এলজিবিটিকিউ মানুষদের জন্য বিশেষ টিকাকরণ কর্মসূচি কলকাতায়

“২০১৪ সালে নালসা জাজমেন্টে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সার্বিক অধিকারের কথা বলা হয়েছিল। তারপর ৭ বছর কেটে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত সমলিঙ্গ বিবাহ নিয়ে মামলা চলছে দিল্লির আদালতে। সমকামী এবং রূপান্তরকামী মানুষদের অধিকারের প্রশ্নটা যে কতটা অবহেলিত  সেটা এখান থেকেই বোঝা যায়।” বলছিলেন ‘প্রান্তকথা’-র কর্ণধার বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ১৬ মে পর্যন্ত সারা দেশে মাত্র ১৯৩৯২ জন তৃতীয় লিঙ্গ বা ভিন্ন যৌনতার মানুষ কোভিড প্রতিষেধক পেয়েছেন। মোট টিকাপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যাটা যেখানে ১৩ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ‘প্রান্তকথা’-র পক্ষ থেকে আয়োজন করা হল একটি বিশেষ টিকাকরণ কর্মসূচির। ৩০ মে, রবিবার টেকনো ইন্ডিয়ার সঙ্গে মিলিত উদ্যোগে শুরু হতে চলেছে এই পথচলা।

কোভিড চিকিৎসার কোনো উপযুক্ত ওষুধ এখনও চিকিৎসকদের হাতে নেই। ফলে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার সবচেয়ে নিরাপদ উপায় প্রতিষেধক। বাপ্পাদিত্য বলছিলেন, “সরকারিভাবে বারবার বলা হচ্ছে পারিবারিক স্তর থেকে টিকাকরণ শুরু করার। অথচ সমকামী মানুষদের পরিবারের বিষয়টিই এখনও স্বীকৃত নয়। তাছাড়া রূপান্তরকামী মানুষদের অনেকেরই হয়তো সরকারি পরিচয়পত্রে যে লিঙ্গপরিচয় রয়েছে তা বদলে গিয়েছে। ফলে টিকা নিতে গিয়ে হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদেরও। আর এইসব কারণেই তথাকথিত ভিন্ন যৌনতার মানুষরা বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছেন।” তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের টিকাকরণ কর্মসূচিতে রূপান্তরকামী মানুষদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার প্রসঙ্গে সাধুবাদ জানিয়েছেন তিনি। যদিও তাঁর মতে, “লিঙ্গবৈচিত্রের একটা অংশমাত্র রূপান্তরকামী। সামগ্রিকভাবে সমস্ত লিঙ্গপরিচয়ের মানুষদের প্রতিষেধক পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতেই হবে।”

বিগত ১৬ বছর ধরে সমাজের নানা স্তরের প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে কাজ করে আসছে ‘প্রান্তকথা’। তার মধ্যে একটা বড়ো অংশ লিঙ্গচিহ্নে প্রান্তিক মানুষদের অধিকারের বিষয়ে কথা বলা। আর এই মহামারী পরিস্থিতিতেও নিজেদের দায়বদ্ধতা অস্বীকার করতে রাজি নন তাঁরা। প্রাথমিকভাবে অফবিট সিসিইউ ক্যাফেতে ৫০ জন মানুষের টিকাকরণ দিয়ে শুরু হবে কর্মসূচি। তবে খুব তাড়াতাড়ি যত বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়, সেই চেষ্টাই করা হবে বলে জানালেন বাপ্পাদিত্য। “আর কয়েকদিন পরেই জুন মাস শুরু হবে। জুন মাসকে সারা পৃথিবীতে ভিন্ন যৌনতার মানুষদের ‘প্রাইড মান্থ’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। আর এই সময় দাঁড়িয়ে আমরা সবাই নিজের প্রকৃত পরিচয় না লুকিয়ে মাথা উঁচু করে ভ্যাকসিন নিতে পারব, এর থেকে গর্বের বিষয় আর কী হতে পারে?” বলছিলেন বাপ্পাদিত্য। এরকম উদ্যোগের ভিতর দিয়েই একদিন প্রকৃত সমান অধিকার ফিরে পাবেন অসংখ্য মানুষ।

Powered by Froala Editor