'তুমি তো বড় ছ্যাঁচড়া!' - বিরক্ত হয়ে বঙ্কিমচন্দ্র'কে বললেন রামকৃষ্ণ

উনবিংশ শতকের শেষের দিক। বাংলা সমাজ তখন একের পর এক পরিবর্তনের সাক্ষী। সাহিত্য থেকে ধর্ম, সমাজ— সব ক্ষেত্রেই বঙ্গদেশ পেয়েছিল সাধক পুরুষদের। পেয়েছিল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসকে। একই সময়ের অংশীদার হয়েও তাঁদের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়েছে মাত্র একবার। যেন পৃথক দুই দ্বীপের বাসিন্দা। বাস্তবিকই তাই ছিল। কিন্তু কোথাও কি কোনও সেতুবন্ধন ছিল না?

শ্রীম কথিত ‘রামকৃষ্ণ কথামৃত’ বইতে লেখা আছে ১৮৮৪ সালের ৬ ডিসেম্বরের কথা। যেদিন শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে অন্যান্য ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন বঙ্কিম। তবে এই সাক্ষাতের পেছনে আরও একজনের হাত ছিল। তিনি, শ্রী অধরলাল সেন। তরুণ এই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নিজে রামকৃষ্ণের গুণমুগ্ধ ছিলেন। তাঁরই বেনিয়াটোলার বাড়িতে এসেছিলেন বঙ্কিম। আয়োজন করা হয়েছে কীর্তনের। রামকৃষ্ণের ভাবসমাধি দেখাবার জন্য উদ্গ্রিব হয়েছিলেন অধরলাল। একপ্রকার কৌতূহল বশেই সেখানে গেছিলেন বঙ্কিম।

প্রথমে অবশ্য রসিকতার মেজাজেই ছিলেন দুইজন। অধরবাবু বঙ্কিমচন্দ্রের পরিচয় করে দেওয়ার পর রামকৃষ্ণের স্বভাবসিদ্ধ প্রশ্ন, “বঙ্কিম! তুমি আবার কার ভাবে বাঁকা গো!” প্রত্যুত্তরে কম যাননি বঙ্কিমও— “আর মহাশয়! জুতোর চোটে। সাহেবের জুতোর চোটে বাঁকা”। তারপরেই ধর্ম, আধ্যাত্মিক দর্শনের প্রসঙ্গে চলে যান রামকৃষ্ণ।

কিন্তু ওঁর চিন্তার অন্যদিকে তো অবস্থান করেন বঙ্কিমচন্দ্র। ‘আনন্দমঠ’-এর স্রষ্টা তখন যুক্তিবাদের সঙ্গে হিন্দু দর্শনের মিলন খুঁজছেন। তাঁর কাছে ‘আগে সায়েন্স, পরে ঈশ্বর’। রামকৃষ্ণ জিজ্ঞেস করেছিলেন, “মানুষের কর্তব্য কী?” কিছুটা ব্যঙ্গ করে বঙ্কিমের উত্তর, “আহার, নিদ্রা, মৈথুন”। স্বাভাবিকভাবেই বিরক্ত হন রামকৃষ্ণ। মুখের ওপর বলেন, “তুমি তো বড় ছ্যাঁচড়া!” প্রথম ও একমাত্র সাক্ষাতে এরকমই ছিলেন বঙ্কিম। এমনকি, রামকৃষ্ণের ভাবসমাধি হওয়ার পরেও সেরকম হেলদোল হয়নি তাঁর। তবে একেবারেই কি ছাপ ফেলেনি? বেরনোর আগে তাহলে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কী ভাবছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র? উত্তর মেলেনি।

যেমন উত্তর মেলেনি ‘দেবী চৌধুরানী’-এর কিছু অংশ শুনে রামকৃষ্ণ কী বলেছিলেন। একই সময়ের বাংলার দুই মহীরূহ, অথচ ভিন্ন জগতে বিচরণ তাঁদের। আর অধরলাল? এই সাক্ষাতের অল্প কিছুদিন পরেই তাঁর মৃত্যু হয়, ঘোড়া থেকে পড়ে।

More From Author See More