অবৈধ স্বর্ণখনন আটকাতে অভিযান ব্রাজিলে

একটি কোকাকোলার বোতল কিংবা কেজি তিনেক চালের দাম কত? বাজারের সম্পর্কে যাঁদের কোনো ধারণা নেই তাঁরাও অনায়াসেই বলতে পারবেন, শ’খানেক টাকার মধ্যেই কিনে ফেলা যায় এই সামগ্রী। তবে ব্রাজিলের আমাজনিয়া অঞ্চলে হিসেবটা একটু অন্যরকম। এই সাধারণ পণ্যের ‘দাম’ সেখানে এক গ্রাম সোনার সমতুল্য। যেখানে ভারতীয় বাজারে, এক গ্রাম সোনার দাম প্রায় ৪৯ হাজার টাকা।

চমকে উঠলেন নিশ্চয়ই? ভাবছেন দুর্ভিক্ষ কিংবা জরুরি অবস্থার শিকার হল ব্রাজিল (Brazil)? না, ব্যাপারটা তেমন নয়। এই ঘটনার পিছনে দায়ী ব্রাজিলের মাফিয়ারা। আমাজনের প্রাচীন জনগোষ্ঠীর মানুষদের এভাবেই টোপ দিয়ে ক্রমশ স্বর্ণ উত্তোলন (Illegal Gold Mining) করিয়ে চলেছে তারা। এবার এই অবৈধ খনন আটকাতেই ব্রাজিলে তৈরি হল বিশেষ টাস্ক ফোর্স (Special Task Force)। 

তবে অন্য একটি প্রশ্ন প্রথম থেকেই দানা বাঁধার কথা। স্বয়ং জঙ্গলের ভূমিপুত্র হওয়া সত্ত্বেও, ব্রাজিলের উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষেরা কেন সামিল হচ্ছে স্বর্ণখননে? এক কথায় বলতে গেলে, তাঁদের একপ্রকার বাধ্য করা হচ্ছে স্বর্ণখননে। ‘ব্লাড গোল্ড’-খ্যাত এই অবৈধ স্বর্ণখনন আদতেই একটি ফাঁদ। বিগত কয়েক দশকে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে অবৈধ স্বর্ণখননের হার। সেইসঙ্গে ধ্বংস হয়েছে অরণ্য এবং বাস্ততন্ত্রও। একটা সময় স্থানীয় উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের অন্নসংস্থান করত এই অরণ্যই। ফলে, একপ্রকার নিরুপায় হয়েই মাফিয়াদের প্রস্তাবে খননকার্যে হাত লাগাতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। তবে শ্রম কিংবা সোনার যে যোগ্য মূল্য থেকে সার্বিকভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা, তা আর বলার অপেক্ষা থাকে না। অন্যদিকে এই অবৈধ সোনাই কয়েক হাজার ডলারের বিনিময়ে রপ্তানি হচ্ছে প্রথম বিশ্বের দেশগুলিতে। হিসাবেও বলছে বিশ্বের বাজারে প্রাপ্ত ৮০ শতাংশ অবৈধ সোনার সরবরাহকারী ব্রাজিল। যার মধ্যে ৩০ শতাংশ সোনার ক্রেতা খোদ যুক্তরাজ্য। 

কিন্তু এত বড়ো একটি প্রতারণাচক্র সরকারের নজরে আসতে এত সময় লাগল? না, ব্যাপারটা তেমন নয় একেবারেই। বরং, এই কর্মকাণ্ডের পিছনে সম্পূর্ণ সমর্থন রয়েছে ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট জের বলসোনারোর। তবে টাস্ক ফোর্স গঠন? না, সেটা সরকারি উদ্যোগ নয়। কয়েক বছর আগে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ আদালতে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন পরিবেশকর্মীরা। সেই মামলার নিরিখেই তৈরি হয় বিশেষ টাস্ক ফোর্স। যাঁরা অবৈধ স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের অনুসন্ধান চালাচ্ছেন ব্রাজিলজুড়ে। সেইসঙ্গে আমাজনের গভীর অরণ্যে গিয়ে ধ্বংস করছেন অবৈধ স্বর্ণখনিগুলিকেও। 

আরও পড়ুন
বিষাক্ত জলের বন্যায় ভেসে গিয়েছে গ্রাম, বিপন্ন ব্রাজিলের উপজাতিরা

তবে খুব কিছু সহজ নয় এই কাজ। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খনির শ্রমিকের ভূমিকায় দেখা মিলছে স্থানীয় উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদের। তাঁদের ভিড়ের মধ্যেই থাকছেন অস্ত্রসজ্জিত মাফিয়ারা। ফলে, আসল দোষীদের আটক করা বেশ দুরূহ কাজ। তবুও হার মানতে নারাজ টাস্ক ফোর্স প্রধান ইয়ানোমানি পেরারা। এখনও পর্যন্ত কয়েক শো অবৈধ খনি ধ্বংস করেছে ব্রাজিলের এই বাহিনী। আটক করেছে কয়েক কেজি অবৈধ সোনা, পারদ এবং সীসার মতো দূষক। কিন্তু সার্বিকভাবে জঙ্গলের ভূমিপুত্রদের কাছে বেঁচে থাকার বিকল্প রসদ পৌঁছে দিতে না পারলে কি আদৌ ঠেকানো যাবে এই চক্র? থেকে যাচ্ছে সেই প্রশ্নই…

আরও পড়ুন
উচ্ছিষ্ট হাড়ের স্তূপে খাবার খুঁজছেন মানুষ, মর্মান্তিক দৃশ্য ব্রাজিলে

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
অধিকারের দাবিতে একজোট ব্রাজিলের ৬০০০ আদিবাসী