শারীরিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের সমান অধিকারের প্রশ্নে নানা বক্তব্যই উঠে আসে। পুরনো মেডক্যাল মডেল ছেড়ে এখন মানবিক অধিকার মডেলকে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারতের আদালত। তবু সমাজের সার্বিক মানসিকতায় খুব একটা পরিবর্তন দেখা যায় না। সরকারও কি এই বিষয়ে তেমন উৎসাহী? এই প্রশ্নকে সামনে রেখেই এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন মাদ্রাজ হাইকোর্টের আইনজীবী এম করপাগম (M. Karpagam)। দেশের সমস্ত বধির নাগরিকদের জন্য সরকারিভাবে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজকে (Sign Language) স্বীকৃতি দেওয়া এবং সেইসঙ্গে সমস্ত সরকারি অনুষ্ঠান ও বিবৃতির ভাষান্তরের জন্য দোভাষী নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এখনও অবধি খুব কম দেশেই সাইন ল্যাঙ্গুয়েজকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ভারতের সরকারি ভাষার তালিকাতেও নেই সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ। অথচ ২০১৬ সালের আরপিডব্লিউডি আইন অনুযায়ী সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে কথা বলা এবং সমস্ত তথ্য এই ভাষায় জানার অধিকার প্রত্যেক বধির নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। এমনটাই জানিয়েছেন করপাগম। তিনি নিজেও বিশেষভাবে সক্ষম একজন নাগরিক। খুব অল্প বয়সেই গ্লুকোমায় দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন তিনি। এরপরেও বহু প্রতিকূলতা জয় করে আজ তিনি মাদ্রাজ হাইকোর্টের আইনজীবী। ২০১৮ সাল থেকে তিনি এই পেশায় রয়েছেন। সাধারণ মামলার পাশাপাশি একাধিক জনস্বার্থ মামলা লড়তেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। তাঁর মামলার ভিত্তিতেই ২০১৯ সালে তামিলনাড়ুর সমস্ত মন্দিরে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের প্রবেশাধিকার দেয় হাইকোর্ট। এছাড়া শিক্ষাক্ষেত্রের সমস্ত স্তরে ব্রেইল পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থও হয়েছেন তিনি।
এই মামলার প্রস্তাবে করপাগম জানিয়েছেন, সঠিক তথ্যের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। অথচ সরকারিভাবে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে বিবৃতি প্রকাশের রীতি না থাকায় বধির মানুষরা সরাসরি কোনো তথ্যই জানতে পারেন না। তাঁদের অন্য কারোর বুঝিয়ে দেওয়া বক্তব্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। এই কারণে অতিমারী পরিস্থিতিতে কোভিড প্রোটোকল এবং লকডাউনের নির্দেশিকা বুঝতে তাঁদের কতটা সমস্যা হয়েছে, সেই কথাও তুলে ধরেছেন করপাগম। পাশাপাশি এ-কথাও উল্লেখ করেছেন, আজও খুব কম জায়গাতেই সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের শিক্ষা দেওয়া হয়। সমস্ত বধির শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের ব্যবহার শুরু করার দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
Powered by Froala Editor