ভূমধ্যসাগরের তীরে দুই শহর সিওটা এবং মেলিলা। ইন্টারনেটে খুঁজে দেখলে দেখবেন শহরদুটি স্পেনের সীমানার মধ্যে। কিন্তু ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণে স্পেনের সীমানা? ইউরোপ মহাদেশের একটি দেশের দুটি শহর কীভাবে আফ্রিকা মহাদেশে হতে পারে? হ্যাঁ, অবাক লাগার যথেষ্ট কারণ আছে। আর সেইসমস্ত কারণেই সম্প্রতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে উত্তর আফ্রিকার পরিস্থিতি। মরক্কো থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন সিওটা এবং মেলিলা শহরে। শরণার্থী হিসাবে নয়, বরং মরক্কোর নাগরিক হিসাবেই এই দুই শহরে থাকার স্বীকৃতি চাইছেন তাঁরা।
স্পেন সরকারের রিপোর্ট বলছে গত মাসে এক একদিন গড়ে অন্তত ৮ হাজার মানুষ সীমানা পেরিয়ে ঢুকে পড়েছেন এই দুই শহরে। এবং তাতে কোনোরকম বাধা দেয়নি মরক্কো সেনাবাহিনী। ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণে স্পেনের সেনাবাহিনী এমনিতেই দুর্বল। ফলে শুরু হয়েছে দুই দেশের রাজনৈতিক চাপানউতোর। মরক্কো সরকারের পক্ষে থেকেও স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দীর্ঘ টালবাহানার পরেও স্পেন সরকার যখন এই দুই শহর হস্তান্তরের বিষয়ে কোনো কথা বলতেই রাজি নয়, অতএব জোর করে দখল করা ছাড়া উপায় নেই।
দুই দেশের চাপানউতোরের সূত্রে উঠে আসছে ঔপনিবেশিক সময়ের ইতিহাস। পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকের মধ্যে একের পর এক সামরিক অভিযান চালিয়ে উত্তর আফ্রিকার দখল নিয়েছিল স্পেন। ইউরোপের প্রতিটি দেশই তখন উপনিবেশ বিস্তারের লড়াইতে নেমে পড়েছে। দীর্ঘ ৫০০ বছর পরাধীন থাকার পর অবশেষে ১৯৬৩ সালে স্বাধীনতা পায় মরক্কো। কিন্তু সিওটা এবং মেলিলা শহরে যেহেতু স্থানীয় মানুষদের বসবাস তখন ছিল না, তাই এই দুটি শহর স্পেনের নিয়ন্ত্রণে থেকে যায়। বাকি সারা পৃথিবীর মানচিত্রে দুই শহর স্পেনের সীমানার মধ্যে থাকলেও মরক্কোবাসীর কাছে তা এখনও স্পেনের ‘উপনিবেশ’। অন্যদিকে, উইকিপিডিয়ার আরবি সংস্করণে দুই শহরকে মরক্কোর শহর বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। স্বাধীনতার সময় স্থির হয়েছিল ক্রমশ আলোচনার মাধ্যমে এই দুই শহরের বিষয়ে চূড়ান্ত মীমাংসায় পৌঁছানো হবে। এতদিন ধরে শান্তিপূর্ণ মীমাংসার পথেই যেতে চেয়েছে মরক্কো সরকার। কিন্তু স্পেনের পক্ষ থেকে কোনো কথাই কানে তোলা হয়নি। মধ্যযুগীয় ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার ফলশ্রুতি হিসাবে কি আরও একটি যুদ্ধের সূত্রপাত হতে চলেছে? আপাতত তেমনই আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
‘ডাইনোসর’-এর পেটের ভেতর মানুষের মৃতদেহ, মর্মান্তিক দৃশ্য স্পেনে