মহাকাশের হদিশ কলকাতায়, ইসরোর সঙ্গে তাল মেলাল বাংলার পড়ুয়ারাও

২০১৭ সালে বিধান শিশু উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয় সম্পূর্ণ মহাকাশ বিজ্ঞান বিষয়ক একটি প্রদর্শনী। বিসি রায় মেমোরিয়াল কমিটির সঙ্গে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। এ-রাজ্যে সেই প্রথমবার কোনো প্রদর্শনীতে ইসরো সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিল। সম্প্রতি ২২ থেকে ২৪ জানুয়ারি তৃতীয়বারের জন্য অনুষ্ঠিত হল এই প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনীর পাশাপাশি ছিল কুইজ, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা এবং বিতর্ক প্রতিযোগিতা। শহর কলকাতা ও জেলার স্কুলগুলি থেকে ৫০০-র বেশি ছাত্রছাত্রী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে।

মহাকাশ নিয়ে অনেকেরই ছোটোবেলা থেকে অনেক আগ্রহ থাকে। কিন্তু উপযুক্ত গাইডেন্সের অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো নষ্ট হয়। আয়োজক কমিটির সম্পাদক শ্রী গৌতম তালুকদার জানালেন এই প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য। "এ-রাজ্যে মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ তো সেভাবে দেওয়া হয় না। ফলে অনেকেই ঠিকঠাক দিশা খুঁজে পায় না। ছোটো ছোটো ছাত্রছাত্রীদের মহাকাশ বিজ্ঞানে উৎসাহ দিতেই তিন বছর আগে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।"

২০১৯ সাল দেশের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে একটি মাইলস্টোন। প্রায় বিরল সাফল্য অর্জন করতে চলেছিল চন্দ্রযান-২। একটুর জন্য ব্যর্থ হয়েছে। এবারের প্রদর্শনীতে সেই প্রচেষ্টাকেই থিম হিসাবে হাজির করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ভারতবর্ষের মহাকাশ বিজ্ঞানের জনক বিক্রম সারাভাইয়ের জন্মশতবর্ষ ছিল ২০১৯। তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে এবারের প্রদর্শনীর নাম দেওয়া হয়েছে 'বিক্রম সারাভাই স্পেস এগজিবিশন'।

২০১৭ সালে প্রথম বছরেই অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় তিনশো। তারপর ক্রমশ সেই সংখ্যা বেড়েছে, এবং ভবিষ্যতে আরো ব্যাপক অংশের ছাত্রছাত্রীদের এই উদ্যোগে সামিল করতে পারবেন বলে আশাবাদী শ্রী তালুকদার। প্রদর্শনীতে যেমন ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের তৈরি মডেল নিয়েও হাজির হয়, আবার ইসরো তার সাম্প্রতিক গবেষণার বিভিন্ন নমুনা, ক্যামেরা, স্যাটেলাইট ইত্যাদির মডেল পাঠিয়ে থাকে। এই রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরাই সেইসব মডেল প্রদর্শন করে। আর তার জন্য বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে বিশেষ কর্মশালার ব্যবস্থাও করা হয়।

এজেসি বোস কলেজের পদার্থবিদ্যার স্নাতক স্তরের ছাত্র নীহাররঞ্জন ঘোষ জানালেন সেই কর্মশালার অভিজ্ঞতা। এই প্রদর্শনীতে সে PSLV নামক এক বিশেষ ধরনের রকেটের কর্মপ্রণালী প্রদর্শন করছে। নীহাররঞ্জনের কথায়, "এই কর্মশালার আগে জানতামই না যে PSLVতে সলিড ফ্যুয়েলের সঙ্গে লিক্যুইড ফ্যুয়েলও ব্যবহার করা হয়। এমনই খুঁটিনাটি নানা জিনিস জানতে পেরেছি এখন থেকে।" মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে নিজেদের ভাবনা প্রকাশের জায়গা পেয়ে খুশি স্কুল স্তরের ছাত্রছাত্রীরাও।

কথা হল বর্ধমান জেলার বৈদ্যপুর রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠ থেকে আসা মৌসুমী গুঁইয়ের সঙ্গে। কীভাবে মহাকাশে বেআইনিভাবে ঘুরতে থাকা বিস্ফোরক RDX স্যাটেলাইট শনাক্ত করে ধ্বংস করা যায়, তারই একটি সম্ভবনা তুলে ধরেছে সে। তিন বছর আগে অপর একটি প্রদর্শনীতে তার এই মডেলকে অবৈজ্ঞানিক বলা হয়েছিল। তিন বছর পর আবার তার মডেল নিয়ে সে হাজির হয়েছে। এখানে ইসরোর বিজ্ঞানীরা তার কাজ দেখে খুশি। দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই খুশি মৌসুমী।

শ্রী গৌতম তালুকদার জানালেন, প্রায় দুমাস আগে থেকে বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করার পাশাপাশি সংবাদ মাধ্যমেও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেছে। অংশগ্রহণের জন্য নেই কোনো নির্বাচনী প্রক্রিয়া। প্রদর্শনী, ক্যুইজ, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা ও বিতর্কের প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারী ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে দুই বা তিনদিনের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। এই ব্যবস্থা ইসরোর আহমেদাবাদের স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার (SAC)ই করে থাকে। প্রথমবার আহমেদাবাদ ও দ্বিতীয়বার দার্জিলিং-এ বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্রের গবেষণাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কৃতীদের। এবারের গন্তব্য এখনও স্থির হয়নি।

বিসি রায় মেমোরিয়াল কমিটির উদ্যোগে সারাবছর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মূলত স্কুল স্তরের ছোটো ছোটো ছাত্রছাত্রীদের অঙ্কনশিল্প, চিকিৎসা বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞানের মতো নানা বিষয়ে উৎসাহ দিতেই এই সমস্ত উদ্যোগ বলে জানালেন সম্পাদক গৌতম তালুকদার। সেইসমস্ত অনুষ্ঠানেই কলকাতাসহ রাজ্যের নানা প্রান্তের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অংশগ্রহণ থাকে। তবে যেহেতু মহাকাশ বিজ্ঞান বিষয়ে এ-রাজ্যে চর্চার পরিসর বেশ সংকীর্ণ, তাই স্বাভাবিক ভাবেই বিশেষ আলোচনার দাবি রাখে এই উদ্যোগ।

More From Author See More

Latest News See More