিক্ষণের আগে এমন ঘটনার পরেই আবার নতুন করে সব তৈরি করেন ব্রিটিশরা। নতুন করে তৈরি হয় ফোর্ট উইলিয়াম। কিন্তু সেন্ট অ্যান’স চার্চ আর তৈরি হয়নি। ১৭৭৬ সালে, সেখানে তৈরি হল রাইটার্স বিল্ডিং। গির্জাটির ইতিহাস হারিয়ে গিয়েছে শহরের বুকেই…