আলপনা-গান-হস্তশিল্প নিয়ে কলকাতার বুকে বিশেষ অনুষ্ঠান, নেপথ্যে ‘কারু’

রাত পোহালেই সরস্বতী পুজো। সাজো সাজো রব গোটা বাংলাজুড়ে। কোথাও সাজানো হচ্ছে মণ্ডপ। কোথাও আবার আঁকা হচ্ছে দেবীর আলপনা। তার ঠিক আগেই আলপনা ও হস্তশিল্পকে কেন্দ্র করে কলকাতার বুকে আয়োজিত হল দু’দিনের কর্মশালা এবং বিশেষ আলোচনাসভা। দু’দিনের এই অনুষ্ঠানের নেপথ্যে শিল্পবিপণী ‘কারু’। অন্যদিকে এই অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি ছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পী এবং প্রাক্তন অধ্যাপক সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায় (Sudhi Ranjan Mukhopadhyay)।

গত ২১ জানুয়ারি, কলকাতার নিউটাউন ডাউনটাউন মলের ‘কারু’ (Karu) শিল্পবিপণীতে আয়োজিত হয়েছিল আলপনার এক বিশেষ কর্মশালা। সেখানেই হাজির হয়েছিলেন সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায়। অংশ নিয়েছিলেন ৩০-এরও বেশি শিল্পী। পাশাপাশি অনলাইনেই এই কর্মশালায় অংশ নেন দেশ-বিদেশের বহু শিক্ষার্থী ও সমমনস্ক ব্যক্তিত্বরা। 

শুধু কর্মশালাই নয়, সুধীরঞ্জনবাবুকে কেন্দ্র করেই লাইভ আলপনা আর্টের বিশেষ অনুষ্ঠানও আয়োজিত হয় ‘কারু’-তে। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলেছিল এই বিশেষ আলপনা-পর্ব। শিল্পীর ভূমিকায় দেখা যায় খোদ বিশ্বভারতী-অধ্যাপককে। সঙ্গ দিয়েছিলেন ‘দক্ষিণী’ সঙ্গীত প্রতিষ্ঠানের একদল তরুণ শিল্পী। “তবে কোনো অ্যাডহক গান নয়। গানের তালিকাটাও উনিই নির্বাচন করে দিয়েছিলেন। যাতে গানের সঙ্গে আঁকাটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। রবীন্দ্রনাথের গান এবং আলপনার সাযুজ্যটা যাতে বজায় থাকে, সেটা মাথায় রেখেই এই গান নির্বাচন”, জানালেন দক্ষিণীর শিক্ষার্থী ও শিল্পী দীপাঞ্জন পাল। 

অবশ্য শুধু ‘কারু’-তেই নয়। এই কর্মশালার ফাঁকে সুধীরঞ্জনবাবু এদিন হাজির হন গোলপার্কের রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচারে। বক্তৃতা রাখেন শান্তিনিকেতনের আলপনাচর্চার উপর। উঠে আসে নন্দলাল বসু, রবি ঠাকুরের ব্রহ্মবিদ্যালয়, যমুনা সেনের প্রসঙ্গ। এখানেও গোটা বক্তৃতার সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে কণ্ঠ দিয়েছেন ‘দক্ষিণী’-র শিল্পীরা। তৈরি হয়েছে আলপনা-কথা ও গানের এক আশ্চর্য যুগলবন্দি। 


অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ, ২২ জানুয়ারি, ‘কারু’-তে আয়োজিত হয়েছিল হস্তশিল্প সংক্রান্ত একটি বিশেষ আলোচনাসভা। অংশ নিয়েছিলেন লেখক ও সাংবাদিক শ্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়, সিনোগ্রাফার স্বরূপ দত্ত, কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটির কিউরেটর রীনা দেওয়ান, ইজেডসিসি-র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা এবং কারিগরি দক্ষতা দপ্তরের চিফ অ্যাডমিস্ট্রেটিভ আধিকারিক সাকুয়া মোনাজা। প্রান্তিক বাংলার হস্তশিল্পকে কীভাবে মূলস্রোতে নিয়ে আসা যায়, কীভাবে করে তোলা যায় আন্তর্জাতিক— সে-কথাই ঘুরে ফিরে উঠে আসে আলোচনার মধ্যে দিয়ে। সবমিলিয়ে সরস্বতী পুজোর আগেই কলকাতাকে এক ব্যতিক্রমী সন্ধ্যা উপহার দিল ‘কারু’। জিইয়ে রাখল বাঙালির নস্টালজিয়াকে…

ছবি ঋণ - কারু

Powered by Froala Editor