ক্যারাম বোর্ডের ওপরে ইতস্তত ছড়িয়ে রয়েছে বেশ কিছু গুঁটি। পাশে চেয়ারের ওপরে বসে রয়েছেন এক ব্যক্তি। পা দিয়ে স্ট্রাইকার সেট করে তাতে আলতো টোকা দিলেন বুড়ো আঙুলের সাহায্যে। আর তারপরেই ম্যাজিকের মতো লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলল একাধিক ঘুঁটি। একটা নয়, একের পর এক মনমুগ্ধকরা স্ট্রাইক। একের পর এক লক্ষ্যভেদ। সম্প্রতি, সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে এই অত্যাশ্চর্যকর দৃশ্য।
হর্ষদ গোথানকর। জন্ম থেকেই দুটি হাতই নেই ২৩ বছর বয়সী এই যুবকের। তবে তার জন্য এতটুকু আটকে থাকেনি স্বপ্ন। কেবলমাত্র ইচ্ছাশক্তির জোরেই অসাধ্য সাধন করেছেন হর্ষদ। এ যেন এক অনন্য লড়াই। যা শুধু বিস্মিতই নয়, অনুপ্রাণিত করতে বাধ্য যে কাউকে। সম্প্রতি তাঁর এই লড়াইয়ের কাহিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলে শেয়ার করেন শচিন তেন্ডুলকার। তারপরই আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে হর্ষদের এই কীর্তি।
বিবিসি’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হর্ষদ জানান, তাঁর এই লড়াকু মানসিকতার পিছনে অন্যতম অবদান রয়েছে তাঁর বাবার। বাবা ছিলেন সামান্য অটোরিক্সা চালক। তবে আর্থিক অনটনের মধ্যেও তিনি এতটুকু ফাঁক থাকতে দেননি হর্ষদের স্বপ্নপূরণে। ক্যারাম তো বটেই, পাশাপাশি ক্রিকেট খেলাতেও সমান ভাবে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন তিনি বছরের পর বছর। হর্ষদ যে প্রতিবন্দি— সেই কথাটুকুও যেন বুঝতে দেননি তিনি।
আর পাঁচটা স্বাভাবিক মানুষের মতোই বর্তমানে জীবনযাপন করেন হর্ষদ। ক্যারাম, ক্রিকেট থেকে শুরু করে কম্পিউটারে টাইপিং কিংবা মোবাইলে ইন্টারনেট সার্ফিং সবটাই চলে পায়ের সাহায্যেই। এমনকি হাত ছাড়াই সাঁতারও কাটতে পারেন তিনি। আগামীতেও কারোর সাহায্য ছাড়াই স্বনির্ভর হয়েই বাঁচতে চান হর্ষদ। তবে কিংবদন্তি মাস্টার ব্লাস্টারের কাছ থেকে কুর্নিশ যেন বাড়তি অনুপ্রেরণা দিয়েছে তাঁকে। হর্ষদ জানান, তাঁর বাবাও অন্ধভক্ত ছিলেন শচিনের। বছর খানেক আগেই পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছেন তিনি। আজ বেঁচে থাকলে যে তিনিই সবথেকে বেশি খুশি হতেন, তা-ই ফুটে ওঠে হর্ষদের কথায়। তবে বাবার দেখানো পথকেই পাথেয় করে এগিয়ে চলেছেন হর্ষদ। তাঁর মতো বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের কাছে তাঁর অনুরোধ, ‘আশা ছাড়বেন না’। হর্ষদের মতো একই চিন্তাধারায় যদি আমরা প্রত্যেকেই বিশ্বাসী হতাম, তাহলে হয়তো বদলে যেত গোটা বিশ্বের চরিত্রটাই…
আরও পড়ুন
বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের নিয়েই প্যারালিম্পিকের পরিকল্পনা, আয়োজনে এক চিকিৎসক!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
নিজেরই বিশ্বরেকর্ড ভেঙে টোকিও প্যারালিম্পিকে দেবেন্দ্র ঝাঝারিয়া