হারিয়ে-যাওয়া পরিবারের সঙ্গে পালিত সন্তানদের পুনর্মিলন, নেপথ্যে শ্রীলঙ্কার ট্যাক্সিচালক

তালিবান ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রকট হয়েছে আফগানদের সংকট। খাদ্য এবং অর্থের অভাব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সদ্যোজাত সন্তানকেও বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন আফগানরা। তবে শুধু আফগানিস্তানই নয়, এই একই পরিস্থিতির শিকার ভারতের আরেক প্রতিবেশী রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। ’৭০-এর দশক থেকেই শিশুবিক্রির প্রথা চলে আসছে দ্বীপরাষ্ট্রটিতে। বিশেষ করে সন্তানহীন শ্বেতাঙ্গ পশ্চিমা দম্পতিরা অর্থের বিনিময়ে দত্তক নেন শ্রীলঙ্কার সদ্যোজাতদের। তবে এই কাজ আইনত বৈধ না হওয়ায়, কোনোরকম নথি থাকে না কোনোপক্ষের কাছেই। ফলে, পরবর্তীতে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর পালিত সন্তানেরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যোগাযোগ করে উঠতে পারেন না তাঁদের পরিবারের সঙ্গে। 

একাহাতেই এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছেন ৫৬ বছর বয়সি শ্রীলঙ্কান (Sri Lanka) ট্যাক্সিচালক অ্যান্ড্রু সিলভা (Andrew Silva)। শ্রীলঙ্কার নেগোম্বো শহরের ক্যাব-ড্রাইভারের দৌলতে প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ নতুন করে খুঁজে পেয়েছেন তাঁদের বায়োলজিক্যাল বাবা-মাকে। 

মূলত পর্যটকদেরই শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে দেখান অ্যান্ড্রু। ট্যাক্সিচালকের পাশাপাশি গাইডেরও কাজ করেন তিনি। বছর কুড়ি এভাবেই এক বিদেশি পর্যটকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল অ্যান্ড্রুর। জানতে পেরেছিলেন, বিদেশি হলেও তিনি আদতে শ্রীলঙ্কান বংশোদ্ভূত। তবে নিজের জন্ম-পরিচয়ের সম্পর্কে কিছুই জানা ছিল না ওই ব্যক্তির। মানবিকতার খাতিরেই তাঁর বায়োলজিক্যাল বাবা-মায়ের সন্ধান শুরু করেন অ্যান্ড্রু। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগতভাবে। 

ট্যাক্সিচালক হওয়ায় শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ ভালোই পরিচিতি রয়েছে অ্যান্ড্রুর। সেই পরিচিতিকেই কাজে লাগান তিনি। ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংগ্রহ করেন সন্তান বিক্রির নানান তথ্য। সেই তথ্যের নিরিখেই চলে তাঁর অনুসন্ধান। সবসময় যে সাফল্য মেলে, তা নয়। তবে তাঁর চেষ্টায় ফাঁক নেই এতটুকু। এখনও পর্যন্ত ১৭৫ জন মানুষকে তাঁদের হারিয়ে যাওয়া পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন অ্যান্ড্রু। ডায়েরিতে রয়েছে আরও দুই শতাধিক এন্ট্রি। সেগুলি নিয়ে এখনও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। 

অবশ্য এই কাজের জন্য কোনোরকম অর্থমূল্যই গ্রহণ করেন না অ্যান্ড্রু। শুধুমাত্র তদন্তের কাজে যাতায়াতের জন্য গাড়ির তেল খরচটুকুই দিতে হয় মক্কেলদের। অসহায় মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেওয়াটাকে দায়িত্বের মধ্যেই ধরেন তিনি। প্রথাগত সমাজকর্মী না হয়েও, অ্যান্ড্রু যেন হয়ে উঠেছেন বহু পরিচয়হীন মানুষের মসীহা। তাঁর এই উদ্যোগ কুর্নিশ আদায় করে নেয় নিঃশব্দেই…

Powered by Froala Editor